- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:৪৬, আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৫
ফাইনালের দৌড়ে সবার থেকে এগিয়ে গেল ভারত। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে এক পা দিলো রোহিত শর্মার দল। বিপরীতে থেমেছে শ্রীলঙ্কার জয়ের দৌড়। টানা ১৩ ম্যাচে জয়ের পর হারের তেঁতো স্বাদ পেল দাসুন শানাকার দল। একই সাথে কঠিন হয়ে গেল ফাইনাল খেলার সমীকরণ।
ব্যর্থ হলো দুনিথ ওয়াল্লালাগের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স। ব্যাটে-বলে সমান তালে পারফর্ম করেও দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। বল হাতে ভারতের ইনিংসের মেরুদণ্ড ভেঙে নেয়া ৫ উইকেট আর ব্যাট হাতের অপরাজিত ৪২ রান, বৃথা গেল সব। ২১৪ রান তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কা হেরেছে ৪১ রানে।
এর আগে অবশ্য ভারতকে অল্প রানে আটকে দিয়ে সহজ জয়ের স্বপ্নই দেখছিল শ্রীলঙ্কা। আধুনিক ক্রিকেটের বিবেচনায় সহজ লক্ষ্যও বলা যায়। তবে ওই স্বপ্ন কঠিন করে তোলে ভারতীয় বোলাররা। দাঁড়াতেই দেয়নি লঙ্কান ব্যাটারদের, নিয়মিত বিরতিতে তুলে নিয়েছেন উইকেট। দলের সংগ্রহ তিন অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই হারিয়ে ফেলে ৬ উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৫ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা। যার ২টি নেন জসপ্রীত বুমরা। তৃতীয় ওভারে পাথুম নিশানকাকে ৬ রানে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তিনি। কুশল মেন্ডিসকেও (১৫) ঝুলিবন্দী করেন এই পেসার। অষ্টম ওভারে দিমুথ করুনারত্নেকে সাজঘরের পথ দেখান মোহাম্মদ সিরাজ। ১৮ বল খেলে মাত্র ২ রান আসে তার ব্যাটে।
ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালান সাদিরা সামারাবিক্রমা ও চারিথ আসালাঙ্কা। গড়ে তোলেন ৬২ বলে ৪৩ রানের জুটি। দু’জনকেই ফেরান কুলদীপ যাদব। প্রথমে সাদিরাকে ফিরিয়ে ৪৩ রানের এই জুটি ভাঙেন তিনি। আগের তিন ম্যাচে দুই ফিফটি হাঁকানো এই ব্যাটার ফেরেন ৩১ বলে ১৭ রান করে।
আরো পাঁচ রান যোগ হতেই ফেরেন আসালাঙ্কাও। ৩৫ বলে ২২ রান করে আসে তার ব্যাটে। ১৯.২ ওভারেই ৫ উইকেট হারাত লঙ্কানরা। দলের রান ১০০ ছোঁয়ার আগে দাসুন শানাকা ফেরেন ৯ রান করে। সেখান থেকেই দলকে টানেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও ওয়াল্লালাগে।
দু’জনে মিলে ভাঙা স্বপ্ন আবারো জোড়া লাগাতে শুরু করেন, দলকে পাড় করান ১৫০ রানের গণ্ডি। দলের রান যখন ১৬২, তখন রবীন্দ্র জাদেজা ভাঙেন এই জুটি। ৬৩ রানের জুটি ভাঙে সিলভার বিদায়ে। দ্রুত ফেরেন থিকসানাও (২)। পরের ওভারে জোড়া উইকেট তুলে নিয়ে লঙ্কানদের পরাজয় নিশ্চিত করেন কুলদীপ। ১০ রানে ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
একা লড়াই করে দলকে জেতাতে পারেননি ওয়াল্লালাগে। ৪৬ বলে ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।
