বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের দুটি প্রধান উপায় হলো পণ্য রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমাদের আমদানি খরচ বেশি। ফলে এই উৎস থেকে বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার বাড়ানোর সুযোগ কম। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী আয়ের ওপরই নির্ভর করতে হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, প্রবাসী আয়ের একটা বড় অংশ আসে অবৈধ চ্যানেল বা হুন্ডির মাধ্যমে। এতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হয়।
সম্প্রতি রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, মালদ্বীপ থেকে ৬৬ শতাংশ শ্রমিক হুন্ডিতে টাকা পাঠান। তাঁদের মধ্যে ৬৪ শতাংশের ব্যাংক হিসাবই নেই। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ মালদ্বীপে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক আছেন দুই লাখের মতো। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা আনুমানিক এক কোটি।
এই অবস্থায় প্রবাসী শ্রমিকেরা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠাতে বেশি উৎসাহী হন। সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়েও তাঁদের ব্যাংকমুখী করতে পারেনি। হুন্ডি ব্যবসা প্রসারের আরেকটি কারণ দেশ থেকে ব্যাপক হারে অর্থ পাচার হওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাচারকারীরাই মূলত হুন্ডি ব্যবসায়ীদের অর্থের জোগানদাতা। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে পাচারকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা দেন।
রামরুর কর্মশালায় বক্তারা বলেছেন, সরকার যতই প্রণোদনা দিক না কেন, বাইরের বাজারে তার চেয়ে বেশি দাম পেলে সেখানেই ঝুঁকবেন। বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে হুন্ডি ব্যবসা বন্ধের বিকল্প নেই। ডলারের বিনিময় হার বাজারের হাতে ছেড়ে না দেওয়ায় দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির দোহাই দিয়ে সরকার যে ৯–৬ সুদের হার বেঁধে দিয়েছিল, তা-ও কাজে লাগেনি।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরাও এই চাপের কথা জানেন। তারপরও তাঁরা ‘দেখি, দেখছি’ বলে সময় পার করছেন। আমরা মনে করি, সময়ক্ষেপণের আর সময় নেই। হুন্ডি ব্যবসার লাগাম টেনে ধরতে অর্থ পাচার যেমন বন্ধ করতে হবে, তেমনি বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারও বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা দেওয়া সময়ের দাবি বলে মনে করি।