সকলকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই

logo

স্টাফ রিপোর্টার

৭ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার

mzamin

facebook sharing button

দ্রুতই দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে কোনো দল বা ব্যক্তি মাস্টারমাইন্ড ছিল না, মাস্টারমাইন্ড ছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব সোমবার প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর কোনো গণমাধ্যমকে মুখোমুখি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তারেক রহমান। সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনে দলের কৌশল, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও তাদের নেতাকর্মীদের বিচার, বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে বিএনপি’র অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি। জামায়াতের রাজনৈতিক জোট নিয়ে কোনো ধরনের উদ্বেগ নেই জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনও জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন।

বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোলকে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন।
সাক্ষাৎকারটি হুবহু নিচে তুলে ধরা হলো-
বিবিসি বাংলা: তারেক রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য।
তারেক রহমান: আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ, আমাকে কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।
বিবিসি বাংলা: আপনি কেমন আছেন? আপনার সময় কেমন যাচ্ছে?
তারেক রহমান: আলহামদুলিল্লাহ আমি শারীরিকভাবে ভালো আছি। সময় তো স্বাভাবিকভাবে ব্যস্তই যাচ্ছে। ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে আছি, বাট মন- মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি।
বিবিসি বাংলা: আমরা এমন একটা সময় আপনার সঙ্গে কথা বলছিÑ যখন বাংলাদেশ ইতিহাসে একটা গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বললে ভুল বলা হবে না। ২০২৪ সালে একটি ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের শাসনের অবসান হয়েছে। আর কয়েক মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে আপনি আপনার অনেক দলীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, কথা বলেছেন, নিয়মিতই কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু গণমাধ্যমের সঙ্গে আপনি এই দীর্ঘ সময় কথা বলেননি। এতদিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন?
তারেক রহমান: ব্যাপারটা বোধহয় এরকম না, ব্যাপারটা বোধহয় একটু ভিন্ন। আসলে আমি কথা ঠিকই বলেছি। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর এখানে আছি এই দেশে, প্রবাস জীবনে, তবে আমার উপরে যখন দলের দায়িত্ব এসে পড়েছে তারপর থেকে আমি গ্রামে-গঞ্জে আমার নেতাকর্মীসহ তাদের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে সাধারণ মানুষ যখন যেভাবে অংশগ্রহণ করেছে আমি সকলের সঙ্গে কথা বলেছি।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে রীতিমতো একটা আদেশ দিয়ে আমার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আমি যদি গণমাধ্যমে কিছু বলতে চাইতাম, হয়তো গণমাধ্যমের ইচ্ছা ছিল ছাপানোর, গণমাধ্যম সেটি ছাপাতে পারতো না।

আমি একবার প্রেস ক্লাবে কথা বলেছিলাম। তখন পরের দিন দেখলাম যে, প্রেস ক্লাবে একটি তখনকার যেই প্রেস ক্লাবের যারা সদস্য ছিলেন বা কমিটি ছিল, তারা একটি মিটিং ডেকে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তারা তখন আমাকে আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি বলা হয়েছিল যে, সেরকম কোনো ব্যক্তিকে তারা প্রেস ক্লাবে কথা বলতে দিবে না। এভাবে তারা চেষ্টা করেছিল আমার কথা বন্ধ করে রাখতে।
আমি কথা বলেছি, সামাজিকমাধ্যম সহ বিভিন্ন পন্থায় আমি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি, আমি ইনশাআল্লাহ পৌঁছেছি মানুষের কাছে। কাজেই গণমাধ্যমে যে কথা বলিনি তা না। আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি, হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছিÑ আমি থেমে থাকিনি।
বিবিসি বাংলা: আমি অবশ্য সাক্ষাৎকারের কথা বলছিলাম যে, প্রশ্নোত্তরের বিষয়টি মানে বিশেষ করে গত এক বছরে। বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেছে এবং অনেকের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আপনি দেশে এসে সশরীরে দলের নেতৃত্ব দেবেন। গত এক বছরে যে প্রশ্নটা বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে এবং এখনো আসছে যে আপনি এখনো দেশে ফেরেননি কেন? কেন আপনি এখনো দেশে ফেরেননি?
তারেক রহমান: কিছু সংগতকারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে উঠেনি এখনো। তবে সময় তো চলে এসেছে মনে হয়। ইনশাআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো।
বিবিসি বাংলা: সেটা কবে আমরা কি জানতে পারি?
তারেক রহমান: দ্রুতই মনে হয়। দ্রুতই ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: নির্বাচনের আগে কি তাহলে আপনি দেশে আসবেন- এমন সম্ভাবনা বলা যায়?
তারেক রহমান: রাজনীতি যখন করি, আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে স্বাভাবিক, নির্বাচনের সঙ্গে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক কর্মীর একটি ওতপ্রোত সম্পর্ক। কাজেই যেখানে একটি প্রত্যাশিত, জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের সময় কেমন করে দূরে থাকবো? আমি তো আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, ইচ্ছা থাকবে, আগ্রহ থাকবে সেই প্রত্যাশিত যে প্রত্যাশিত নির্বাচন জনগণ চাইছে। সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সঙ্গে জনগণের মাঝেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: একটা বিষয় যেটা আপনার দল থেকে, মাঝে দলের নেতাদের কেউ কেউ কখনো কখনো বলেছেন যে, একটা নিরাপত্তার শঙ্কার কথা বলেছেন আপনি না আসার পেছনে, আপনি কি কোনো ধরনের শঙ্কা বোধ করেছেন এর মধ্যে?
