বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত হয়নি। ওই নির্বাচনে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানো, বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের খবরে পর্যবেক্ষকেরা এ ধারণা পোষণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে হঠাৎ করে একটা প্রতিবেদন বের হয়েছে। গত নির্বাচন নাকি অবাধ হয়নি, সুষ্ঠুও হয়নি। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে নাকি আমরা বাধা দিই। নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব।’
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্ন, ‘পৃথিবীর কোন দেশে গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত? আমরাও পারফেক্ট নই। আমরা সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত নই। কিন্তু যেটাকে আপনারা ত্রুটিমুক্ত বলেন, সেটা যদি হতো, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কেউ কি জিতত? এ সত্যটা স্বীকার করুন।’
গণতন্ত্রের ত্রুটি দেশে দেশে আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যারা অভিযোগ করেছে, তাদের দেশেও আছে। তাদের দেশেও গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্ত নয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আজ পর্যন্ত পরাজয় স্বীকার করেননি। এ কথা কি ভুলে যান? অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার আগে নিজের ঘরের চিত্রটা বলুন। কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা বাধিয়ে পাঁচটি প্রাণ রক্তাক্ত হয়ে ঝরিয়েছেন। সেই ইতিহাস আমরা কিন্তু ভুলিনি।’ তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে স্পিকার নির্বাচন করতেও ১৫ বার ভোট করতে হয়েছে। গণতন্ত্র কোথাও ত্রুটিমুক্ত নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তোলা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি মাসে তিন-চারটি নির্বিচার গুলির ঘটনা ঘটে। কত শিশু, কত মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। এটা কি আপনাদের গণতন্ত্রের ওপর শুটিং (গুলি) বা আঘাত নয়? এটা কি আপনারা বন্ধ করতে পেরেছেন? সমালোচনা করার আগে নিজেদের ভেতরের চিত্রটাও দেখুন। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র কেমন আছে? যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী পদে ভোট চুরি হয়েছে। ভোট চুরির অপবাদ রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী স্বয়ং দিয়েছেন, এখনো দিয়ে যাচ্ছেন। সেগুলো আগে থামান। নিজের দেশের গণতন্ত্রকে আগে পারফেক্ট করুন। আমরা তো বলছি না, আমরা পারফেক্ট। আমরা ক্রমান্বয়ে ত্রুটিমুক্ত করছি। সমালোচনা যারা করে, করুক। তবে অন্যের সমালোচনা করার আগে তারা আগে নিজেদের সমালোচনা করুক, সেটাই হবে যথার্থ’, উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনো শান্তি সমাবেশ, মিটিং, মিছিল থেকে আমরা কি বাধা দিয়েছি? তাহলে এই ভুয়া অভিযোগ কেন আমাদের বিরুদ্ধে?’
বিএনপির আন্দোলন কাদায় আটকে গেছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের বলেন, এই আন্দোলন আর ওঠানো যাবে না। এখন তাদের অবলম্বন ষড়যন্ত্র ও নাশকতা। ওরা নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেটা বোঝা যায় বনানীর ঘটনায়।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান।