- সালাহউদ্দিন বাবর
- ২৩ জুলাই ২০২২
বিশ্বের বিভিন্ন স্বনামখ্যাত গবেষণা সংস্থা, জরিপ প্রতিষ্ঠান, বিখ্যাত বহু বিশ্ববিদ্যালয় হরহামেশা চলমান নানা ইস্যু নিয়ে গবেষণা শেষে প্রতিবেদন, জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করে। এসব প্রতিবেদনের গুরুত্বের কারণে আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিশ্বব্যাপী সেটি ছড়িয়ে দেয়। স্মরণ করা যেতে পারে, এসব গবেষণা ও জরিপ কার্যক্রমে বাংলাদেশেরও তথ্য উপাত্ত সংগৃহীত হয়। সমস্যাজর্জরিত দেশ হওয়ার আমাদের দেশের মিডিয়া বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়া, দেশসম্পৃক্ত চ্যাপ্টারগুলো আগ্রহের সাথে প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সেসব ফাইন্ডিং পাঠ করে দেশের সমাজসচেতন মানুষ, বোদ্ধা সমাজ অনেক সময় গভীর বেদনা বোধ করেন। কারণ, এসব খবরের প্রায় প্রতিটিই বাংলাদেশ সম্পর্কে যৌক্তিক কারণেই নেতিবাচক বিষয় তথা আমাদের পিছিয়ে পড়ার তথ্যাদি সন্নিবেশিত থাকে।
সম্প্রতি এমনই এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সে খবরের শিরোনাম ছিল, ‘বৈশ্বিক আবেগ প্রতিবেদন, বিষণ্ণতায় সপ্তম স্থানে বাংলাদেশ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক এক জরিপের ফল বলছে, ২০২০ সালের চেয়ে ২০২১ সালে অনেক বেশি নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মানুষ। জরিপ অনুযায়ী ক্ষোভ, মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতার দিক বিবেচনায় বিশ্বে খারাপ অবস্থানে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিক থেকে সপ্তমে। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে লেবানন, ইরাক, সিয়েরা লিওন, জর্দানসহ বিভিন্ন দেশ।
মার্কিন বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক অবেগ প্রতিবেদন, ২০২২ শিরোনামের সেই সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে আসে। সমীক্ষায় বিশ্বের ১২২টি দেশের অধিবাসীদের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় অভিজ্ঞতার মাত্রা যাচাই করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৪২ শতাংশ মানুষ উল্লেখ করেছে, তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বা মানসিক চাপের মধ্যে আছেন। ২৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তারা বিষণ্ণতায় ভুগছেন। বিশ্বজুড়ে এক লাখ ২৭ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ এই জরিপে অংশগ্রহণ করে। তাদের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা জানতে শারীরিক কষ্ট, মানসিক চাপ, ক্ষোভ, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়। দেখা গেছে, নেতিবাচক অভিজ্ঞতার শীর্ষে আফগানিস্তান আর সপ্তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
বিষণ্ণতা হচ্ছে এমন একটা মানসিক অবস্থা যে পর্যায়ে একজন মানুষের কোনো কিছুর প্রতি আর আগ্রহ থাকে না এবং নিজেকে অসহায় বলে মনে করে। তেমনি হতাশাগ্রস্ত মানুষ কিছু পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে গিয়ে যখন পায় না বা পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে অর্জন করতে পারে না, তখন মানুষের যে মানসিক অবস্থা তৈরি হয়, সেটাই বস্তুত হতাশা। হতাশাগ্রস্ত মানুষের ক্রোধ, ঈর্ষা, লোভ থাকতেও পারে। আসলে সাধারণভাবেও আমাদের নিজেদের সমাজের অবস্থা যদি দেখি তবে কোনো জরিপ গবেষণার খুব বেশি প্রয়োজন কি আছে? মানুষ খোলা চোখেই দেখছে, উপলব্ধি করছে নিয়ত তাদের কী দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ একেক সময় এক একটা মুলা মানুষের নাকের ডগায় ঝুলিয়ে দিয়ে গাধার মতো ঘুরাচ্ছে। কিন্তু গন্তব্য কারো জানা নেই।