তারেক রহমান: বিভিন্ন রকম শঙ্কার কথা তো আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তো শুনেছি। সরকারেরও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকেও তো অনেক সময় অনেক শঙ্কার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।
‘কোনো ব্যক্তি নয়, মাস্টারমাইন্ড গণতন্ত্রকামী জনগণ’
বিবিসি বাংলা: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে আসি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকা নিয়ে অনেক আলোচনা আছে। এটি মোটামুটি সব পক্ষই স্বীকার করেও যে, সেই সময়ে আপনার একটা সক্রিয় ভূমিকা ছিল। আবার আপনার দলের কোনো কোনো নেতা বা সমর্থক তারা এই অভ্যুত্থানে আপনাকে ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। আপনি কি নিজেকে এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখেন?
তারেক রহমান: না। আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে আমি কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই যে পাঁচই আগস্ট যেই আন্দোলন, জুলাই আন্দোলন বলে যেটি বিখ্যাত বা যেটি সকলের কাছে গৃহীত এই আন্দোলনটি সফল হয়েছে জুলাই মাসে। কিন্তু এই আন্দোলনটি প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে।
এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে।
আমি মনে করি জুলাই-আগস্ট মাসে এসে জনগণ সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু কী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাই সেদিন ছিল মাঠে? অবশ্যই নয়।
আমরা দেখেছি সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা তারা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মী- তারা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে।

এমন অনেক সাংবাদিক যারা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারও ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই, না খাটো করে দেখতে চাই না।
আমি বিশ্বাস করি দৃঢ়ভাবে সমাজের দলমত নির্বিশেষে শ্রেণিবিন্যাস নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের অবদান আছে।
এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
বিবিসি বাংলা: যখন আন্দোলনটা চলছিল, তখন আন্দোলনে যে ছাত্র নেতৃত্ব ছিল তাদের সঙ্গে আপনার কতোটা যোগাযোগ ছিল? আপনার দলের সঙ্গে তো নিশ্চয়ই যোগাযোগ ছিল, অন্যদের সঙ্গে আপনাদের, আপনার কতোটা যোগাযোগ ছিল?
তারেক রহমান: স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি, আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে, টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কি অবস্থা করেছিল স্বৈরাচার।
আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন এই যোগাযোগটি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সবসময় থেকেছে তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা।
বিবিসি বাংলা: ছাত্র-জনতার যে অভ্যুত্থান সেটির পরে এটার কৃতিত্ব কার সেটা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ দাবি করেছে, তাতে কি আপনার মনে হয় যে, এর ফলে বিভিন্ন পক্ষের যে সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের চেষ্টা সেটাই একটু বেশি প্রকট হয়েছে এবং এখানে বিএনপি’র আসলে কোনো দায় আছে কিনা?
তারেক রহমান: দেখুন ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা।
এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। বাট আমরা দেখেছি এই আন্দোলনে স্বৈরাচারের এই আন্দোলনে যতটুকু আমার মনে আছে প্রায় ৬৩ জন শিশু শহীদ হয়েছে, মারা গিয়েছে।
আমি আগেই বলেছি আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেছি যে, এই আন্দোলনের ক্রেডিট দলমত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনো একটি রাজনৈতিক দলের নয়।
অনেকে হয়তো অনেক কিছু বলে থাকতে পারেন, ডিমান্ড করতে পারেন, সেটি তাদের অবস্থান।
আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে- আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনে জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। ২০০০ এর মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ত্রিশ হাজারের মতন মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।
আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে রাষ্ট্রসহ, সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদের করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।
বিবিসি বাংলা: অন্তর্বর্তী সরকারের শুরু থেকেই দেখা গেছে যে, বিএনপি’র পক্ষ থেকে দ্রুত নির্বাচন দাবি করা হয়েছে। সরকার গড়িমসি করছে এ ধরনের অভিযোগও বিএনপি’র নেতারা করে আসছেন। তো এখন দেখা যাচ্ছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং নির্বাচন কমিশন ফেব্রুয়ারিতে একটা নির্বাচনের সময় দিয়েছেন। তো ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে- আপনাদের আস্থা কতোটা আছে তাতে?
তারেক রহমান: বিএনপি প্রথম থেকেই বলে আসছিল যে, যত দ্রুত নির্বাচনটি হবে, তত দ্রুত দেশের মধ্যে একটি স্থিতিশীলতা আসবে। দেখুন বাংলাদেশের মানুষ গত ১৭ বছর যাবৎ তাদের রাজনৈতিক অধিকার যেমন তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছিল, তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল।
যার ফলশ্রুতিতে আমরা সমাজে অনেকগুলো পর্যায়ক্রমিকভাবে স্পিলওভার ইফেক্ট বলতে যা বুঝায় অনেকগুলো খারাপ লক্ষণ দেখেছি। বেকার সমস্যা বেড়েছে, দরিদ্রতা বেড়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কৃষি ব্যবস্থা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়েছে।
আমরা সেজন্যই বলেছিলাম যে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে যত দ্রুত দেশের মালিক যারা অর্থাৎ জনগণ তাদের কাছে যখন সেই অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে, তারা যখন সিদ্ধান্ত নেবে, অর্থাৎ দেশের মালিক যখন সিদ্ধান্ত নিবে দেশ কারা কীভাবে পরিচালিত করবে, তত দ্রুত দেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।
কারণ প্রকৃতভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অবশ্যই জনগণের যে চাওয়া অর্থাৎ জনগণ যেভাবে চায় সেই বিষয়গুলোকে তারা এড্রেস করবে। ইয়েস, একটি নির্বাচন হলেই যে সব রাতারাতি সব ঠিক হয়ে যাবে তা না। সমস্যাগুলোকে যখন আপনি এড্রেস করবেন খুব স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে শুরু করবে।
আমরা আনন্দিত যে, দেরিতে হলেও সরকার জিনিসটি উপলব্ধি করতে পেরেছেন। আমরা ডিসেম্বরের  ভেতরে চেয়েছিলাম। উনারা ফেব্রুয়ারির  ভেতরে এখন নির্বাচনটি করতে চাইছেন। আমরা আস্থা রাখতে চাই যে, সরকার সে ব্যাপারে সব রকম উদ্যোগ পর্যায়ক্রমিকভাবে গ্রহণ করবেন।
বিবিসি বাংলা: এখন যেহেতু আপনারা বলছেন যে, আপনারা আস্থা রাখতে চান, সেখানে নির্বাচন নিয়ে আপনার পরিকল্পনাটা কি? এককভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে মানে দলগতভাবে নাকি জোটবদ্ধভাবে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে নির্বাচন করবে?
