বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (এনআইপি) বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদল ১২ নভেম্বর ঢাকায় আসছে। প্রতিনিধিদলটি ১৫ নভেম্বর সরকারের সংশ্লিষ্ট তিনজন সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে শ্রম আইন সংশোধনের পরের পরিস্থিতি, শিশুশ্রম বিলোপ ও শ্রমিকবিরোধী সব ধরনের সহিংসতা নিরসনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
ইইউ প্রতিনিধিদলটি এমন এক সময়ে শ্রম খাতের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করতে আসছে, যখন ন্যূনতম মজুরির দাবিতে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশ ও ইইউর এই বৈঠক চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে হওয়ার কথা ছিল। তবে কয়েক দফায় পিছিয়ে তা ১৫ নভেম্বর করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী ঢাকায় আসছে ইইউ প্রতিনিধিদলটি।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, শ্রম খাতের বিকাশ নিয়ে কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনার সময় ন্যূনতম মজুরি নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি প্রাসঙ্গিকভাবেই আসবে।
ব্রাসেলসের একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পাওলা প্যাম্পালোনির নেতৃত্বে ইইউর প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফরের সময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবে।
জানতে চাইলে শ্রম ও কর্মসংস্থানসচিব মো. এহছানে এলাহী গতকাল সোমবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ১৫ নভেম্বর আমাদের আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে। মূলত পররাষ্ট্রসচিব, বাণিজ্যসচিব এবং আমার সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইইউর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা প্যাম্পালোনির নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি আলোচনা করবে।’ তিনি বলেন, মূলত বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কতটা অগ্রগতি হলো, তা নিয়ে আলোচনা হবে।
ইইউ প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন সরকারি কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, শ্রম আইন সংশোধনের পরের পরিস্থিতি, রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) শ্রম অধিকার সুরক্ষা, সব ধরনের শিশুশ্রম বিলোপ, শ্রমিকবিরোধী সব ধরনের সহিংসতা, নিপীড়ন, হয়রানি, অন্যায্য শ্রম চর্চার নিরসন এবং শ্রম ইউনিয়নবিরোধী তৎপরতা রোধ, শ্রমিকদের ন্যায়সংগত ট্রেড ইউনিয়ন চর্চায় সব ধরনের প্রতিবন্ধকতার অপসারণ এবং ন্যূনতম মজুরি ও বাধ্যতামূলক শ্রম বন্ধের মতো বিষয়গুলোতে আইএলও সনদ অনুসমর্থনের পরিস্থিতি।
বাংলাদেশের শ্রম অধিকার সুরক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারের ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে শ্রম খাতের উন্নয়নে এনআইপি গৃহীত হয়। ২০২৬ সালের মধ্যে এই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং অন্যান্য উন্নয়ন অংশীদারের সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশের এনআইপি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে ২০২১ সালে। এখন শ্রম খাতের এনআইপি বাস্তবায়নে কতটা অগ্রগতি হলো, তা নিয়ে আলোচনা করতেই আসছে ইইউ প্রতিনিধিদলটি।