মানুষ এখন খেয়ে না খেয়ে, পরিধানে কোনো বস্ত্র দিতে পারুক না পারুক সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে। এই আশায়, লেখাপড়া শেষে সন্তানরা চাকরিবাকরি করে সংসারের সুদিন ফেরাবে। কিন্তু সব সময় সে আশার গুড়ে বালি পড়ে। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অগণিত, এর কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে এমন আশায় থাকা লাখ লাখ পরিবারের কী অপরিসীম বেদনা, যেন বুকের পাঁজর ভেঙে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিছুকাল আগে জনগণকে আশা দেয়া হয়েছিল দেশ অতিসত্বর মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। মধ্য আয়ের দেশের অর্থ কী, এর সহজ অর্থ দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার একটা ব্যাপক ঊর্ধ্বগামিতা, জনগণের স্বস্তি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষার ব্যবস্থা, অসুখ বিসুখে সেবা শুশ্রূষার পথ সুগম হওয়া, বেকারত্ব ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া, শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্কট দূর হওয়া ও এর বিকাশ লাভ, আমদানিনির্ভরতা কমে গিয়ে রফতানি আয় বৃদ্ধি পাওয়া। বস্তুতপক্ষে এক আমূল পরিবর্তন। কিন্তু সেই আকস্মিক পরিবর্তন কি হয়েছে, বরং উল্টো মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন মধ্যবিত্তে, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের প্রচুর অধোগতি ঘটেছে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের মানুষের হতাশা ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া আর কী হতে পারে, যা পূর্বে উল্লেখ করা জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে।
এমন অবস্থায় দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের যা করণীয় সেটা কি তারা করছেন। দৃশ্যমান অবস্থার প্রেক্ষিতে যে পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল, সেটা কোথায়! প্রকৃতপক্ষে এখন যেসব ঘোষণা এসেছে যেমন পেট্রল, ডিজেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা, এসব কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সব শ্রেণীর মানুষকে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেবে। কথায় আছে, পেটে খেলে পিঠে সয়, মানুষের এখন ক্রয়ক্ষমতা ক্রম অবনতিশীল, তাতে দানাপানি জোগাড় করাই কষ্টকর, তার ওপর নতুন সব ঘোষণার যে মারাত্মক চাপ তৈরি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের মেরুদণ্ড সোজা করাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। অথচ এজন্য পরিস্থিতি বোঝা এবং কোন কারণে এসব ঘটছে, যা কিনা দুর্বিষহ। অপর দিকে শনৈঃশনৈঃ উন্নয়নের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে চলছে ডঙ্কা।
এতো গেল কর্তৃপক্ষীয় যত কঠিন দাঁতভাঙা যত গদ্য কাব্য। কিন্তু প্রতিপক্ষের বিরাট শক্তি তাদের কী হাল? তারা ক্ষমতায় নেই, আর তাদের কী করার আছে! এতটুকু বলেই কি রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই? সরকারের ভুল-ত্রুটি নিয়ে কথা বলা, সব অনিয়ম নিয়ে বক্তব্য দেয়া যৌক্তিক বটে, কিন্তু এতেই কি সর্বস্তরে স্বস্তিবোধ সৃষ্টি হবে, তাদের দায়দায়িত্ব এখানেই শেষ! সবাই তা মনে করে না, বরং এটা কেবল ‘লিপ সার্ভিস’, দায়িত্ব এড়ানোর একটা কৌশল হিসেবেই গণ্য হবে।