তারেক রহমান: খুব ট্রিকি কোশ্চেন একটু। দেখুন আমরা প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম কমবেশি একসঙ্গে কাজ করার জন্য। এমনকি আমরা যে ৩১ দফা দিয়েছি রাষ্ট্র পুনর্গঠনের, এটি প্রথমে ২০১৬ সালে আমরা দিয়েছিলাম শুধু বিএনপি’র পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে ভিশন টুয়েন্টি ছিল। যেটা পরবর্তীতে কিছুটা আরেকটু ডেভেলপ করে আমরা ২৭ দফা দিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে আমরা আমাদের সঙ্গে যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সকলের মতামত নিয়ে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কারণটি হচ্ছে যে দলগুলোকে আমরা পেয়েছি আমাদের সঙ্গে পথের আন্দোলনে, আমরা চাই সকলকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সকলের মতামতকে সঙ্গে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তাহলে মানে যারা আন্দোলন করেছে তারাই নাকি? মানে মিত্র কারা হবে আসলে কারা সঙ্গে থাকবে আপনাদের নির্বাচনকে সামনে রেখে?
তারেক রহমান: ওই যে বললাম, কমবেশি সকলকে নিয়ে আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।
বিএনপি’র মনোনয়নে এবার ভিন্ন কী হবে
বিবিসি বাংলা: কিন্তু দেখা গেছে জামায়াতে ইসলামী তারা কিছু দলকে নিয়ে বিএনপি বিরোধী একটি জোট করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। সেটিকে আপনারা কি উদ্বেগ হিসেবে দেখেন? মানে আপনারা কীভাবে দেখেন সেটা?
তারেক রহমান: দেখুন, কোনো দল বা সমষ্টিগতভাবে কোনো দল যদি বাংলাদেশের যে আইন আছে, বৈধ আইন আছে। বাংলাদেশের যে সংবিধান এখনো যেটি আছে এই সবকিছুর ভেতরে থেকে অর্থাৎ মানুষের সমর্থন-গ্রহণযোগ্যতা সবকিছুর ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে তারা করতেই পারে। এটাতে তো কোনো সমস্যা বা উদ্বেগের কোনো কারণ আমি দেখি না।
বিবিসি বাংলা: সেখানে যদি তারা একটি আলাদা জোট করে, সেটি কি আপনাদের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে?
তারেক রহমান: না, কেন? ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা থাকতেই পারে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কি আছে? বিএনপি তো আগেও নির্বাচন করেছে। বিভিন্ন সময় বিএনপি নির্বাচন করেছে। কম্পিটিশন করেই বিএনপি নির্বাচন করেছে। প্রতিযোগিতা করেছে। উদ্বেগের কিছু নেই।
বিবিসি বাংলা: মনোনয়নের প্রশ্নে যদি আসি, সেখানে আপনাদের কৌশলটা কি হবে? এর আগে বিভিন্ন সময় নির্বাচনগুলোতে পেশি শক্তির প্রভাব, টাকার প্রভাব, পারিবারিক বিষয় বিবেচনা এই বিষয়গুলো বিভিন্ন সময় অভিযোগ আছে। এবার ভিন্ন কি হবে আসলে?
তারেক রহমান: আপনি যেই বিষয়গুলো বললেন, আমরা কখনোই এইসব বিবেচনায় নিয়ে আমার দল নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি।
আমাদের নমিনেশনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত সবসময় কমবেশি যা ছিল বা ভবিষ্যতে আমরা যেটিকে মূল্যায়ন করবো- সেটি হচ্ছে অবশ্যই কোনো একটি পার্টিকুলার এলাকা থেকে আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইবো, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সঙ্গে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, উঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম।
যে ওই এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, তরুণ, নারী, মুরুব্বিসহ ছাত্র-ছাত্রী সবার সঙ্গে যার একটা কমিউনিকেশন আছে। এই ধরনের মানুষকেই আমরা প্রায়োরিটি দিবো, খুবই স্বাভাবিক। অর্থাৎ যার প্রতি জনসমর্থন আছে। যে জনসমর্থনকে তার সঙ্গে রাখতে পারে। জনগণের যার প্রতি সমর্থন আছে সেরকম মানুষকে দেখেই আমরা নমিনেশন দেবো।
বিবিসি বাংলা: সেখানে তৃণমূলের মতামত কতোটা প্রাধান্য পাবে? অভিযোগ আছে যে তৃণমূলের মতামত প্রাধান্য কম পায়?
