- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:০৭
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সর্বশেষ ম্যাচে ভারতের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলঙ্কা। দলটিকে ৩১৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছে ভারত। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড।
এর আগে ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪০২ রান করে ২৯০ রানের বিশাল জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এত দিন নিউজিল্যান্ডের ২৯০ রানের জয়ই ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে রানের দিক থেক সেরা।
২০১৫ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১৭ রান করে ২৭৫ রানের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৯৯ রান করে ২৭২ রানের জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
রোববার থিরুভনন্তপুরমের গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরু থেকেই মারমুখি ব্যাটিং করছিলেন দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শুবমান গিল। দ্রুতগতিতে রান তুলছিলেন দুজন। উদ্বোধনী জুটিটাও ৫০ পেরিয়ে ছুটছিল ১০০-এর দিকে। তবে শেষপর্যন্ত ১০০ আর ছোঁয়া হয়নি সেই জুটির। দলীয় ৯৫ রানের মাথায় বিদায় নেন দলপতি রোহিত। আউট হওয়ার আগে ৪৯ বলে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
এরপর তিনে নামা বিরাট কোহলি এবং অন্য ওপেনার গিল মিলে রানের চাকা সচল রাখেন। লঙ্কান বোলারদের পিটিয়ে ছাতু বানাচ্ছিলেন দুজনই। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে বেশ তাড়াতাড়ি রান তুলছিলেন গিল এবং কোহলি। দেখতে দেখতে শতকের দেখাও পেয়ে যান গিল। ১৪ চার এবং ২ ছক্কায় সাজানো ৯৭ বলে ১১৬ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে দলীয় ২২৬ রানের মাথায় আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান গিল। তাতে কোহলি-গিলের ১৩১ রানের বিশাল জুটিটাও ভাঙে।
এরপর চারে নামা শ্রেয়াস আইয়ারকে নিয়ে এগোতে থাকেন কোহলি। দুজনই ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। ভারতীয়দের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন লঙ্কান বোলাররা। কোহলির বেধড়ক পিটুনি খেয়ে একের পর এক বোলার পরিবর্তন করছিলেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তাতে অবশ্য লাভ হয়নি মোটেও। কোহলির বিধ্বংসী ব্যাটিং চলছিলই। শেষমেশ আবারো সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান কোহলি। যা নিজের ক্যারিয়ারের ৭৪তম এবং চলতি সিরিজের দ্বিতীয়। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কোহলিকে যেন থামাতেই পারছে না কেউ।
সেঞ্চুরি ছুঁয়ে যেন আরো বেশি তেঁতে উঠলেন কোহলি। ৮৫ বলে ১০০ ছোঁয়া কোহলি শেষ ২৫ বলে রান করেছেন ৬৬! একদম যেন সুপারসনিক প্লেনে চড়ে শেষপথটা পাড়ি দিয়েছেন। শেষদিকে আরো কয়েকটা ওভার বাকি থাকলে হয়ত ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির দেখাটাও পেয়ে যেতে পারতেন।
যাইহোক কোহলির এমন বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ভর করেই রানের এভারেস্ট গড়ে তুলেছে ভারত। ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৯০ রান করে ভারত। শেষপর্যন্ত অপরাজিত থেকে ১১০ বলে ১৬৬ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন কোহলি। এছাড়া ৩২ বলে ৩৮ রান করেছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। দুজনের ১০৮ রানের জুটি ভেঙ্গেছিল দলীয় ৩৩৬ রানের মাথায়। বাকি সময়টায় অন্য ব্যাটাররা বেশ ভালোভাবেই সঙ্গ দিয়েছেন কোহলিকে।
শ্রীলঙ্কান বোলারদের প্রায় সবাই ছিলেন বেশ খরুচে। এরই মাঝে ২টি করে উইকেট নেন কাসুন রাজিথা এবং লাহিরু কুমারা। ১টি উইকেট নেন চামিকা করুণারত্নে।
৩৯১ রানের পাহাড় ডিঙ্গানোর লক্ষ্যে নেমে শুরু থেকেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় বোলারদের বোলিং তোপে দিশেহারা হয়ে যান লঙ্কান ব্যাটাররা। তাদের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতো। পুরো ব্যাটিং অর্ডারের মাত্র তিনজন ছুঁতে পেরেছেন দুই অঙ্কের কোটা। বাকিরা সবাই আউট হয়েছেন এক অঙ্কের রানে। সর্বোচ্চ ২৭ বলে ১৯ রানের ইনিংসটি খেলেন ওপেনার নুয়ানিদু ফার্নান্দো।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে হারাতে ২২ ওভার শেষে মাত্র ৭৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় বোলাররাও ছিলেন দুর্দান্ত। মাত্র ৩২ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। এছাড়া ২টি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ শামি এবং কুলদীপ যাদব।
এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করল ভারত। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল ভারত।