ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এখন সরকারের ঋণ চাহিদার পুরোটাই উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে বাজার থেকে। এতে করে সরকারের ব্যাংক ঋণের সুদহার দ্রুত বাড়ছে। ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদ উঠেছে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে। দুই সপ্তাহের মধ্যেই এ হার ২ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ১০ দশমিক ৫০ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আইএমএফের শর্ত পালনে বাজারে সুদহার বাড়ানোর এ পথ বেছে নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর প্রভাবে ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে উঠে এসেছে ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাজারে তারল্য বাড়াতে সরকারের ঋণ চাহিদার বেশির ভাগই সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা হয়। সর্বশেষ গত ২ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে সরাসরি ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়। এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ মূল্যস্ফীতি বাড়াচ্ছে– এমন সমালোচনার মুখে আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা থেকে বিরত রয়েছে।
আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সুদহার ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করাসহ বিভিন্ন শর্ত দিয়েছে। শর্ত মেনে গত জুনে ৯ শতাংশ সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদের (স্মার্ট) সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ মার্জিন যোগ করে সুদহার নির্ধারণ করছে ব্যাংকগুলো। এ ব্যবস্থা পুরো বাজারভিত্তিক না হলেও আগের মতো নির্দিষ্ট নয়। আইএমএফ প্রতিনিধি দল ঢাকা সফরে আসার প্রথম দিন গত ৪ অক্টোবর নীতি সুদহার ৭৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসের স্মার্ট ছিল ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মানে চলতি মাসে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৭০ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে পারছে। সিএমএসএমইতে সুদহার আরও ১ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের তিনটি নিলাম হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ অক্টোবরের নিলামে সুদহার ওঠে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত ২ অক্টোবরের নিলামে যা ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। গত মাসে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদহার ছিল সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের এ সময়ে যা সাড়ে ৬ শতাংশের নিচে ছিল। অন্য সব বিল, বন্ডের সুদহারও এভাবে বাড়ছে। গত ১৮ অক্টোবর ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ উঠেছে সর্বোচ্চ ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ। গত মাসে যা ৯ দশমিক ২০ শতাংশ ছিল। এক বছর আগের এ সময়ে ছিল মাত্র ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ট্রেজারি বিলের সুদহার এরই মধ্যে সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এখন আমানতের সুদহারও বাড়াতে হচ্ছে। ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমাও বাড়াতে হবে। তা না হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফায় প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ডলার বিক্রির বিপরীতে টাকা উঠে আসা এবং কয়েকটি ব্যাংকের জালিয়াতি ও বেনামি ঋণের তথ্য ফাঁসের পর আস্থাহীনতার কারণে কিছু আমানত প্রত্যাহার হয়। ওই সময়ে কোনো ব্যাংকে যেন টাকার সংকট তৈরি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। তবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফ ঋণের শর্তের কারণে এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।