তারেক রহমান: না ব্যাপারটা এরকম না। দেখুন গণতন্ত্রে স্বাভাবিক যেখানেই গণতন্ত্র আছে, সেখানে মতামত থাকতেই পারে। বিভিন্ন রকম মতামত-অভিযোগ। হয়তো এক জায়গায় ৫০ জন আছে। ৫০ জনের মধ্যে ৩০ জন একটি কথা বলছে, ১৫ জন একটি কথা বলছে। বাকিরা আরেকটি কথা বলছে। তাহলে আপনি কি বলবেন যে মতামত নেয়া হচ্ছে না? না।
স্বাভাবিকভাবেই যেখানে আমরা মেজরিটির যেটা মতামত পাবো, এলাকার মানুষের কম বেশি। আমরা তো আমাদের মতন করে খোঁজ করছি। সেটি তৃণমূলই হোক বা সেটি সাধারণ মানুষের হোক।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য- আমরা কিন্তু দলের নেতৃত্ব নির্বাচন করছি না। আমরা নির্বাচন করছি এমন একজন ব্যক্তিকে যেই শুধু দলেরই সমর্থন নয় বরং দলমত নির্বিশেষে ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষের সমর্থন যার প্রতি আছে।
আমরা এরকম একজন মানুষকে বের করে আনতে চাইছি। এরকম একজন মানুষকে আমাদের দলের মনোনয়ন দিতে চাইছি। শুধু দল দিয়ে তো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনে তো সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকে। বিভিন্ন মানুষের অংশগ্রহণ থাকে।
কাজেই যার সমর্থন আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো, চেষ্টা করছি যার প্রতি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আছে। শুধুমাত্র দলীয় সমর্থন নয়, এরকম মানুষ।
অন্যায় করলে বিচার হতে হবে, আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তারেক রহমান
বিবিসি বাংলা: নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার কাছে জানতে চাই যে, আগামী নির্বাচনে আপনার ভূমিকা কি হবে আপনি কি সরাসরি নির্বাচন করছেন? আপনাকে কি আমরা প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে দেখতে পাবো নির্বাচনে?
তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনি প্রথমদিকে বোধহয় একটা প্রশ্ন করেছেন, আমি ওখানে বলেছিলাম স্বাভাবিক আমি একজন রাজনৈতিক দলের সদস্য। একজন রাজনৈতিক কর্মী আমি। নির্বাচনের সঙ্গে তো রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক কর্মীর ওতপ্রোত সম্পর্ক।
কাজেই নির্বাচন যেখানে একটি মানে জনগণের সম্পৃক্ত এরকম একটি নির্বাচন হবে, সেখানে তো অবশ্যই আমি নিজেকে দূরে রাখতে পারবো না। আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশাআল্লাহ থাকবো আমি। আপনি আপনার প্রশ্নের পরের যে অংশটি ছিল, দেখুন আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না। এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ।
বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনি নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তো আপনাকে নিতে হবে।
তারেক রহমান: না না সেটি তো নিবো, কেন নিবো না? অবশ্যই নিবো।
বিবিসি বাংলা: আপনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাহলে?
তারেক রহমান: জ্বি.. ইনশাআল্লাহ।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে বা নির্বাচনে অংশ নেয় সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হিসেবে আমরা তারেক রহমানকে দেখতে পাবো সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি?
তারেক রহমান: এটির সিদ্ধান্ত তো বাংলাদেশের জনগণের।
বিবিসি বাংলা: বিএনপি’র পক্ষ থেকে?
তারেক রহমান: সেক্ষেত্রে তো এটি দল সিদ্ধান্ত নেবে। দল কীভাবে করবে এটি তো দলের সিদ্ধান্ত।
নির্বাচনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা কি হবে?
বিবিসি বাংলা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আপনাদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তিনি কি এ নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় থাকবেন? তাকে কি আমরা নির্বাচনে কোনো ভূমিকায় দেখতে পাবো?
তারেক রহমান: আপনি এমন একজন মানুষের কথা বলেছেন, যেই মানুষটি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, যতবার গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করা হয়েছে, প্রতিবার উনি অবদান রেখেছেন। সেই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বা পুনরুদ্ধার করার জন্য।
এবারো আপনাদের সকলের চোখের সামনেই ঘটেছে যে কীভাবে স্বৈরাচারের সময় তার উপরে অত্যাচারের খড়গহস্ত নেমে আসে। কিন্তু উনি আপস করেননি। এরকম একজন ব্যক্তি আজ অসুস্থ। কেন কীভাবে উনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হলো।
আমরা দেখেছিলাম একজন সুস্থ মানুষ গিয়েছেন। কিন্তু যখন বেরিয়ে এসেছেন একজন অসুস্থ মানুষ বেরিয়ে এসেছেন। তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এসবগুলোই ঘটনা দেশবাসী জানেন। তারপরেও যে মানুষটির এত বড় অবদান রয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার।
আমি সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে যেই প্রত্যাশিত, জনপ্রত্যাশিত যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, উনার শারীরিক সক্ষমতা যদি এলাও করে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন।
বিবিসি বাংলা: সেটা কি নির্বাচনে অংশগ্রহণ হতে পারে?
তারেক রহমান: এটি আমি এখনো বলতে পারছি না। আমি মাত্রই বললাম যে উনার শারীরিক বা ফিজিক্যাল এবিলিটির উপরে বিষয়টি কিছুটা হলেও নির্ভর করছে।
বিবিসি বাংলা: এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন চলে আসে বিএনপি’র ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে। আপনার বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চার দশক বিএনপি’র নেতৃত্ব দিয়েছেন। এখন আপনি কার্যত দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। বিএনপি’র ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব কতোটা থাকবে?
