সংসদে হাসিনার বক্তব্যেই ক্ষমতা হারানোর পদধ্বনি!

 আমার দেশ
 প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩

ড. ফয়জুল হক

ড. ফয়জুল হক

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে বিশেষ অধিবেশন এর আলোচনায় রাতের ভোট চোর শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়েছেন তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। তিন বক্তব্যের একটি ছিলো আমেরিকার কঠোর সমালোচনা, দ্বিতীয়টি ছিলো এই সরকারের এক সময়ের আজ্ঞাবহ পত্রিকা প্রথম আলোর কঠোর সমালোচনা এবং ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গ।

প্রথমেই আমি একটি বিষয় আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আর তা হলো যে যখন শেখ হাসিনা কখনো কঠিন সময় পার করেন, তখন তার আলোচনা বা বক্তব্য শুনলেই বুঝতে পারবেন, তার কোন সমস্যা শুরু হয়েছে। হোক তা পারিবারিক কিংবা রাজনৈতিক।আপনাদের মনে আছে শেখ হাসিনার বেয়াই রাজাকার হিসেবে সু প্রতিষ্ঠিত খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাথে সমস্যা শুরুর সূচনার দিকে নিশ্চয়ই জানবেন তিনি কতটা দিগবিদিক হয়েছিলেন, তার আলোচনা, পারিবারিক সম্পর্ক সব কিছুতেই একটি সমস্যার ছাপ ভেসে উঠেছিলো! পরবর্তীতে জনগন জানতে পেরেছে যে টাকা পয়সার ভাগাভাগি, মেয়ের জামাই ও শেখ পরিবারের দুর্নীতি সহ সব কিছু নিয়ে তিনি সমস্যায় জর্জরিত। আজ আমরা সে প্রসঙ্গে আলোচনা করতে চাইনা, আলোচনা করতে চাই কিভাবে বুঝবেন হাসিনা বিপদে আছেন বা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে যা খুশি তাই বকছেন।

নিশ্চয়ই আমিসহ আমাদের পাঠকরা বিশ্বাস করেন সেই ২০০৮ সনেই শেখ হাসিনা ভারত ও আমেরিকার যৌথ নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে দেশকে অবৈধ পথে দখল করেছিলেন ১/১১ মঈন ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে।তখন এদেশ থেকে ইসলামিক একটিভিটিস বন্ধ করার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে যৌথ উদ্যোগেই পথ চলা শুরু করে মঈন ফখরুদ্দিন সরকার। যা পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই চলমান থাকে গত ১৫ বছর পর্যন্ত। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন ইস্যুতে ইসলামপন্থীদেরকে যেভাবে কোণঠাসা করে রাখা হচ্ছে, ঠিক তেমনি ভাবে দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদেরকেও জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার, খুন, গুম করে অবৈধ পথে এগিয়ে চলছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার শাসন আমল আর ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এর শাসন আমল একই পন্থায় পরিচালিত হচ্ছে।পার্থক্য এতোটুকু তখন বাকশালী তন্ত্র দিয়ে দেশ চলেছে আজ বাকশালী ছদ্মবেশে আওয়ামী অপশাসন চলছে দেশ জুড়ে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এর শাসন আমল সম্পর্কে সুযোগ পেলে ভিন্ন কোন লিখনিতে প্রকাশ করবো ইনশাআল্লাহ।

আজ আলোকপাত করছি শেখ হাসিনার পতনের পদধ্বনি বুঝবেন কিভাবে সে সম্পর্কে।পূর্বেই বলেছি হাসিনার কথা যখন লাইন থেকে বে লাইনে চলে যাবে,তখনই বুঝবেন তার মিটার ঠিক মতো কাজ করছেনা, তিনি যা খুশি তাই বলবেন। যেমনি ভাবে ১৯৯১ সনে বিএনপি নির্বাচনে জয়যুক্ত হওয়ার পূর্বেও হাসিনা একই উপায়ে বকাবকি করতে থাকতো। ২০০১ সনের ৪ দলীয় জোট নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাই ঘটেছে। গত ১ বছর পর্যন্ত হাসিনা বুঝতে পেরেছে তার হাতে সময় বেশী নেই।

