- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ জুন ২০২৩, ১৯:৪৯
সবার অজান্তেই বাংলাদেশ এখন শ্রীলঙ্কা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি।
তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, দেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে। তখন শ্রীলঙ্কা তেল ও কয়লা কিনতে পারেনি, বিদ্যুতকেন্দ্র চালাতে পারেনি। আমদানি করতে পারেনি, কলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তাদের জিনিসপত্রের দাম হু-হু করে বেড়েছিল। ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জিএম কাদের এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়া বলেছিলাম। তখন সারাবিশ্বের মতোই আমরা শ্রীলঙ্কা নিয়ে চিন্তিত হয়েছিলাম। এখন তো আমাদের অবস্থাও তাই। বিদ্যুত নেই, জিনিসপত্রের দাম প্রতি দিন বাড়ছে। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের চেয়ে অনেক কম। এখন শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি। সবার আয় কমে গেছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে, এটাই শ্রীলঙ্কা। সরকার বলে, ঋণ পরিশোধে আমরা ব্যর্থ হয়নি। যদি আপনারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ না হন, তাহলে আন্তর্জাতিক সংস্থা মুডিস কেন বলে বাংলাদেশে ঋণ দেয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে। বাকিতে মালামাল কিনে সরকার দেশের মানুষের মাথায় বিশাল ঋণের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।
জিএম কাদের বলেন, শ্রীলঙ্কা আর আমাদের মধ্যে তফাত হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার মানুষ দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমেছে। শ্রীলঙ্কার মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নামেনি, বিক্ষোভ করেনি। কারণ, শ্রীলঙ্কার পুলিশ আন্দোলনকারীদের গুম করেনি, লাঠিচার্জ করেনি এবং গুলিও করেনি। সে দেশের পুলিশ আন্দোলনকারীদের দেশের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করেছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ চরম সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছে। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে পুড়ছে। শারীরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত।
তিনি বলেন, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষ মুক্তি পায়নি। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভ করেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করিনি। এখনো স্বৈরশাসন আছে, নির্যাতন-নিপিড়ন আছে। দেশের মালিকানা আমাদের হাত ছাড়া হয়ে গেছে, গণতন্ত্র হাতছাড়া হয়ে গেছে। স্বৈরশাসন এসেছে অজান্তে, এক ব্যক্তি শাসন এসেছে সবার অজান্তে। সবার অজান্তে এক ব্যক্তি ও এক দলের শাসন এসেছে দেশে। এখন ‘আওয়ামী লীগ প্লাস’ দেশ চালাচ্ছে। এখন পুলিশ প্রশাসনসহ সবাই আওয়ামী লীগের কথা বলে। তারা দেশ ও দেশের মানুষের কথা বলে না। বিদ্যুত উৎপাদন ও মেগা প্রকল্প থেকে টাকা লুটপাট করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আর এ কারণেই স্যাংশন ও ভিসা নীতির কথা এলেই তারা ঘাবড়ে যায়। কারণ, ইউরোপ-আমেরিকায় তাদের বাড়ি-ঘর আছে, সম্পদ আছে। স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমেরিকা যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তা বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে।
কাদের বলেন, দেশের মানুষ আমাদের (জাপা) বিশ্বাস করে না, তারা মনে করছে আওয়ামী লীগকে আবারো ক্ষমতায় নিতে আমরা নাটক করছি। কারণ, আমাদের কিছু মানুষ দুই নৌকায় পা দিয়ে আছে। আমাদের ভয় দেখাচ্ছে, আমাদের লাঙল নিয়ে যাবে, আমার চেয়ারম্যান পদ কেড়ে নেয়া হবে। আমরা লাঙল বা চেয়ারম্যান পদ পাওয়ার জন্য লালায়িত নই। মানুষের অন্তরে আমরা স্থান করে নিতে চাই। কে কী করল, কী করবে, তাতে আমরা ভীত নই। একক হলেও আমি দেশের মানুষের সাথে থাকব। দল নিয়ে বেচাকেনা করতে দেয়া হবে না।
জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সম্মেলনে জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ও ভাইস-চেয়ারম্যান এইচ এম শাহরিয়ার আসিফের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিনের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন-জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি।