সম্প্রতি হাজি সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম কর্তৃক এক নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে কিল ঘুষি দিয়ে দাঁত উপড়ে দেয়ার পর আবারো আলোচনায় উঠে এসেছিলেন হাজি সেলিম। র্যাব, পুলিশের অভিযানে হাজি সেলিমের পুত্রকে গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার মামলাসহ একাধিক মামলা দেয়া হয় তাঁর বিরুদ্ধে। রিমান্ডেও নেয়া হয় কয়েক দফা। হাজি সেলিমের দখল থেকে অগ্রণী ব্যাংকের শত কোটি টাকা মূল্যের জমিও উদ্ধার করার খবর বের হয় তখন। আওয়ামী গণমাধ্যম গুলো হাজি সেলিমের দখল বাণিজ্য নিয়ে ছিল কয়েকদিন সরব। দুর্নীতি দমন কমিশনও ঘোষণা দিয়েছিল হাজি সেলিমের অবৈধ সম্পদের সন্ধান করা হবে। ১/১১-এর জরুরী আইনের সময় কারাদণ্ড প্রাপ্ত মামলার স্থগিতাদেশের নথিও তলব করা হয়েছিল। কিন্তু সবকিছুই উল্টে গেছে। গত দুই দিন আগে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ কমিটিতে হাজি সেলিমকে উপদেষ্টা মণ্ডলির সদস্য হিসাবে রাখা হয়। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অগ্রণী ব্যাংকের উদ্ধার করা জমি আবারো দখলে নেন হাজি সেলিম। স্ত্রীর নামে সেখানে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিষ্ট্রেটকে টেলিফোনে অকথ্যভাষায় গালি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন নিক্সন চৌধুরী। তিনিও শাসক পরিবারের সদস্য। জাতীয় সংসদেরও একজন সদস্য তিনি। সরকারি কর্মকর্তাদের অকথ্য ভাষায় গালি দেওয়ার প্রতিবাদও করেছিলেন প্রশাসন ক্যাডার এসোসিয়েশন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ঘটনার রেশ কাটেনি। এর মধ্যেই জাতীয় যুব লীগের কমিটিতে তাঁকে উচ্চ পদ দেয়া হয়েছে।
ইসলাম-বিদ্বেষী হিসাবে পরিচিত জয়দেব নন্দী। যুবলীগে তাঁকেও দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদ। প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন চরম ইসলাম-বিদ্বেষী ছাত্রলীগের সাবেক এই হিন্দু নেতা।
গত ২১ নভেম্বর এই জয়দেব নন্দী ইসলামের প্রতি তার নিকৃষ্ট চেহারা ফের প্রদর্শণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের খণ্ডিত অংশের অনুষ্ঠানে হেফাজতের ইসলামের আলেমদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর অনুষ্ঠানে সংহতি প্রকাশ করে হুমকি দিয়েছেন এই নেতা।
হাজী সেলিমকে তোষণ, সেনাবাহিনীকে শেখ হাসিনার জবাব!
গত ২৫ অক্টোবর হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার সহযোগীরা রাস্তায় নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে মারধর করার পর ব্যাপক আলোচনা হয়।
’এ ঘটনায় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধে উঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরদিনই সোয়ারিঘাটে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিদেশী মদ ও অবৈধভাবে ওয়াকিটকি রাখায় তার ছেলে ইরফান সেলিমকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেয় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এর পরই পুরান ঢাকায় হাজী সেলিম গংদের জমি দখলের একের পর এক ঘটনা প্রকাশ হতে থাকে।
ইরফানের সাজায় প্রচণ্ড ধাক্কা খায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু, প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এই মুহূর্তে নাখোশ করতেও চান নি শেখ হাসিনা। তাই এনিয়ে প্রথমদিকে চুপ থাকে আওয়ামী লীগ। কিন্তু, দিন গড়িয়ে যাওয়ার পর সন্ত্রাসী তোষণ-পোষণের চেহারা ফের দেখায় দলটি। প্রতিরক্ষা বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে জবাব দিতে তারা কূট কৌশলের আশ্রয় নেন। পুরান ঢাকার জমি-বাড়ি দখলবাজ ও সন্ত্রাসী এমপি হাজী সেলিমকে খুশি করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে বড় পদ দেয়া হয়।
সম্মেলনের প্রায় এক বছর পর ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে উপদেষ্টামণ্ডলীতে রাখা হয়েছে। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটিতে সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বিতর্কিত এই এমপি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে শুয়োরের বাচ্চা বলার পর যুবলীগে সভাপতি মন্ডলিতে নিক্সন:
সম্প্রতি ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক ও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের অশ্রাভ্য ভাষায় হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের বিরুদ্ধে।
গত ১০ অক্টোবর ভোটের দিন সকালে তিনি চরভদ্রাসনের ইউএনওকে ফোন করে হুমকি দেন এবং অপর একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ‘শুয়োরের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে দেখে নেওয়ার কথা বলেন। তার ওই টেলিফোন আলাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
এই ঘটনা ছাড়াও ওই নির্বাচন ঘিরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসককে ফোন করে ‘অশোভন আচরণ’ ও হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে নিক্সন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন নিক্সন চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুবলীগের ২০১ সদস্যের যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন, সেখানে ২৭ সদস্যের সভাপতিমণ্ডলীতে ৮ নম্বরে আছেন বিতর্কিত নিক্সন চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর বড় বোন ফাতেমা বেগমের নাতি তিনি। নিক্সনের বাবা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী মাদারীপুরের শিবচরের সংসদ সদস্য ছিলেন। তার ভাই নূরে আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) এখন ওই আসনের এমপি। তিনি জাতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইসলাম-বিদ্বেষী জয়দেব নন্দী
বাংলাদেশের অলিতে গলিতে শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে আলেমরা প্রতিবাদ করায় ইসলাম-বিদ্বেষী জয়দেব নন্দী তার কদর্য চেহারা ফের প্রদর্শন করেছেন শনিবার (২১ নভেম্বর)।
মূর্তি নির্মানের প্রতিবাদ করায় চরমোনাই পীর রেজাউল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হকের কুশপুত্তলিকা পোড়ায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি ভূঁইফোড় সংগঠন।
শনিবার (২১ নভেম্বর) ইসলাম-বিদ্বেষী এই সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন হিন্দুত্ববাদী এই যুবলীগ নেতা।
এই জয়দেব নন্দীর নেতৃত্বেই ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নামের বোর্ড থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম মুছে দিয়েছিলো ছাত্রলীগ। সেখানে থাকা মান্নার ছবি ভাঙচুর এবং পরে তা পুড়িয়ে দেন জয়দেব।