এদিকে ভারতের হয়ে ৪ উইকেট নেন কুলদীপ। আগের ম্যাচেই পাকিস্তানের সাথে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন এই স্পিনার। জোড়া উইকেট নেন বুমরাহ ও জাদেজা।
এর আগে মুদ্রার উল্টা পিঠ দেখে ভারত, কোনোমতে পাড় করে ২০০ রানের গণ্ডি। আগের দিনেই পাকিস্তানের বিপক্ষে যেখানে তুলেছিল রেকর্ড ৩৫৬ রান, সেখানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অলআউট হয় ৪৯.১ ওভারে মাত্র ২১৩ রানে। লঙ্কান স্পিনারদের বিপক্ষে একেকটা রান হয়ে উঠে সোনার চেয়ে দামি।
শুরুটা করেছিলেন ওয়াল্লালাগে, শেষটা টানলেন আসালাঙ্কা। এই দুই স্পিনার মিলেই ধস নামিয়েছেন ভারত শিবিরে। ইনিংসের ১০ উইকেটের ৯টিই নিয়েছেন তারা। অপরটাও আরেক স্পিনার থিকসানার। সতীর্থদের এমন কীর্তি দেখে হাসারাঙ্গা হয়ত আক্ষেপ করছেন টিভির সামনে বসে।
অবশ্য টসে জিতে কলম্বোতে ভালো শুরু পায় ভারত। ১১ ওভারেই ৮০ রান আসে উদ্বোধনী জুটিতে। তবে বিপত্তি বাধে এর পরেই। ১২তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই নিজের প্রথম বলে ভারতের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ওয়াল্লালাগে। শুভমান গিলকে ফেরান ১৯ রানে। এরপর মাঠে আসেন কোহলি, তবে তাকেও টিকতে দেননি ওয়াল্লালাগে।
নিজের পরের ওভারে এসেই ফেরান এই ব্যাটারকে। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কোহলি এদিন পারেননি দুই অঙ্কে পৌঁছাতে। আউট হন ১২ বলে ৪ রান করে। ৯০ রানে ২ উইকেট হারায় ভারত।
পরের ওভারে, তথা নিজের তৃতীয় ওভারে এসেই ওয়াল্লালাগে ফেরান ফিফটি তুলে নেয়া ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করা রোহিত আউট হন ৪৮ বলে ৫৩ করে। ভালো শুরুর পরও মাত্র ১১ রানের ভেতর ৩ উইকেট হারিয়ে তাই চাপে পড়ে যায় ভারত।
৯১ রানে ৩ উইকেট হারানো ভারতের ইনিংসটা গুছিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন লোকেশ রাহুল ও ইশান কিশান। তবে ৬৩ রান যোগ হতেই ভাঙে এই জুটি। আবারো ওয়াল্লালাগের আঘাত, ফেরান রাহুলকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকানো এই ব্যাটারকে ইনিংস বড় করতে দেননি। ৪৪ বলে ৩৯ রান আসে রাহুলের ব্যাটে।
৩৫তম ওভারে ব্যক্তিগত পঞ্চম উইকেট পূরণ করেন ওয়াল্লালাগে। তুলে নেন হার্দিক পান্ডিয়ার উইকেট। ১৮ বলে ৫ রান করেন হার্দিক। মাঝে ইশান কিশানকে নিজের প্রথম উইকেটে পরিনত করেন আসালাঙ্কা, ৬১ বলে ৩৩ রান করেন ইশান।
আসালাঙ্কা এরপর ফেরান জাদেজা (৪), বুমরা (৫) এবং কুলদীপকে ফেরান কোনো রান করার আগেই। ফলে ৩ উইকেটে ১৫৪ থেকে ১৮৬ রানে ৯ উইকেট হারায় ভারত। অর্থাৎ ওই সময়ে মাত্র ৩২ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেয় শ্রীলঙ্কা।
তবে শেষ উইকেটে বেশ লড়াই করে অক্ষর প্যাটেল। মোহাম্মদ সিরাজকে একপাশে রেখে রান বাড়াতে থাকেন তিনি। শেষ ওভারে এসে আউট হওয়ার আগে করেন ৩৬ বলে ২৬ রান।