সরকারের বিদেশি ঋণের মাত্র ২০.৫% ভারত-চীন-রাশিয়ার

ইসমাইল আলী: বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে বড় ভূমিকা রাখছে ভারত, চীন ও রাশিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন সময় সরব ছিল দেশগুলো। যদিও বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে দেশ তিনটি। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে গৃহীত ঋণের মাত্র সাড়ে ২০ শতাংশ ভারত, চীন ও রাশিয়া থেকে এসেছে। এক্ষেত্রে শীর্ষ তিনটি স্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ১৯৭১-৭২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫২ বছরে বিভিন্ন সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বাংলাদেশ ঋণ পেয়েছে ৭৯ দশমিক ৮২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত অর্থবছর পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৪১৯ বিলিয়ন ডলার। আর গত জুন শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৪০৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের একক ঋণ প্রায় ৩১ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে শীর্ষে থাকা বিশ্বব্যাংক গত জুন পর্যন্ত বাংলাদেশকে দিয়েছে ২৪ দশমিক ৫৮৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবি গত জুন পর্যন্ত সরকারকে ঋণ দিয়েছে ২১ দশমিক ৩৬৬ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপান বাংলাদেশকে এ পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে ১৫ দশমিক ৩০৩ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ।

পদ্মা সেতু নির্মাণে এদের ঋণ দেয়ার কথা ছিল। যদিও দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সরে যায় এ তিন উন্নয়ন সহযোগীই। তবে এখনও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিয়মিত ঋণ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাপান।

ঋণ ছাড়ের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে চীন। দেশটি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৭ দশমিক ৯৮৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে, যা মোট ঋণের ১০ দশমিক ০১ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা রাশিয়া গত জুন পর্যন্ত ঋণ ছাড় করেছে ৬ দশমিক ৭৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের ঋণের আট দশমিক ৪৯ শতাংশ। শীর্ষ পাঁচের পরের অবস্থানে থাকা দেশ ও সংস্থাগুলোর ঋণের পরিমাণ তুলনামূলক কম।

ঋণ দেয়ায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি) গত জুন পর্যন্ত ছাড় করেছে ১ দশমিক ৭৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের দুই দশমিক ২৩ শতাংশ। ঋণ দেয়ায় সপ্তম স্থানে রয়েছে প্রতিবেশী ভারত। গত জুন পর্যন্ত দেশটি ছাড় করেছে ১ দশমিক ৬৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের দুই দশমিক ০৮ শতাংশ। আর অষ্টম স্থানে থাকা ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) গত জুন পর্যন্ত ছাড় করে ১ দশমিক ২০৮ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ছাড়কৃত ঋণের এক দশমিক ৫১ শতাংশ। বাকি দেশগুলোর ঋণ এক বিলিয়ন ডলারের কম।

এদিকে বৈদেশিক ঋণ স্থিতির ক্ষেত্রেও শীর্ষে রয়েছে বিশ্বব্যাংক। গত জুন পর্যন্ত এ সংস্থাটির ঋণ স্থিতির পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ২৫৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এডিবির গত জুন পর্যন্ত ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৪২০ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা জাপানের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৪৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৭২ শতাংশ।

শীর্ষ তিন উৎসের বেশিরভাগ ঋণই সহজ শর্তের। এর মধ্যে জাপান সরকার বাংলাদেশকে সবচেয়ে কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়। পরের অবস্থানে থাকা বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রায় সব ঋণই সহজ শর্তে। তবে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জাপান সুদের হার সামান্য বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির ঋণের সুদহারও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে কিছু কঠিন শর্তের ঋণপ্রস্তাব করেছে সংস্থাটি দুটি। স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের সুদহার আরও কিছুটা বাড়বে বলেই প্রক্ষেপণ করেছে ইআরডি।

গত জুন পর্যন্ত চতুর্থ অবস্থানে থাকা চীনের ঋণ স্থিতি ছিল ৫ দশমিক ৫৭৮ বিলিয়ন ডলার, যা মোট ঋণের আট দশমিক ৯৪ শতাংশ। পরের অবস্থানে থাকা রাশিয়ার গত জুন পর্যন্ত ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৯৮৯ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের ঋণের ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ দুই দেশের ঋণের শর্ত কঠিন এবং সুদহার অনেক বেশি। কঠিন শর্তের এসব ঋণ পরিশোধ নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।

এদিকে নতুন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে এআইআইবি বাংলাদেশকে ঋণ দেয়া বাড়াচ্ছে। গত জুন শেষে সংস্থাটির ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ১ দশমিক ৭৬১ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বিদেশি ঋণের দুই দশমিক ৮২ শতাংশ। সপ্তম স্থানে থাকা ভারতের ঋণ স্থিতি ছিল গত জুন পর্যন্ত ১ দশমিক ৩০৭ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ঋণের দুই দশমিক ০৯ শতাংশ। আর অষ্টম স্থানে থাকা আইডিবির ঋণ স্থিতি গত জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৬৯০ মিলিয়ন ডলার, যা সরকারের মোট ঋণের এক দশমিক ১১ শতাংশ। এ তিনটির মধ্যে এআইআইবি ও ভারত সহজ শর্তে ঋণ দিলেও আইডিবির ঋণের সুদহার বেশি হয় এবং পরিশোধ সময়ও কম পাওয়া যায়।

sharebiz