দেশে বিদেশে অপমানিত হওয়ার পরেও সে নির্লজ্জ বেহায়ার মতো ক্ষমতা আকরে ধরার জন্য এমন কেন কাজ নেই যা তিনি করেননি। দূতাবাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থাসহ সব যায়গায় তিনি লবিস্ট নিয়োগ করেছে। এমনকি অনলাইনে কমেন্টস করা, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সরকারী খরচে লক্ষাধিক নিম্নমানের দালালও নিয়োগ করেছে। কোন কিছুতেই যেনো তার মুক্তি হচ্ছেনা।

পাঠকদের সুবিধার্থে বলতে হচ্ছে যে,বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে গত ১৫ বছরে আমেরিকা সহ বিশ্বের বড় বড় মোড়ল রা একজন প্রতারক, চোর ও দুর্নীতিবাজ হিসেবেই চিনেছে। এর অনেকগুলো কারণও আছে।দেখবেন পৃথিবীতে আপনি যা করবেন তার একটি রেজাল্টও পাবেন। শেখ হাসিনাকে অন্যায় ভাবে প্রতিষ্ঠিত যারা করেছিলো আজ তাদের কাছেই তিনি প্রতারক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

যে তিনটি বিষয়ে কথা বলবো তার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় হলো শেখ হাসিনা কর্তৃক সংসদে প্রথম আলো কে আওয়ামীলীগের শত্রু, দেশের শত্রু, গণতন্ত্রের শত্রু বলে সম্বোধন করা নিয়ে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই আর তা হলো, এই প্রথম আলোই যুগ যুগ ধরে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদেরকে প্রমোট করেছে। আজ প্রথম আলোর বিপদে ইসলামপন্থী ও দেশপ্রেমিকরাই তার পাশে সহানুভূতি প্রকাশ করছে। নিশ্চয়ই মনে আছে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মজলুম সাংবাদিক জনাব ড. মাহমুদুর রহমানের উপরে জুলুম নির্যাতনের কথা! অন্যায়ভাবে হাসিনার দল আওয়ামী লীগ তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ার বিচারালয় এর সামনে হামলা করে রক্তাক্ত করেছে, পত্রিকাটির পাবলিকেশন বন্ধ করে দিয়েছে। ৫ মে শাপলা চত্ত্বরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেসরকারি টেলিভিশন দিগন্ত বন্ধ করেছে আওয়ামী লীগ, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকের উপরে হামলা জেল জুলুম সবই চলেছে গত বছরগুলোতে। কয়েকমাস আগে আবার দৈনিক দিনকাল পত্রিকা অফিস সিলগালা করেছে এই শেখ হাসিনার দালাল বাহিনী। এতোগুলো ঘটনার পরেও প্রথম আলো সহ বহু সাংবাদিক ও মিডিয়া নিরব ছিলো। শুধুমাত্র সরকারের দালালী করার জন্য। কিন্তু তখনও তারা বুঝতে পারেনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি। আওয়ামীলীগ যে একমাত্র ওদের পা না চাটলে কাউকে মূল্যায়ন করেনা সেটা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে প্রথম আলো সহ বহু সংবাদপত্র ও সাংবাদিক। কিন্তু এতো দিনে দেশের সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা যে শেষ হয়ে গিয়েছে!

তার পরেও গণতন্ত্রমনা দেশপ্রেমিক নাগরিকগণ সাংবিধানিক স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই তারা প্রথম আলোর বিপদে সমবেদনা জানাচ্ছে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রমোট করা দালাল বুদ্ধিজীবীরা উঠে পরে লেগেছে এই প্রথম আলোর ই বিরুদ্ধে। বাদ যায়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পর্যন্ত। শাহরিয়ার গংদের সাথে একত্রে মানববন্ধন করে ঐতিহ্য নষ্ট করেছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও। দেখলাম প্রথম আলো মেরিল পুরস্কার পাওয়া নারী অভিনেত্রীও রাস্তায় দাঁড়ালেন প্রথম আলোর বিরুদ্ধে। এখন শেখ হাসিনা স্বয়ং নিজে সংসদে দাঁড়িয়ে ভর্তসনা করলেন প্রথম আলোর।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সনের শাসন আমলেও একই উপায়ে আওয়ামীলীগের লোকেরাই সমালোচনা করে ভর্তসনার স্বীকার হয়েছিলেন। ৪ঠি সংবাদ পত্র বাদে সব বাতিল করা হয়েছিলো সেদিন। আবার আওয়ামীলীগই ১৫ই আগস্ট সংগঠিত করেছিলেন।সে ভিন্ন ইতিহাস।

