সংকটেও দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রি বেড়েছে

 দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে দেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এতে কৃচ্ছ সাধন নীতি গ্রহণ করে সরকার। ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয় লোডশেডিং। ডলার সংকটে পণ্য আমদানির লাগাম টানে সরকার। তেল-গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বসে থাকার হার বৃদ্ধি পায়। তবে এত কিছুর মাঝেও গত অর্থবছর দেশে জ্বালানি তেল আমদানি ও বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হয় ১০৪ দশমিক ৪৬ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৯৬৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ সময় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয় ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৫১১ মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হয় ৪৯৫ দশমিক ৯২ কোটি ডলার বা ৫১ হাজার ১৬৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা।

এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছর দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হয়েছিল ৮৯ দশমিক ৬৮ কোটি ডলার বা সাত হাজার ৮৫৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ওই সময় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়েছিল ৫১ লাখ ৪১ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন। এতে ব্যয় হয়েছিল ৫৪৯ দশমিক ২০ কোটি ডলার বা ৪৭ হাজার ৯৪৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বেড়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৭৮৭ মেট্রিক টন।

বিপিসির তথ্য বলছে, জ্বালানি তেল আমদানির পাশাপাশি বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে গত অর্থবছর। ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছে ৭২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৯১ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছর এর পরিমাণ ছিল ৬৮ লাখ ৫৯ হাজার ১৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর জ্বালানি তেল বিক্রি বেড়েছে চার লাখ ২৪ হাজার ৭৭৩ মেট্রিক টন বা ছয় দশমিক ১৯ শতাংশ।

এর আগে গত অর্থবছরও দেশে জ্বালানি তেল বিক্রি বৃদ্ধি পায়। ২০২০-২১ অর্থবছর জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছিল ৬২ লাখ ৪১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত অর্থবছর তেল বিক্রি বেড়েছিল ছয় লাখ ১৭ হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন বা ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর ২০২০-২১ অর্থবছর জ্বালানি তেল বিক্রি বেড়েছিল সাত লাখ ৬৩ হাজার ৯০ মেট্রিক টন বা ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ জ্বালানি তেল বিক্রি বাড়লেও আনুপাতিক হারে কম বাড়ছে।

২০১৯-২০ অর্থবছর দেশে জ্বালানি তেল বিক্রি হয়েছিল ৫৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪৯০ মেট্রিক টন। এর আগের (২০১৮-১৯) অর্থবছর এ পরিমাণ ছিল ৬৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৪৯ মেট্রিক টন। করোনার কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছর দেশব্যাপী ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। এতে ওই অর্থবছর জ্বালানি তেল বিক্রি কমেছিল ১০ লাখ চার হাজার ৬৫৯ মেট্রিক টন বা ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

বিপিসির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরাবরের মতোই গত অর্থবছর সবচেয়ে বেশি হয়েছে ডিজেল, যার পরিমাণ ছিল ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন। এর পরই রয়েছে ফার্নেস অয়েল, যা বিক্রি হয়েছে আট লাখ ৮০ হাজার ৭০২ মেট্রিক টন। এছাড়া জেট ফুয়েল চার লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন, পেট্রোল চার লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৬ মেট্রিক টন, অকটেন তিন লাখ ৯৩ হাজার ৫৫৭ মেট্রিক টন ও কেরোসিন ৭৭ হাজার ৪৮৭ মেট্রিক টন বিক্রি হয়।

এর বাইরে মেরিন ফুয়েল ১৭ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন, লুব অয়েল ১৬ হাজার ১৭৩ মেট্রিক টন, এলপিজি ১৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন, জুট ব্লেচিং অয়েল (জেবিও) ৯ হাজার ৭৬৩ মেট্রিক টন, তারপিন অয়েল (এমটিটি) পাঁচ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য জ্বালানি পণ্য ছয় হাজার ৮৪৭ মেট্রিক টন বিক্রি হয়। এছাড়া বিপিসি ৬২ হাজার ৩০৪ মেট্রিক টন বিটুমিন বিক্রি করেছে, যা জ্বালানি পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

২০২১-২২ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি হয়েছে ডিজেল, যার পরিমাণ ছিল ৪৮ লাখ ৫০ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। এর পরই ছিল ফার্নেস অয়েল, যা বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ৭১ হাজার ৫৮৬ মেট্রিক টন। এছাড়া জেট ফুয়েল চার লাখ ২৮ হাজার ২৪ মেট্রিক টন, পেট্রোল চার লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন, অকটেন তিন লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ মেট্রিক টন ও কেরোসিন ৮৬ হাজার ১১৭ মেট্রিক টন বিক্রি হয়।

এর বাইরে মেরিন ফুয়েল ৩১ হাজার ২৯২ মেট্রিক টন, লুব অয়েল ১৯ হাজার ৯১১ মেট্রিক টন, এলপিজি ১০ হাজার ৮০৬ মেট্রিক টন, জেবিও ১০ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন, এমটিটি ছয় হাজার ৩৯৯ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য জ্বালানি পণ্য এক হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন বিক্রি হয়। ওই অর্থবছর বিপিসি ৫৫ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন বিটুমিন বিক্রি করেছে, যা জ্বালানি পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরও সবচেয়ে বেশি হয়েছে ডিজেল, যার পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ মেট্রিক টন। এর পরই ছিল ফার্নেস অয়েল, যা বিক্রি হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৩২ মেট্রিক টন। এছাড়া জেট ফুয়েল দুই লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৪ মেট্রিক টন, পেট্রোল তিন লাখ ৭৮ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন, অকটেন তিন লাখ তিন হাজার ৯১৭ মেট্রিক টন ও কেরোসিন এক লাখ এক হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন বিক্রি হয়।

এর বাইরে মেরিন ফুয়েল ১৩ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন, লুব অয়েল ২০ হাজার ৭০৭ মেট্রিক টন, এলপিজি ১২ হাজার ৯ মেট্রিক টন, জেবিও ১১ হাজার ৭০৯ মেট্রিক টন, এমটিটি তিন হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য জ্বালানি পণ্য ৯৭৪ মেট্রিক টন বিক্রি হয়। ওই অর্থবছর বিপিসি ৫৮ হাজার ১৫০ মেট্রিক টন বিটুমিন বিক্রি করেছে, যা জ্বালানি পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

শেয়ার বিজ