মনে রাখতে হবে, দিন পাল্টেছে, সমস্যার স্বরূপ গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে, সে দিকটি বিবেচনায় নিয়ে প্রতিপক্ষ শক্তিকে আরো সক্রিয় সতর্ক এবং সক্ষম হতে হবে। জনগণকে বুঝতে হবে আপনারা সত্যিকার যোগ্য সক্ষম ও উত্তম বিকল্প কি না। এটা বোঝানোর জন্য দেশে শুধু বক্তৃতা, প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করাই যথেষ্ট নয়, নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে কর্তৃপক্ষীয় কার্যক্রমের আপনারা যে ‘সুপিরিয়র’, সেটা প্রমাণ করুন। আপনাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সেমিনার সিম্পোজিয়াম করুন, সংবাদপত্রের স্পেসের কারণে যতটুকু পারে তারা প্রকাশ করুক, বাকিটুকু আপনার পুস্তিকা আকারে হাজার হাজার কপি ছাপিয়ে তা সাধারণ মানুষ, সমাজের অগ্রসর মানুষ বোদ্ধা ও সমাজের চিন্তাশীল শ্রেণীর মানুষের কাছে পৌঁছান। আর প্রতিপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, একত্রে বসে আপনাদের বিবেচনায় যা করণীয় করুন।
দেশে ‘সংসদীয় গণতন্ত্র’ চলছে, সেটা কেবল নামে। শুদ্ধ সংসদীয় গণতন্ত্রের অনেক ‘বিউটি’র মধ্যে জবাবদিহিতা অন্যতম। সরকারের সকল রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখানেই আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু এখন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সে বিষয় নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা পর্যালোচনা হয় না। আর সেটা হবে কিভাবে? সংসদে কথিত বিরোধী দলকেও সংসদকে এখন পাশ কাটানো এবং অবজ্ঞা করা নিয়ে কোনো কথাই বলতে দেয়া হয় না। সরকারকে কঠিন জবাবদিহি করার বহু পথ পদ্ধতি সংবিধানের আলোকে রচিত সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে রয়েছে। কিন্তু কোথায় সেই বিধানের আলোকে আলোচনা? তাই তো আজকের আমাদের সংসদ জীবন্ত বা প্রাণবন্ত নয়। সেই কারণে মাঝে মধ্যে প্রশ্ন জাগে, দেশে এখন কোন পদ্ধতির সরকার কায়েম রয়েছে। বৈচিত্র্যহীন, বৈশিষ্ট্যহীন স্থবির অবস্থা চলছে। বলতে গেলে সব কিছু যেন নিছক কথামালায় পর্যবসিত হয়েছে। যতটুকু সার বা মোদ্দা কথা সেটুকু কেবল বলুন। সবাই এক সুর এক লয়ে একই গদ্য উচ্চারণ করুন; দশজনে দশ ধরনের কথা বলবেন না, মানুষ বিভ্রান্ত হবে। আপনারা বহুদলের সম্মিলন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন মত থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পার্থক্যগুলো এ মুহূর্তে স্মরণ না করে সবাই মিলে নেপথ্য থেকে নিষ্পত্তি করে নেবেন। আর যিনি সমাজের বিভিন্ন সঙ্কট নিয়ে কথা বলবেন, তারও পররাষ্ট্রনীতি, স্বরাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন কোন নেতা কোন বিষয়ে কথা বলবেন, এ জন্য সংশ্লিষ্ট নেতা রীতিমতো হোমটাস্ক করবেন।
এক ব্যক্তির সব কথা বলার বিপদ দুটো। কুমির যেমন শেয়ালের এক বাচ্চাকে বারবার দেখিয়ে ধূর্ত শেয়ালকে তুষ্ট করেছে, সেটা কিন্তু এখানে সম্ভব না। একজনকে বারবার কথা বলতে শুনলে মানুষ বিরক্ত হবে, মনে করবে, এদের আর প্রাজ্ঞ বিকল্প লোক নেই তাহলে দেশ চালাবে কী করে? আর দ্বিতীয়ত একজনে সব বিষয়ে কথা বললে ‘ফাউল’ করে বসবেই, একজন সবজান্তা হতে পারে না। এমন ফাউল করতে থাকলে তাতে মানুষের আস্থা নষ্ট হবেই। স্মরণ করা যেতে পারে, বিলেতে বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রিসভা রয়েছে, বিরোধী দলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে মোকাবেলা করে থাকেন। আমাদের সংসদীয় ব্যবস্থায় এই রেওয়াজ গড়ে ওঠেনি। সংসদের বাইরেই এখন প্রধান বিরোধী দল বা তাদের জোট, সংসদের বাইরে থেকে সে আদলে অনুশীলন করুন। এভাবে অনুশীলনের মধ্য দিয়েই যোগ্য সক্ষম আস্থাভাজন বিকল্প নেতৃত্বের অভাব ঘুচবে। আজকে বিকল্প নেতৃত্ব দেখতে না পেয়ে মানুষের হতাশা বেদনা সৃষ্টি হয়ে আছে। আমাদের দেশের মানুষ হতাশা বিষণ্ণতায় ভুগছে বলে উল্লেখিত জরিপে উঠে এসেছে, এটাও হয়তো একটা কারণ। কেননা মানুষ অবস্থার পরিবর্তন আশা করে। কিন্তু সেটা দেখতে পাচ্ছে না।
