শ্রমিক ফেডারেশনের কোনো কল্যাণ তহবিল নেই: শাজাহান খান

www.dw.com/bn

15 May 2020

লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় সারা দেশের পরিবহন শ্রমিকরা চরম সংকটে পড়েছেন৷ নিজেদের কল্যাণে প্রতিদিন দেওয়া চাঁদার হিসাব নেই তাদের কাছে, সেই তহবিল থেকে সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷

যদিও সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান৷

ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়ন নিজেদের কল্যাণ তহবিল থেকে সদস্য শ্রমিকদের মৃত্যুতে এককালীন অনুদান ও দাফনের খরচ বা অসুস্থতায় চিকিৎসার খরচ, বেকার হয়ে পড়লে অনুদান, সন্তানদের বিবাহ ইত্যাদি নানা সময়ে সহায়তা করে থাকে৷ কিন্তু করোনার জন্য তো টাকা রাখার কথা ছিল না৷

‘‘দেড় মাস ধরে গাড়ি বন্ধ৷ এ সময়ে প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়ন নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে৷’’

শ্রমিকরা ফেডারেশনকে প্রতিদিন যে চাঁদা দেয় এবং গাড়ি প্রতি যে টাকা তোলা হয় সেসব আয়-ব্যয়ের হিসাব বা অডিট করা হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কোনো কল্যাণ তহবিল নেই৷ ফেডারেশন কল্যাণ তহবিলের টাকা সংগ্রহ করে না৷ প্রতিটি বেসিক ইউনিয়ন থেকে মাসে ৫০০ করে টাকা সংগ্রহ করে ফেডারেশন নিজের খরচ চালায়৷ তাই যারা বলেন ফেডারেশনের কল্যাণ তহবিল আছে তারা মিথ্যা-ভুল কথা বলেন৷

‘‘মূলত, টার্মিনালভিত্তিক বা যেসব এলাকায় শ্রমিক ইউনিয়ন কিংবা মালিক সমিতি আছে, তারা টাকা সংগ্রহ করে৷ আমি যতদূর জানি, মালিক সমিতি নিজস্ব শ্রমিকদের টাকা দিয়েছে৷ এমনকি শ্রমিক ইউনিয়নগুলোও গচ্ছিত তহবিল উজাড় করে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে৷’’

বরং পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে দাবি করেন সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এই প্রেসিডিয়াম সদস্য৷

সংবাদমাধ্যম ও নানা সামাজিক মাধ্যমে শ্রমিকদের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সেগুলো নিয়ে কথা না বলে শ্রমিকদের হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা খবর প্রচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷

বাংলাদেশে ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিক আছে৷ যাদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ দৈনিক চুক্তিতে কাজ করেন৷ অর্থাৎ, গাড়ি চললে বেতন, না চললে বেতন নেই৷

করোনা ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক বা জাতীয়ভাবে যে বিপর্যয়ের মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সেই সময়ে সরকার ও পরিবহন মালিকদের ওইসব শ্রমিকের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের আরেক আলোচক গণসংহতি আন্দোলন-এর প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি৷

বলেন, ‘‘এতদিন যে শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে মালিকদের ব্যবসা চললো, তারা তো আয় করেছে৷ এখন বিশেষ এ সময়ে তাদের উচিত ছিল শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়া৷ সরকারেরও এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়ার দরকার ছিল, যাতে মালিকরা দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে না পারে৷’’

বাংলাদেশে পরিবহন খাতে বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজি৷ পরিবহন শ্রমিকদের প্রতি পদে পদে চাঁদা দিতে হয়৷ প্রতিদিন কল্যাণের নামে তাদের কাছ থেকে আদায় করা ওই চাঁদা বিপদের এ সময়ে তাদের কোনো কাজেই আসছে না৷

শাজাহান খানও স্বীকার করে নেন, পরিবহন সেক্টরে মালিক সমিতি বা ইউনিয়নের নামে চাঁদাবাজি হয়৷

তিনি বলেন, ‘‘চাঁদা আর চাঁদাবাজি তো এক নয়৷ সংগঠন হিসেবে সদস্যদের থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা নেওয়ার অধিকার আমাদের আছে৷ কিন্তু নিয়মের বাইরে যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের দায়িত্ব তো আমরা নিতে পারি না৷ শ্রমিক ইউনিয়নের নামে আমরা যে টাকা নেই, সেটা শ্রমিকদের কল্যাণেই খরচ করি৷

‘‘প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে শ্রমিকদের ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আমরা তাদের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি এবং তারা দাঁড়িয়েছে৷ ঢাকা মহানগরে কিছু অসুবিধা হলেও বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ইউনিয়ন থেকে শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে সাহায্য করা হচ্ছে৷’’

আলোচনায় জোনায়েদ সাকি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ‍উল্লেখ করে বলেন, পরিবহন খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়৷ নামে-বেনামে সংগঠন তিনশটির বেশি৷

‘‘এই সংগঠনগুলো শুরু থেকে উদ্যোগ নিলে শ্রমিকরা লকডাউন ভেঙে রাস্তায় আন্দোলনে নামতো না৷’’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীর বরাত দিয়ে জুনায়েদ সাকি বলেন, ফেডারেশনের বর্তমান তহবিল আছে চারশ কোটি টাকা৷ এই তথ্য সঠিক কিনা সেই প্রশ্ন তিনি ছুঁড়ে দেন শাজাহান খানকে৷

জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘‘শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আর শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এক নয়৷ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল আমাদের নিয়ন্ত্রণে৷ কিন্তু শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন সরকার নিয়ন্ত্রণ করে৷ সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ ফাউন্ডেশনে চারশ কোটি টাকা আছে৷ আমাদের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে নয়৷ ওটা সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে৷ মানুষ এ দুটোকে এক মনে করে ভুল করে৷’’

এসএনএল/এসিবি