তারেক রহমান: দেখুন বিষয়টিকে আমি একটু তাহলে অন্যভাবে উপস্থাপন করি। সব রকম সকলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমি বলতে চাইছি। দেখুন, একজন চিকিৎসকের সন্তান যখন চিকিৎসক হয় তখন সে ভালোও করে সে খারাপও করে। একজন লয়ারের সন্তানও দেখা যায় যে অনেক সময় বাবা-মায়ের মতন ভালো লয়ার (আইনজীবী) হয় অথবা হয় না।
রাজনীতিবিদদের ক্ষেত্রে অনেকের সন্তান পলিটিক্সে এসেছে। সবাই কি ভালো করেছে? সবাই ভালো করেনি। কেউ কেউ করেছে কেউ কেউ করতে পারেনি ভালো।
আপনি যদি আমাকে ইঙ্গিত করে থাকেন, তাহলে এভাবে আমি বলবো যে, দেখুন আমরা দেখেছি বাংলাদেশের মতন দেশে রাজনীতি যারা করেন বিগত ১৭ বছরে দেখেছি। তার আগেও আমরা দেখেছি রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হন। মিথ্যে মামলার শিকার হন। আমাদের বহু নেতাকর্মী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জেল-জুলুম খেটেছে। ঘরবাড়ি ভেঙে দেয়া হয়েছে। যেই কয়টা উদাহরণ দিলাম আমি মাত্র।
আপনি কি বলতে পারবেন এর কোনোটার মধ্যে দিয়ে আমি যাইনি? এর প্রতিটার ভেতর দিয়ে আমি গিয়েছি। প্রত্যেকটা স্তর পার করে এসেছি আমি। আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যেই নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল-জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি। সবকিছুর ভেতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি।
কাজেই এজন্য এই কথাগুলো আমি বললাম যে রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। কাজেই যে অর্গানাইজ করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবে সে এগিয়ে যেতে পারবে। কেউ যদি এগিয়ে যেতে না পারে, তাহলে সে এগিয়ে যেতে পারবে না। সময় পরিস্থিতি সবকিছু প্রমাণ করে দিবে।
বিবিসি বাংলা: আপনার স্ত্রী বা কন্যা বা আপনার পরিবারে যারা আছেন তারা রাজনীতিতে আসবেন কিনা এটা নিয়ে কিন্তু ব্যাপক আলোচনা আছে। আলোচনা হয় কিন্তু রাজনীতিতে। তো এ ধরনের কি কোনো সম্ভাবনা আছে বা তারা আগ্রহী কিনা রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে?
তারেক রহমান: আমি ওই যে বললাম সময় পরিস্থিতি বলে দিবে ওটা।
বিবিসি বাংলা: একটু আবার নির্বাচনের দিকে যাই। বিএনপি সর্বশেষ সরকারে ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এরপর প্রায় ১৯ বছর পরে বিএনপি’র সামনে আবার একটা সরকার গঠনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই তখনকার যে বিএনপি আর এখনকার যে বিএনপি এই দুটোর পার্থক্যটা আপনি কোথায় কী বলবেন?
তারেক রহমান: এই ১৯ বছরে আমরা বাংলাদেশ বলি বা পুরো বিশ্ব বলি অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। দুটো বড় বড় জিনিসের বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে।
একটি হচ্ছে কোভিডের ভেতর দিয়ে পুরা বিশ্ব গিয়েছে। এই কোভিড বিভিন্নভাবে আমাদের অনেক কিছু চিন্তাভাবনা মনোজগৎ চেঞ্জ করেছে। ঠিক একইভাবে যদি আরেকটি বিষয় আমরা দেখি এই যে আপনার সঙ্গে আমি কথা বলছি অনলাইনে, এই যে আইটি বা সোশ্যাল মিডিয়া এই পুরো বিষয়টা কিন্তু মানুষের মনোজগৎকে ভিন্নভাবে ভিন্ন রকম করেছে।
অনেক ক্ষেত্রে মনোজগতে একটা প্রভাব বিস্তার করেছে। খুব স্বাভাবিকভাবে আপনি যেই সময়ের কথা বলেছেন সেই সময় এই বিষয়গুলো হয়তো সেভাবে ছিল না। তো স্বাভাবিকভাবেই এই সবকিছু বিবেচনা করে সামনের দিনগুলোতে আমাদেরকে এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
আমরা সেভাবে চিন্তাভাবনা করে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বিষয়গুলোকে আমরা সাজাচ্ছি। সেই সময় থেকে ১৯ বছর আগে আমাদের যেসব প্ল্যান প্রোগ্রাম ছিল, তার থেকে কিছুটা পরিবর্তন হবে।
কিন্তু ওই যে বেসিক যে জিনিসটা সেটা হচ্ছে মানুষের বেটারমেন্ট। মানুষের ভালো কিছু করার জন্য মানুষ যাতে আজকে যেমন আছে আগামীকাল যাতে একটু বেটার থাকতে পারে  কীভাবে সেটা করা যেতে পারে, কে কোনো শ্রেণি কীভাবে একটু বেটার থাকতে পারে সেটিই থাকবে আমাদের সবচেয়ে প্রায়োরিটি ইস্যু।
বিবিসি বাংলা: বিগত যখন বিএনপি সরকারে ছিল তখন অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল, তার মধ্যে একটা বড় বিষয় ছিল দুর্নীতির অভিযোগ। সরকারে যারা ছিলেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বা সেই সময় যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছিল বিভিন্ন জায়গায়। আপনার নিশ্চয় মনে আছে যে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে তখন অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ ধরনের পরিস্থিতি যে আর হবে না এ বিষয়ে আপনি ভোটারদের কীভাবে আশ্বস্ত করবেন?
