- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৩ জুলাই ২০২১
সরকারের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতার কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান।
মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
সাউথ এশিয়া ইউথ ফর পিস অ্যান্ড প্রোসপারিটি সোসাইটি (এসএওয়াইপিপিএস) নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক : বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) অথবা কোয়াড (কোয়াড্রাল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ)’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়।
মঈন খান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা আমরা কেন সমাধান করতে পারছি না। যদি আমি সবার সাথে বন্ধুত্বই করি, কারো সাথে শক্রতা নয়, তাহলে কেন সবাই আমাদের শত্রু হয়ে গেলো?’
তিনি বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে বাংলাদেশের এমনই দুর্ভাগ্য যে আমাদের সত্যিকার বন্ধু একটি মাত্র রাষ্ট্র। পৃথিবীর দুই শ’ রাষ্ট্রের মধ্যে একটি রাষ্ট্র আজকে আমাদের সত্যিকার বন্ধু- কথাটি সত্য। তাহলে আমার এই যে পররাষ্ট্র নীতি- সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়, তা এই ৫০ বছরে আমাদের কি ফল দিলো?’
বেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘চীন, ভারত এবং পশ্চিমা শক্তির কারণে এই যে রোহিঙ্গার সমস্যাটি, সেটা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার কথা হচ্ছে, এই রোহিঙ্গা সমস্যা আগেও দুই দুই বার বাংলাদেশে এসেছিল। আমরা তো সেই সমস্যাটির সমাধান করেছি। এবার কেন পারছি না?’
তিনি বলেন, ‘এরকম লাখ লাখ রোহিঙ্গা তো বাংলাদেশে ৭০-এর দশকের শেষ দিকে এসেছিল, এরকম লাখ লাখ রোহিঙ্গা তো ১৯৯১-এর পরে এসেছিল। তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জাতিসঙ্ঘে গিয়ে সেখানে জাপানি ও চাইনিজ রাষ্ট্রদূতদের সাথে আলোচনা করে জাতিসঙ্ঘের তৎকালীন মহাসচিবের মধ্যস্থতায় সেই সমস্যাটির সমাধানে আমিও একজন ক্ষুদ্র অংশীদার ছিলাম এবং সমস্যার সমাধান হয়েছিল। এবার কেন হলো না? ভারতের সাথে বন্ধুত্ব করতে গিয়ে, একুল-ওকুল দুইকুল রাখতে গিয়ে কোনো কুলই রাখতে পারছি না।’
মঈন খান বলেন, ‘আজকের সরকারের যে বক্তব্য গণতন্ত্র পরে উন্নয়ন আগে- সেই নীতিতে তো আমরা একমত হইনি। সেই নীতিতে একমত হলে আমাদের পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে ভিন্ন রাষ্ট্র করার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী- গণতন্ত্র ও উন্নয়ন হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলাচল করবে। সেই কথাটি জোর দিয়ে আমরা এই দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সত্যে পরিণত করতে যদি না পারি তাহলে এদেশের স্বাধীনতা, উন্নয়ন যা কিছুই বলুন সবকিছু অর্থহীন।’
মঈন খান বলেন, ‘আজকে বিশ্বের যে দৃষ্টিভঙ্গি সেই দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে- আমরা বিশ্বকে একটি গ্লোভাল ভিলেজ হিসেবে দেখতে চাই, একটি শান্তির পৃথিবী হিসেবে দেখতে চাই। দ্বন্দ্ব পরিহার করে, হিংসা পরিবার করে, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দূর করে মানুষ যাতে সুন্দর একটি জীবন-যাপন করতে পারি, সেই পৃথিবী দেখতে চাই। সেই উদ্দেশ্যে যেতে হলে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অত্যাবশ্যক। তার পাশাপাশি এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা কথা বলার স্বাধীনতা চাই, আমরা গণতন্ত্রও চাই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কী চাই, দেশের মানুষ কী চায়? গণতন্ত্র তো তাই। আমি গণতন্ত্র বলতে শুধু এটা বুঝি মানুষ যেটা চায় দেশের সরকার ঠিক সেই ভাবে কাজ করবে- এটার নামই গণতন্ত্র এবং সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ যেটা চায় সেটাই গণতন্ত্র। কিন্তু আজকে আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা সীমাবদ্ধ কুক্ষিগত হয়ে একটি দলের কাছে বন্দি, যারা কেবল আমিত্বের বাইরে কিছু চিনে না। এভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।’
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশের মানুষ আত্মদানের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এর দুটি উদ্দেশ্য ছিল- একটি ছিল গণতন্ত্র, অন্যটি এদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। আজকে ৫০ বছর পরে এসে আমি প্রশ্ন করতে চাই- এই দুটির কোনোটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি? পাকিস্তানের ২২ ধনী পরিবারের বিরুদ্ধে আমরা বিদ্রোহ করেছিলাম। আজকে বাংলাদেশে সরকার ২২ শ’ ধনী পরিবার সৃষ্টি করেছে। আর কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি একটি সমীক্ষা হয়েছে, সেখানে আমি দেখেছি, বিশ্বের যে কয়টি দেশে ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে তার মধ্যে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। আমরা কী এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম?’
এসএওয়াইপিপিএসের চেয়ারম্যান ড. সাজিদুল হকের সভাপতিত্বে এই ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সিরাজুল ইসলাম, বিএনপির ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন, সাংবাদিক এবিএম শামসুদ্দোজা বক্তব্য রাখেন।