এতো গেল রাজনৈতিক অঙ্গনের পক্ষ বিপক্ষের যত সমাচার। দেশের এমন সব গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেমন নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা, একমুখী চিন্তার কারণে তাদের ওপর থেকে মানুষের আস্থা বিশ্বাসে চিড় ধরছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই সেই চিড় মারাত্মক ফাটলের সৃষ্টি করবে। কুমিল্লায় মাত্র একটি পদের নির্বাচন করাতে গিয়ে শতভাগ না হোক নিজেদের ভাবমর্যাদা সত্তর ভাগ তারা খুইয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো বৃহৎ ‘ক্যানভাসে যখন নির্বাচন হবে, তখন দেখা যাবে তারা শতভাগের বেশি খুইয়ে বসে আছেন। কুমিল্লায় ইভিএম নিয়ে সমস্যায় পড়ার পর, এখনো ইভিএম নিয়ে ইসির একমুখিতা নিয়ে বিভোর হয়ে আছেন। কুমিল্লায় সাক্কু ভোট পুনঃগণনার দাবি করেছেন। এমন দাবি করা তার ন্যায্য অধিকার, কিন্তু ইভিএম এ পুনঃগণনার ব্যবস্থা তো নেই।
এখন ইসি কী করবেন! ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং তার নির্বাচনী জোটের শরিকগণ ব্যতীত আর সব বিরোধী দল এর বিরোধিতা করলেও তাদের মতামতের ব্যাপারে কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বর্তমান ইসির কাছে জনগণের এটাই চাওয়া ছিল, তারা গণতন্ত্র তথা জনগণের ভোটাধিকার ‘রেস্টোর’ করবেন, অথচ তাদের ভ‚মিকা গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাহলে রকিব ও হুদা কমিশনের সাথে আউয়াল কমিশনের পার্থক্যের রেখাটা কোথায়? আগের দুই কমিশনের বিরুদ্ধে কথা ছিল যারা তাদের দায়িত্বে অভিষিক্ত করছে, উল্লেখিত দুই কমিশন তাদের ‘বেটার সার্ভিস’ দিয়ে গেছে।
এখন নতুন ইসি তাদের দায়িত্ব গ্রহণের অতি প্রত্যুষেই বিগত দুই কমিশনের ফেলে যাওয়া জীর্ণশীর্ণ পাদুকায় পা গলিয়ে পুরনো পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন। এমন পথে চললে তাদের পক্ষে জনগণের ভোটাধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দেয়ার কথা ভাবা নিছক বাতুলতা মাত্র। দেশে গণতন্ত্র যে তিমিরে গিয়ে পৌঁছছে তাকে আর কোনোভাবে এই ইসির দ্বারা তুলে আনা সম্ভব হবে না হয়তো। কমিশন ভবনের সামনে লক্ষ মানুষ হতাশা ও ক্ষোভে বুক চাপড়ে রোদন কবলেও তার কোনো প্রতিকার আশা করা যায় না।
ইদানীং একটা শোক দুর্ভাগ্যের খবরে মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত এবং বিষণ্ণতায় নিমজ্জিত হতে চলেছে, এতদিন এবং এখনো নিয়ত শোনা যায় বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অকাতরে খুন হচ্ছে। এটা এই জামানর যেন একটা বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে, কেননা তাদের নিরাপত্তার বিধান করবে কে। আর এখন তো ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের লোকজনের অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের যখন নিরাপত্তার ঘাটতি কিভাবে হলো এবং এমন দুঃসাহসী ঘটনার ঘটার কারণটা কী। কোন সে দুর্বৃত্ত এসব ঘটাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এখন ভীতসন্ত্রস্ত এবং গভীর হতাশার মধ্যে রয়েছে এবং ভাবছে আমরা সাধারণ গোবেচারা আমাদের সুরক্ষা দেবে কে! আমাদের ভিটেমাটি ক্ষেতখামার যদি দুর্বৃত্তরা দখল করে নেয় তাহলেও কিছুই বলা যাবে না, কিছু বললেই বেঘোরে প্রাণ দিতে হবে। আজকে সমাজজীবনে এমন ভীতি ও হতাশা দূর হবে কিভাবে যারা মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে তাদের দোষ দিয়ে লাভ কী প্রতিজনের নিরাপত্তা তারা কিভাবে দেবে।
এর প্রতিকার তাহলে কোথায়, এবং কিভাবে হবে। এখন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনকে বাধা বিপত্তিহীনভাবে কাজ করতে দেয়া। অনুরাগ, অনুরোধ কোনোক্রমেই রক্ষা করা যাবে না, বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে না। ভয়ভীতি হস্তক্ষেপ যেখান থেকে আসুক সে হাতকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে হবে। তবেই হতাশা ক্ষোভ কাটবে মানুষ ভাবতে পারবে আইন ও শাসন তাদের পাশেই আছে।