তারেক রহমান: দেখুন আপনি যে কথাটি বললেন দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। ৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল সেই সময়। আমরা ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবরে সরকার নির্বাচনের পর ১০ই অক্টোবর সরকার গঠন করি, সম্ভবত।
এর বোধহয় কিছুদিন পরে একটি সূচক বের হলো টিআইবি’র। মানে দুই তিন মাস পরে বোধহয় একটি সূচক বের হলো।
নিশ্চয়ই মাত্র নির্বাচিত একটি সরকারের পক্ষে তো ভালোমন্দ কোনো কিছুই তিন মাসে করা সম্ভব নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই যে সূচকটি হয়েছিল সেটি তার আগে আমাদের আগে যে সরকারটি ছিল তারা যে পাঁচ বছর যা করেছে তার ওপর ভিত্তি করেই সূচকটি তারা তৈরি করেছে।
আপনি যদি ২০০১ থেকে ২০০৬ অর্থাৎ বিএনপি সরকার গঠন করার পরে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে যখন ক্ষমতা হ্যান্ডওভার করে দিলো, আপনি যদি সেই সংস্থা টিআইবি নামক সেই সংস্থাটার রিপোর্টই যদি আপনি দেখেন তাহলে দেখবেন পর্যায়ক্রমিক ভাবে, এটি কিন্তু আমার কথা না, এটি তাদের পরিসংখ্যানের কথা- পর্যায়ক্রমিক ভাবে কিন্তু নেমে এসেছে।
হ্যাঁ আমি এডমিট করছি পুরাপুরি হয়তো আমরা করতে পারিনি। বাস্তবতা তো বুঝতে হবে। এটি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কাজেই এটি মানুষকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আস্তে আস্তে করতে হবে। জিনিসটি সময় লাগবে।
আমি এখন যত কথাই বলি না কেন বাস্তবতা হচ্ছে এই বিষয়টি যেহেতু সময় লাগবে আমাদের কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।
সেজন্যই আমি ভোটারদের এতটুকু বলতে পারবো, আমরা যদি সুযোগ পাই, জনগণ যদি আমাদের সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে একটি এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে কিছুটা হলেও আমরা বহির্বিশ্বে বিশ্বের অন্য দেশের সামনে কিছুটা হলেও যাতে সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি।
বিবিসি বাংলা: পাঁচই আগস্টের পরে বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এরইমধ্যে চাঁদাবাজি বা দখলের মতো নানা অভিযোগ এসেছে। আপনাদের দল থেকে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে এটা ঠিক, আবার একই সঙ্গে এটাও ঠিক যে এই অভিযোগগুলো কিন্তু বারবার আসছে। তো এটা থামানো যাচ্ছে না কেন?
তারেক রহমান: আপনার প্রতি সম্মান রেখে আপনার সঙ্গে এগ্রিও যেমন করবো, আবার এখানে অন্য একটি বিষয় আমি তুলে ধরতে চাইবো।
এরমধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে দেখেছেন যে প্রায় ৭০০০-এর মতন আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আমরা কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। কিন্তু এই ৭০০০-এ সবাই কিন্তু আপনি যে অভিযোগ করলেন এই অভিযোগের সঙ্গে জড়িত নয়। এরমধ্যে এমন অনেক বিষয় আছে যারা অন্য সাংগঠনিক বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। এটি গেল একটি বিষয়।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে আমাদের কাছে এ রকম অনেক অভিযোগ এসেছে। আমরা অভিযোগগুলো তদন্ত করেছি। তদন্ত করার পরে আমরা বেশ কিছু বিষয় পেয়েছি।
যেমন, আমি দুই-একটি উদাহরণ দিয়ে আপনাকে বলি। যেমন- ধরেন দুই ভাই। কোনো একটি এলাকায় দুই ভাই আছে। দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পত্তি সহায় সম্পত্তি নিয়ে একটি সমস্যা আছে। এক ভাই বিগত যে স্বৈরাচার পলাতক স্বৈরাচার তাদের কারও সঙ্গে এক ভাইয়ের খুব ভালো সম্পর্ক।
তার ফলে সে সেই স্বৈরাচারের যে দোসর যার সঙ্গে এই এক ভাইয়ের সম্পর্ক, সে তার ইনফ্লুয়েন্সটি ব্যবহার করে অন্য ভাইয়ের সম্পত্তিও জোর করে দখল করে রেখেছে। এখন পাঁচ তারিখের পরে যে ভাই স্বৈরাচারের দোসরকে ব্যবহার করেছিল সেই দোসরও তো পালিয়ে গিয়েছে। তো স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাই এখন আর শেল্টার পাচ্ছে না।
তো অন্য যার সম্পত্তি জোর করে রেখে দিয়েছিল অন্য ভাইটি। সেই অন্য ভাইটি স্বাভাবিকভাবে তার হক আদায় করতে গিয়েছে বা হক বুঝে নিতে গিয়েছে। এখন এক্সিডেন্টলি বা ইনসিডেন্টলি যে ভাই এতদিন বঞ্চিত ছিল সম্পত্তি থেকে সেই ভাই বিএনপি করে। বিএনপি’র কোনো একজন কর্মী বা স্ট্রং সমর্থক বা নেতা যেটাই হোক। চাপিয়ে দিলো অভিযোগ তুলে দিলো অন্যজন যে বিএনপি দখল করতে গিয়েছে। এরকম ঘটনা আমরা প্রচুর পেয়েছি।
আবার আরেকটি আমি উদাহরণ দেই যা সত্য, যা বাস্তব। স্বৈরাচারের সময় সারা বাংলাদেশে আমাদের প্রায় ৫০ লাখের বেশি নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন রকম গায়েবি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছিল।