আজ যখন দেখছি শেখ হাসিনাও তার বাবার মতো করে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করছে, যদিও তারা আওয়ামীলীগের ই দালালী করতো! তার পরেও ন্যূনতম বিরোধিতা সহ্য করতে পারেনি এই ফ্যাসিস্ট সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। সে কারণে মনে হচ্ছে হাসিনার ক্ষমতার শেষ সময় পার করছেন এখন।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি দেখেছেন, সংসদে শেখ হাসিনা বলতে বাধ্য হচ্ছেন যে, আমেরিকা চাইলে কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন আবার চাইলে ক্ষমতা থেকে নামাতেও পারেন! এ বক্তব্যের মুলেও রয়েছে শেখ হাসিনার পূর্ব অভিজ্ঞতা। কারন ২০০৮ এ তিনি আমেরিকা ও ভারতের সাহায্য নিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন এবং আজও তিনি অবৈধ পথে দেশ চালাচ্ছেন! যদিও তিনি ও তার দলের তুষের উপরে টিকে থাকা নেতারা প্রায়ই বলেন, আমেরিকাকেও নাকি আওয়ামীলীগ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে। শেইম। এখানে আমার মনে হচ্ছে, শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছে যে এবার আর অবৈধ পথে সরকার গঠন করতে পারবেনা! তাই ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য ব্লেইম গেইম হিসেবে আমেরিকার উপরে দোষ চাপিয়ে বিদায় নিতে চাচ্ছে। যাতে বলতে পারে আমি ক্ষমতা থেকে যাইনি। আমাকে তাড়ানো হয়েছে। এখান থেকেই মনে হচ্ছে তিনি আর ক্ষমতায় থাকতে পারছেন না।

তৃতীয় যে বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনুস কে নিয়ে পূর্বের ন্যায় আবারও গালি গালাজ করা। সুদখোর হিসেবে আখ্যায়িত করা। কারণ, এখন আবার হঠাৎ করে ড. মুহাম্মদ ইউনুস জাতিসংঘের স্পেশাল উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পাওয়ায় শেখ হাসিনা বুঝতেই পারছেন, কিছু একটা হলে তার কিছু করার থাকবেনা। কোন ভালো মানুষকে তার পাশে পাবেনা। নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভীতিও শেখ হাসিনাকে এখন তাড়িত করছে।

চারিদিকে সুধু অন্ধকার আর অন্ধকার দেখছেন শেখ হাসিনা।একদিকে গত ১৫ বছরের দুর্নীতি, মানুষ হত্যা, সাংবাদিক হত্যা,বিরোধী দলের উপরে জুলুম নির্যাতন, গুম, খুনের তথ্য প্রচারিত হচ্ছে জোরে শোরে। অন্যদিকে এক সময়ের বন্ধু আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশও তাকে দেখছেন একজন চোর ও খুনি হিসেবে। তাই তার বক্তব্যের ধরনও পরিবর্তন হচ্ছে প্রতি ঘন্টায়, প্রতি মিনিটে, প্রতি সেকেন্ডে।

এখন তার জন্য একটি দরজা উন্মুক্ত আর তা হচ্ছে পদত্যাগ করা। হয়তো কোন এক কাক ডাকা ভোরে শুনতে পাবো আওয়ামীলীগের ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার ক্ষমতা হারিয়ে এখন জেলের দরজায় অপেক্ষমাণ।

সময় বদলেছে, বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতি। বদলে যাবে বাংলাদেশের অবৈধ হাসিনা সরকারও ইনশাআল্লাহ। দেশ চলবে দেশপ্রেমিক মানুষের নেতৃত্বে। সেই সময়ের অপেক্ষা। আর তা হতে পারে, মাস ঘন্টা কিংবা সেকেন্ডের মধ্যেও।