- সৈয়দ তোশারফ আলী
- ২২ মার্চ ২০২৪, ০৫:২০
নতুন বছরের সূচনায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ধনকুবের বিল গেটস সমকালীন কিছু বিষয়ে কথা বলেছেন যা, ভাবুকদের দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি বলেছেন, ২০২৪ সালে বিশ্বের বড় বড় দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং বিজয়ী জনপ্রতিনিধিরা রাজনীতির চরিত্র ও নির্বাচকমণ্ডলীর ভাগ্য নির্ধারণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এখন আর আগের মতো স্বচ্ছ-সুন্দর নির্বাচন হতে দেখা যাচ্ছে না। জনগণ যতই তাদের আত্ম-অধিকারের প্রশ্নে সচেতন হয়ে উঠছে, ততই ক্ষমতাসীনরা বিরুদ্ধ মত নিরোধ ও নির্বাচনে কারচুপির আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারে কৌশল বদলাচ্ছে। এতে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে সাধারণ মানুষ। যার প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে ভোটকেন্দ্রে ভোটদাতাদের কম উপস্থিতিতে। অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব, সম্পর্ক হচ্ছে তিক্ত থেকে তিক্ততর। যার উদাহরণ হিসেবে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কথা বলা যায়।
বাংলাদেশে সরকার বিরোধী জনমত সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলার মতো বুদ্ধিমান ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক বৈষম্যের সুযোগ নিচ্ছে দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন। দেশ দু’টি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থকে বরাবর প্রাধান্য দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপী ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে বিদ্যমান স্থিতিশীল বাস্তব অবস্থার অনুকূলে থাকাই শ্রেয় বিবেচনা করছে। অন্যদিকে আরব দুনিয়ার প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশে মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠার ওপর বরাবর গুরুত্ব দিচ্ছে। এক সময়ের অন্যতম সুপার পাওয়ার রাশিয়াকে এই অঞ্চলের ব্যাপারে উদাসীন ভাবলে ভুল হবে।
বঙ্গোপসাগর এবং ইন্দোপ্যাসেফিক জলসীমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর স্বার্থ নিরাপদ রাখার জন্য তাদের কূটনীতিতে, ভূ-রাজনৈতিক কৌশলে ভারতকে খুশি রাখার নীতি দীর্ঘদিন যাবৎ অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। ১৯৭১ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বুকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় কোনো সাধারণ ঘটনা ছিল না। সেদিন রুশ-ভারত অক্ষশক্তির সামনে মার্কিন, চীন দাঁড়াতেই সাহস পায়নি। মাত্র পনেরো দিনের যুদ্ধে ঢাকার পতন ঘটে এবং পাকিস্তানি জেনারেল এ এ কে নিয়াজিকে সদলবলে আত্মসমর্পণ করতে হয়। তবে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় পাকিস্তানের পশ্চিমাংশ রক্ষা পায়।
ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীন পাকিস্তানকে মনে করে বেস্ট ফ্রেন্ড। বাস্তবেও পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে চীনের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অংশ হিসেবে সড়ক নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এ কাজ শেষ হলে সড়কপথে চীনা পণ্য পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দর থেকে ইরানের চাবাহার বন্দরে যাবে। তখন চীন পাকিস্তান ইরান অভিন্ন স্বার্থের সুতোয় জড়িয়ে যাবে। এটা নিয়ে ভারত উদ্বিগ্ন, যুক্তরাষ্ট্র দুশ্চিন্তায়।
এদিকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ চীন-ভারত-বাংলাদেশকে নতুন দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বাংলাদেশ আগে থেকেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে বিপদে। বাংলাদেশের সাথে অধিকতর ঘনিষ্ঠ ভারত ও চীন এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কার্যকর কিছু করতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করছে। আর্থিক অনুদানও দিচ্ছে। তবে শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ তার সামাজিক নিরাপত্তাবলয় আরো প্রসারিত ও অর্থবহ করতে পারছে না।