আমাদের বহু নেতাকর্মী তাদের ঘরবাড়িতে থাকতে পারতো না। তাদের বিভিন্নভাবে পালিয়ে থাকতে হতো। বিভিন্নভাবে সরে থাকতে হতো। এই সুযোগে স্বৈরাচার তাদের ব্যবসা বাণিজ্য দোকান-পাট ঘরবাড়ি জমিজমা, পুকুর দখল করে নিয়েছিল। পাঁচ তারিখে যখন স্বৈরাচার পলাতক হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে- তখন স্বৈরাচারের যারা দখল করেছে তারাও সঙ্গে সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের নিজেদের যেগুলো বৈধ সম্পত্তি, পৈতৃক সম্পত্তি সেগুলো আবার ফিরে পেতে গিয়েছে। তখন আবার কিছুসংখ্যক লোক প্রচার করেছে যে বিএনপি’র লোকজন দখল করতে গিয়েছে- এরকম ঘটনা প্রচুর ঘটেছে।
আপনি যেই কথাটি বললেন- সে রকমও কিছু ঘটেছে। সে কারণেই আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। তবে এখানে আমার একটি প্রশ্ন আছে, যে প্রশ্নটি আমরা পাবলিকলিও করেছি। দেখুন আমরা একটি রাজনৈতিক দল। কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমরা অস্বীকার করছি না। ঘটেছে যেমন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে।
যতটুকু আমরা জেনেছি, যতটুকু আমরা তদন্তের পরে পেয়েছি, যখন সত্যতা পেয়েছি, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। কিন্তু পুলিশিং করা তো আমাদের কাজ না। রাজনৈতিক দলের কাজ অবশ্যই পুলিশিং করা না।
আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কখনো বলিনি সরকারকে- যে অমুককে ধরতে পারবে না, তমুককে ধরতে পারবে না, এই করতে পারবে না ওই কথা। আমরা কিন্তু কখনো বলিনি। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে যাদের কাজ পুলিশিং করা তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। তারা কেন তাদের কাজে ব্যর্থ এটি আমাদের প্রশ্ন।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এখানে সরকারের একটা ব্যর্থতা আছে?
তারেক রহমান: অবশ্যই। আমি তো আগেই বলছি পুলিশিং তো রাজনৈতিক দলের কাজ না পুলিশিং করার দায়িত্ব সরকারের।
বিবিসি বাংলা: অর্থাৎ আমরা ধরে নিতে পারি যে, আপনারা যদি সরকার গঠন করেন সেক্ষেত্রে আপনার দলের নেতাকর্মী বা আপনার দলের নামে কোনো চাঁদাবাজি বা দখল- এ ধরনের কিছু কেউ সেটা করতে পারবে না, কারণ তখন যেহেতু আপনারা সরকারে থাকবেন?
তারেক রহমান: ইয়েস, পুলিশ পুলিশের কাজ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলার কাজ করবে। বিএনপি ইনশাআল্লাহ সরকার গঠন করলে আমার দলের কোনো নেতাকর্মী তখনও যদি এরকম কোনো অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হয় আমরা দলের অবস্থান থেকে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিবো।
দল তার পক্ষে থাকবে না, দলের অবস্থান এবং দেশের আইন অনুযায়ী। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তারা তাদের কাজ করবে, সিম্পল। এখানে দুইয়ে দুইয়ে চারের মতন ব্যাপার।
বিবিসি বাংলা: একটু ডাকসু নির্বাচন প্রশ্নে আসি। সাম্প্রতিক সময়ে ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ব্যাপক আলোচনা চলছে রাজনীতিতে এখনো। এর ফলাফলে দেখা গেছে যে, বিএনপি সমর্থক ছাত্রদলের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল জয়ী হয়েছে। আপনি কীভাবে দেখেন এই ফলাফলটাকে আসলে?
তারেক রহমান: আমি মনে করি গণতান্ত্রিক যাত্রার একটি ভালো উদ্যোগ এটি। ভালো সূচনা। এটি গেল এক নম্বর।
দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে যারা জয়ী হয়েছেন বা এরকম আরও ভবিষ্যতে যারা জয়ী হবেন, তাদের প্রতি শুভেচ্ছা এবং যারা ভবিষ্যতে জয়ী হবেন তাদের প্রতি অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে- দেখুন একটা অগ্রযাত্রা শুরু হলো, কিন্তু আমরা চাইছিলাম না যে কোনো বিতর্কের মধ্যে এগুলা পড়ুক। আমরা আশা করবো যে পরবর্তীতে যেগুলো হবে সেগুলো বিতর্কবিহীন হবে নির্বাচনগুলো।
বিবিসি বাংলা: এই নির্বাচনের ফলাফল, মানে ডাকসুর নির্বাচনের ফলাফল এটা কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে? আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার কি মনে হয়? আপনি কি মনে করেন সেটা?
তারেক রহমান: আমি যেটা দেখলাম বিভিন্ন মিডিয়াতে কিছু ব্যক্তি, যেমন-মান্না ভাই, উনাকে উনি তো বোধহয় দু’বার ভিপি ছিলেন। আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ।
আমরা যদি উনার বক্তব্য শুনে থাকি বা ধরে থাকি তাহলে তো আমি মনে করি না কোনো কারণ আছে। ছাত্র রাজনীতি ছাত্র রাজনীতির জায়গায়, জাতীয় রাজনীতি জাতীয় রাজনীতির জায়গায়।
বিবিসি বাংলা: এখন যে সক্রিয় দলগুলো আছে তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রশ্নে যদি একটু আসি- যে জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে বিএনপি’র নেতাদের অনেক সমালোচনা করতে দেখা যাচ্ছে। গত সাম্প্রতিক সময়ে, তো জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আপনার মনোভাবটা কি আসলে?
