- অনলাইন প্রতিবেদক
- ০৬ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৩, আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২৩, ১২:৫৯
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য এবং বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে আবার পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। মিথ্যা, গায়েবি মামলা, গ্রেফতার, ঘরে ঘরে তল্লাশি এবং হয়রানি করে নির্যাতন নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আজ সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার হীন পরিকল্পনায় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও অনেক সিনিয়র নেতাসহ অসংখ্য কর্মীকে গ্রেফতার করেছে এবং কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় এবং সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বন্দি বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাকে সুচিকিৎসা প্রদানে সরকার ও কারাকর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা এবং হার্টের অসুখ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত একজন মানুষ। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সময় অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না। তাছাড়া তাকে সবসময় লাঠির ওপর ভর করে চলতে হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে দীর্ঘ পথ প্রিজনভ্যানে তাকে আনা-নেয়া হচ্ছে। এই প্রিজন ভ্যানগুলোতে বসার কোনো ব্যবস্থা নেই, এমনকি কোনো কিছু ধরে দাঁড়িয়ে থাকারও ব্যবস্থা নেই। যার জন্য অসুস্থ রুহুল কবির রিজভীকে চরম ঝুঁকি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনেই আদালতে আনা-নেয়া করানো হয়।
বিএনপি’র এই নেতা বলেন, যেকোনো বন্দিকে আদালতে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রবিধান এবং জেল কোড বিধি মতে আরামদায়ক পদ্ধতির বিধান থাকা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ এবং দায়িত্বরত পুলিশ আইন অমান্য করে যাচ্ছে যা চরম অমানবিকতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শাসকগোষ্ঠীর ইচ্ছারই প্রতিফলন এটি। মূলত: রিজভী আহমেদ বর্তমান সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বর্তমান অনৈতিক সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে আজ মানবিকতাবোধও হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে একজন সোচ্চার কণ্ঠ বলেই তিনি সরকারের রোষানলের শিকার। তার মতো একজন জাতীয় নেতা কারাগারে ভীষণ অসুস্থ হলেও তাকে সুচিকিৎসা দিতে কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল ও পর্যদুস্ত করতে নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে এখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
মহাসচিব বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের মধ্যরাতের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর বর্তমান সরকারের দুঃশাসন যেন আরো তীব্রমাত্রা লাভ করেছে। সরকার দেশকে বিএনপি শূন্য করতে এখন বেপরোয়া ভূমিকায় মাঠে নেমেছে। কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে চারিদিকে ভীতির বিস্তার ঘটাচ্ছে, যাতে সরকারের বিরুদ্ধে কেউ আওয়াজ করারও সাহস না পায়।
তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচারী সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের হিংস্ররূপ দেশের মানুষকে নির্বাক করে ফেলেছে। অজানা আশঙ্কা, আতঙ্ক আর ভয়ের এক বিষাদময় পরিবেশ মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বর্তমান স্বৈরচারী দেশে বিরোধী দলের অস্তিত্ব ধ্বংস করে নিজেদের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে চায়। তবে জনগণ তাদের এই মনের আশা কোনোদিনই পূরণ হতে দেবে না। অতীতের সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারায় বাংলাদেশের মানুষ যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে দ্বিধা করবে না।’
অবিলম্বে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে সুচিকিৎসা প্রদান এবং তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ দলের সকল কারারুদ্ধ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান মির্জা ফখরুল।