সরকারি ৬ ব্যাংকে জিএম পদে পদোন্নতিতে অচলাবস্থা

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সরকারি ৬ ব্যাংকে জিএম পদে পদোন্নতিতে অচলাবস্থা – ছবি : সংগৃহীত

পদোন্নতির ‘পুল’ ব্যবস্থা বাতিলের ফলে সরকারি ছয় ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) পদে পদোন্নতিতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এর ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে অনেক যোগ্য লোক থাকা সত্ত্বেও শূন্য জিএম পদে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছেন মাত্র চার মাসের ব্যবধানে পদোন্নতির পুল প্রথা বাতিল করে দিয়ে তাদের এক ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। অনেকের আবার অবসরে যাওয়ার বয়সও হয়ে গেছে। পুল ব্যবস্থার মাধ্যমে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হবে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, পুল ব্যবস্থা ভালো ছিল, কিন্তু শীর্ষপর্যায়ে নির্দেশে কোনোরূপ ঘোষণা ছাড়াই তা বাতিল করে দেয়া হয়। এখন চাইলে তা আবারো চালু করা যেতে পারে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত সরকারি ব্যাংকগুলোর পদোন্নতির বিষয়টি দেখত পুল। এই ব্যবস্থায় পদোন্নতি বোর্ডে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকত। তারা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর অতীত পারফরম্যান্স ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে জিএম পদে পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করত। এই পদ্ধতির একটি বৈশিষ্ট্য ছিলÑ এতে এক ব্যাংকে যোগ্য কর্মকর্তার সঙ্কট দেখা দিলে অন্য ব্যাংক থেকে পদোন্নতি ও পদায়নের মাধ্যমে তা পূরণ করা হতো। পরে এই পদ্ধতি বাতিল করে দিয়ে পদোন্নতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, এর ফলে পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ও অভিজ্ঞতা আমলে না নিয়ে আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেয়া হতো।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী এই চার ব্যাংককে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করা হয়। এর পরই বাতিল করে দেয়া হয় এই পুল প্রথা। শুরু হয় পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম। অভিযোগ রয়েছে জিএম পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকারও ঘুষ লেনদেন হয়েছে।

এসব অভিযোগে গত বছরের (২০১৯) ১৭ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এক নতুন নীতিমালা জারি করে ‘পুল’ ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে এই পুল ব্যবস্থা গঠন করা হয়। পুলের অধীনে পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য বিভিন্ন ব্যাংক থেকে সে সময় শূন্য পদ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের তথ্যও সংগ্রহ করা হয়েছিল। এর ফলে আশায় বুক বেঁধে দিয়েছিলেন সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের যোগ্য কর্মকর্তারা। তারা ভেবেছিলেন এবার বুঝি শুধুমাত্র মেধার মূল্যায়ন করে জিএম পদে তাদের পদোন্নতি দেয়া হবে। কারণ সরকারের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৩৬টি জিএম পদ শূন্য রয়েছে। কিন্তু তাদের সেই আশায় গুড়ে বালি। মাত্র সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে পুল প্রথা বাতিল করে আবার পদোন্নতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়।

এ বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে একটি সরকারি ব্যাংকের এজিএম বলেছেন, প্রভাবশালীদের চাপে এই কাজটি করা হয়েছে। এখন আবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে নানা অনিময় ও আর্থিক লেনদেন শুরু হয়েছে, যা আমাদের হতাশ করছে। তিনি আরো বলেন, অনেক দিন ধরে আমার জিএম পদ পাওয়া ‘ডিউ’ হয়ে আছে। মনে করেছিলাম পুল প্রথার মাধ্যমে আমার দক্ষতা ও যোগ্যতা মূল্যায়ন করা হবে। আমি যদি যোগ্য হই তবে জিএম পদে পদোন্নতি পাবো। কিন্তু তা আর হলো না। কারণ আর্থিক লেনদেন বা তদবির করে এই পদে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। জানা গেছে, সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল-এই ছয় ব্যাংকের পদোন্নতির ক্ষেত্রে পুল প্রথা বাতিল করে দেয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকে এখন এই প্রথা চালু রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, চার মাসে ব্যবধানে পুল প্রথা বাতিল করে দেয়া উচিত হয়নি। এতে করে শুধু চার মাস নষ্ট হয়েছে। ওপর থেকে যা নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আমরা তা পালন করেছি। এখন যদি ওপর থেকে পুল প্রথা চালুর নির্দেশ দেয়া হয় আমরা আবার তা চালু করব।