বিশ্বজুড়ে হিংসাবিদ্বেষ ও বিভক্তি পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির চেতনা এবং কল্যাণকামী মনোভাব ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নিচ্ছে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা এবং তা মানুষের সহজাত মানবিক মূল্যবোধ নিরোধ করে চলেছে। উন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে যেসব দেশে দৃঢ় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রয়েছে, সেসব দেশেও অনমনীয়তা ও অসহনশীলতা বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশের সঙ্গে স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ- এসবের জোরালো প্রবক্তা হিসেবে দেখা হয় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রকে। আমরা জানি, ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবহারের সঙ্গে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। কিন্তু সময়ের দাবি, আরো সঠিকভাবে বললে বাস্তবতার দাবি মেনে চলতে গিয়ে, ধনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণায় অনেক বিবর্তন-পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। জনগণকে সর্বোত্তম ক্ষমতার উৎস বিবেচনা করে জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার সর্বাধিক ব্যবস্থা রাখা হয় গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রে। আইনপ্রণেতা হিসেবে জনপ্রতিনিধিদের স্বাধীন ভূমিকা, শাসন বিভাগের আইন মেনে দেশ শাসন এবং এ ব্যাপারে কোথাও ব্যতিক্রম হবে বিচার বিভাগের প্রতিকার চেষ্টার মধ্যে প্রকাশ পায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বকীয় সৌন্দর্য। এ ব্যবস্থায় কারো আইনের ঊর্ধ্বে থাকা অসম্ভব। সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাক, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে দেশের শাসনতন্ত্র।
সরকার গঠন, সরকার পরিবর্তন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয় শাসনতন্ত্রের বিধি-বিধান মেনে। কিন্তু এখন সবকিছু ওলট-পালট, বদলে যাচ্ছে। সহমর্মিতা, বিরোধী মতকে সম্মান করা, হিংসা-বিদ্বেষ এড়িয়ে চলা, প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে না করা, এসব মূল্যবোধ এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি কিংবা বিরোধী মতের অনুসারীদের চরিত্র হরণ করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শিক্ষা ছিল না। গণতন্ত্রের সাথে ফ্যাসিবাদের পার্থক্য এখানে। এডলফ হিটলার তার দেশকে ভালোবেসেছিলেন কিন্তু বিরোধী মতের প্রতি ছিলেন অসহিষ্ণু। সেদিন মিত্রশক্তির বিজয়ে উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে উজ্জ্বল ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছিল, আজ একুশ শতকের সিকি অংশ অতিবাহিত হতে চলেছে কিন্তু গণতন্ত্রের সেই সম্ভাবনা কি কোথাও অমলিন থাকতে দেখা যাচ্ছে?
একাধিক ক্ষেত্রে ভালো করলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চায় বাংলাদেশ কৃতিত্ব দেখাতে পারেনি। অশিক্ষা, অসহিষ্ণুতা এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার অভাবে আমরা গণতান্ত্রিক সমাজ গড়তে পারিনি। গণতন্ত্র নির্মাণ করার জন্য চাই সহনশীল নমনীয় মেজাজ। ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি। দলীয় পরিসরে এসব মূল্যবোধের অনুশীলন। যার অভাব আমাদেরকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। গণতন্ত্রের পথে চলতে গিয়ে আমরা বারে বারে হোঁচট খেয়েছি। আমরা লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক হিসেবে সঠিক পথ নির্দেশ দিতে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা নিজেরাও সুদৃঢ় অবস্থান নিতে পারিনি।
সমাজতন্ত্রী কিংবা সাম্যবাদীরাও গণতন্ত্রের বিরোধিতা করতে গিয়ে অধিকতর গণতন্ত্রের রূপকল্প হাজির করে থাকেন। তারা ভোটের অধিকারের সাথে ভাতের অধিকারের দাবি তোলেন। তারা শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, আর এজন্য অন্তর্বর্তী সময়ে সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল কেউ কেউ এ কৌশলকে সৎ উদ্দেশ্য সাধনের অসৎ উপায় বলেছেন। কারণ, তারা বুঝতে চান না যে, স্বাধীনতার সাময়িক প্রত্যাহরণ তার চিরন্তন প্রতিষ্ঠার উপায়রূপে ব্যর্থ হতে বাধ্য। কোথাও সর্বময় কর্তৃত্ব একবার প্রতিষ্ঠিত হলে তার ভিত আর সহজে টলানো যায় না, তখন কৈফিয়ত দেখিয়ে সুকৌশলে তাকে টিকিয়ে রাখা হয়। চিন্তাবিদ আবু সয়ীদ আইয়ুব মনে করেন ফ্যাসিবাদী একনায়কত্বের উদ্দেশ্যে ও উপায় দুই-ই সমান গর্হিত।
কারণ, সেটা তো কেবল শক্তির সাধনা এবং অধিকাংশ মানুষকে অমানুষ করে তোলার সঙ্কল্প। তুলনায় গণতন্ত্র এদিক থেকে মুক্ত এবং অনেক নমনীয় ব্যবস্থা। গণতন্ত্র মূলত জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। মানবিক ভুল-ভ্রান্তি, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা এর সহজাত বৈশিষ্ট্য। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, যাকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলে সম্মান দেখানো হয়, তিনি বিশ্বাস করতেন, নির্ভুল নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হওয়ার নয়। জনগণের ভেতর থেকে সঠিক প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকলে এবং মোট সামাজিক আয়ের সুষম বণ্টনের ওপর গুরুত্ব দিতে পারলে প্রত্যাশিত সুফল না পাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। তবে এর জন্য দরকার হবে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও অর্থনীতির ওপর সামাজিক নিয়ন্ত্রণ। লক্ষ্য যেহেতু সুন্দর ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়া সেহেতু গণতান্ত্রিক অধিকার তথা বাক, ব্যক্তি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সুবিবেচনা ও দায়িত্বের সাথে কাজে লাগাতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র সবার জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে। সেক্ষেত্রে কিছু লোকের বাড়বার অবাধ সুযোগ নাই বা থাকল। সবাই সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার তো ভোগ করতে পারবে।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রচিন্তার সাথে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। নিজের কিংবা নিজ দলের দৃষ্টিভঙ্গিকে সঠিক এবং অন্যের কিংবা অন্য দলের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভ্রান্ত মনে করে তাকে অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করা হলে, আর যা-ই হোক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে ভিন্নমত সহ্য করতে হবে। এমনকি ভ্রান্ত জেনেও ভিন্ন মতকে প্রচার করার সুযোগ দিতে হবে এবং ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল মনোভাব বজায় রাখতে হবে। এ রকম পরিবেশেই শক্তিশালী হতে থাকবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন এবং পূর্ব-ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্কট প্রকট হয়ে ওঠার কারণ এই অধিকারহীনতার মধ্যেই খুঁজতে হবে। সেই সাথে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, বাজার অর্থনীতিও সঙ্কট এড়িয়ে চলতে পারছে না। সামাজিক বৈষম্য ও বেকারত্ব প্রকট থেকে প্রকটতর হতে দেখা যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি, পণ্যস্ফীতি ও মন্দার দুর্ভাবনা থেকে মুক্তি মিলছে না। করোনা মহামারীর মারাত্মক অভিঘাত শেষ হতে না হতেই রুশ-ইউক্রেন দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে চলেছে তখন আবার আগুনে ঘি ছিটানোর মতো শুরু হয়েছে ইসরাইল ফিলিস্তিন যুদ্ধ। এসব যুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছে অনেক রাষ্ট্র। জয়-পরাজয় অপেক্ষা এসব যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হবে ততই সামরিক অস্ত্র ব্যবসা চাঙ্গা থাকবে এবং ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকটি উন্নত দেশ বিপুল মুনাফা ঘরে তোলার সুযোগ পাবে।
ইউরোপের দেশগুলো সাম্প্রতিককালে আমেরিকার কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র কিনছে। ইউক্রেন পরাজিত হলে ইউরোপের দেশগুলো আগের থেকে বেশি মাত্রায় নিরাপত্তাঝুঁকি অনুভব করবে। তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীন-মার্কিন উত্তেজনা কখনো বাড়ছে কখনো কমছে। এদিকে মিয়ানমারে দীর্ঘদিন গৃহযুদ্ধ চলছে। বাংলাদেশ সংযম দেখাচ্ছে। তবে সতর্ক থাকছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের বিষয়কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। সময় এসেছে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করার। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারক ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের ভেবে দেখতে বলি। দুর্দিনে সামরিক সক্ষমতা একটা জাতির বিরাট উপকারে আসে। নিরাপত্তাঝুঁকির পূর্বাভাস পাওয়ার পর বাংলাদেশ হাত-পা গুটিয়ে কেবল শান্তির জব-তব করতে পারে না। তাকে সময়ের ডাকে সাড়া দিতে হবে। চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার প্রভৃতি জেলায় সেনা অবস্থান বাড়াতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশলগত বিচার-বিবেচনা সাপেক্ষে দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষায় ও প্রতিটি নাগরিকের জান-মাল রক্ষায় সম্পদ ও জনবলের সঠিক ব্যবহারে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করা যাবে না।
ভৌগোলিক অবস্থানের বিচারে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু কোনো কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধুরা তাদের স্ব-স্ব জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা রাখলে আমাদের করণীয় কী হবে, সেটা আগেই ভেবে রাখা ভালো। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুর্বলের কোনো বন্ধু নেই। আজকের দিনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ জনবল দেশকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। এসব ফিল্ডে যারা কাজ করছেন তারা এ বিষয়ে আমাদের থেকে অধিকতর অভিজ্ঞ। আমরা কেবল আমাদের মনোভাবটা জানিয়ে রাখছি।