তারেক রহমান: বিষয়টা হচ্ছে যে দেখুন বাংলাদেশের স্বীকৃত যে নিয়ম, আইন-কানুন আছে, এগুলোর ভিতরে থেকে যদি কেউ রাজনীতি করে অবশ্যই করতে পারে।
বিএনপি সবসময় বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই বিষয়টি আমরা এভাবেই দেখতে চাই।
দেশের যে আইন-কানুন আছে তার ভেতরে থেকে যারা রাজনীতি করবে, অবশ্যই সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। এবং আমরা তো চাই সবাই রাজনীতি করুক। বহুদলীয় রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি।
বিবিসি বাংলা: জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপি’র সঙ্গে একসময় মিত্র ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের বিরোধী ভূমিকা নিয়ে কিন্তু বিএনপি নেতারা এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সামনে আনছেন। কিন্তু বিএনপি আবার তাদের সঙ্গে সরকারও গঠন করেছিল একটা সময়?
তারেক রহমান: ২০২৪ সালে স্বৈরাচার যেই হত্যাগুলো করেছে দেশ স্বাধীনের পরে যখন তারা সরকার গঠন করেছিল ক্ষমতায় ছিল তখনও যে সকল লুট তারা করেছে, খুন-গুম তারা করেছে।
বিগত ১৭ বছর গুম খুন যারা করেছে, এর জবাব যেরকম তাদেরকেই দিতে হবে, ঠিক একইভাবে ৭১ সালে কোনো রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনো বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দিবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারবো না। আমারটা আমি দিতে পারবো। অন্যেরটা তো আমি দিতে পারবো না।
বিবিসি বাংলা: আপনি জুলাইয়ের সময়ের কথা বলছিলেন। সে সময়ের হত্যাকাণ্ডের কথা বলছিলেন। সেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ব্যাপারে আপনার আপনাদের বা বিএনপি’র অবস্থানটা কি আসলে?
তারেক রহমান: দেখুন, আমি ১৭ বছর যাবৎ প্রবাস জীবনে আছি। ওয়ান ইলেভেন, তথাকথিত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় যেই শারীরিক নির্যাতন আমার ওপরে হয়েছিল তারপরে চিকিৎসার জন্য আমি এই দেশে আসি।
আমি যখন এখানে আসি, আমার ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম- ছোট ভাইকে। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল।
সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙেচুরে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই ভাই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে।
আমি আমার পরিবারের যেই কাহিনী আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। এটিকে আপনারা কাহিনী বলুন, বা সংগ্রাম বলুন যেটাই বলুন না কেন, এটি শুধু আমার কাহিনী না, বা আমার পরিবারের কাহিনী না। এরকম কাহিনী বাংলাদেশের শত না, হাজার হাজার পরিবারের।
যে পরিবারের বাবা, যে পরিবারের ভাই, যে পরিবারের স্বামী তার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় হাসপাতালের বারান্দায় মারা গিয়েছে, তা না হলে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় জেলের ভেতরে মারা গিয়েছে, সহায় সম্পত্তি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে- এই সকল অন্যায়, এই সকল হত্যা, এই সকল নির্যাতনের জন্য যারা দায়ী, যারা এসবের হুকুম দিয়েছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে।
এটি প্রতিশোধের কোনো বিষয় নয়। এটি ন্যায়ের কথা। এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কী মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
বিবিসি বাংলা: এখানে একটা বিষয় আলোচনায় এসেছে যে যারা অপরাধী তাদের বিচার হবে। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারা- না পারার প্রশ্নে বিএনপি’রও অনেক নেতা অনেক সময় বলেছেন যে কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে তারা নন। তো এখন নির্বাচনও সামনে আসছে। ফলে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না সে ধরনের একটা প্রশ্নও আসছে। তো সেটা সেই জায়গাটাতে বিএনপি’র অবস্থানটা কী হতে পারে?
তারেক রহমান: দল হিসেবে তারা যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে।
বিবিসি বাংলা: তার মানে এটা আদালতের বিষয় বলে মনে করছেন?
তারেক রহমান: দল হিসেবে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তাহলে তাই হবে। সোজা কথায় অন্যায়কারীর বিচার হতে হবে। তো সেটি ব্যক্তি হোক, সেটি দলই হোক। যারা জুলুম করেছে তাদের তো বিচার হতে হবে। সেটি ব্যক্তিও হতে পারে। সেটি দলও হতে পারে।
বিবিসি বাংলা: আপনি ব্যক্তিগতভাবে কী মনে করেন? আওয়ামী লীগের কি বাংলাদেশের রাজনীতিতে থাকা উচিত নাকি, না?
তারেক রহমান: আমার মনে হয় আপনার কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তরে আমি মনে হয় বলেছিলাম যে- আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
আমরা বিশ্বাস করি এবং বিভিন্ন সময় বলিও আমরা বিএনপি যারা করি আমাদের রাজনৈতিক সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করতে চাই- যে দলের ব্যক্তিরা বা যে দল মানুষ হত্যা করে, মানুষ গুম করে, মানুষ খুন করে, দেশের মানুষের অর্থসম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে- জনগণ তাদের সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না।

জনগণ যদি সমর্থন না করে কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক সংগঠনকে তাদের টিকে থাকার তো কোনো কারণ আমি দেখি না। যেহেতু জনগণের শক্তিতে আমরা বিশ্বাস করি, জনগণের সিদ্ধান্তে আমরা বিশ্বাস করি। জনগণের সিদ্ধান্তের উপরে আমরা আস্থা রাখতে চাই। এ বিষয়ে সবচেয়ে বড় বিচারক আমি মনে করি জনগণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here