- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ জুলাই ২০২৩, ২২:০৫, আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৩, ২২:৫৩
সাকিব ফিরতেই বাংলাদেশের হার দেখে ফেলছিল অনেকেই। কারণটাও স্পষ্ট, কঠিন ছিল সমীকরণ। তবে হাল ধরেন দুই তরুণ সেনানী; তাওহীদ হৃদয় আর শামীম পাটোয়ারী। সেখানেই বদলে যায় খেলার গতিপথ, নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় টাইগাররা। এরপর আর পথ হারায়নি শেষ ওভার নাগাদ।
তবে শেষ ২ রান নিতেই যেন ঘাম বেড়িয়ে গেলো বাংলাদেশের। ৫ বলে ২ রানের সমীকরণ মেলাতে গিয়ে করিম জানাতকে হ্যাট্রিক উপহার দিয়ে বসলো টাইগাররা। ছড়ালো রোমাঞ্চ, ম্যাচ গড়ালো ২ বলে ২ রানে। তবে পঞ্চম বলে চার হাঁকিয়ে সব শঙ্কার ইতি টানেন শরিফুল। বাংলাদেশ জিতে যায় ১ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটে।
৩২ বলে ৪৭ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। ইনিংসে ছিল তিন চারের মার আর দুই ছক্কা। ম্যাচ সেরাও হন তিনি। এই জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
এইদিন লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ফের ব্যর্থ হয় উদ্বোধনী জুটি। ভেন্যু পরিবর্তন, ফরম্যাট পরিবর্তন, পরিবর্তন এসেছে উদ্বোধনী জুটিতেও; তবে বদলায়নি চিত্র, বদলায়নি পুরনো গল্প। আবারো ফারুকীর কাছে পরাস্ত উদ্বোধনী জুটি। ওয়ানডে সিরিজের পর প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও ব্যর্থ।
প্রথম ওভারের শেষ বলেই ভেঙেছে উদ্বোধনী জুটি। এর আগে স্কোরবোর্ডে আসে মোটে ৫ রান। ফারুকী বলে উড়ে যায় রনি তালুকদারের স্ট্যাম্প। আউট হবার আগে কেবল একটা বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন তিনি। এরপর ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করে লিটন-শান্ত জুটি। ছক্কা হাঁকিয়ে প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে তা আর হয়নি, বাধা হয়ে দাঁড়ান মুজিবুর রহমান।
পাওয়ার প্লের শেষ বলে মুজিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন শান্ত। আউট হবার আগে তার ব্যাটে আসে ১২ বলে ১৭ রান। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান করতে পারে বাংলাদেশ। পরের ওভারেই ওমরজাইয়ের আঘাত, এবার সাজঘরের পথ ধরেন লিটন। ১৯ বলে ১৮ করে ফেরেন রশিদকে ক্যাচ দিয়ে।
ইনিংস গুছিয়ে আনার চেষ্টা করেন সাকিব। তবে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকে বৃষ্টিতে। তবে পরের দুই ওভারে ১৯ রান যোগ করে লড়াই জারি রাখেন। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৬৪ রান। ম্যাচ জিততে শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৯১ রান।
তবে ১১তম ওভারের প্রথম বলেই বাঁধে বিপত্তি। যখন মনে হচ্ছিলো সাকিবের ব্যাটে লড়ছে বাংলাদেশ, তখনই তাকে ফেরান ফরিদ মালিক। ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে করিম জানাতকে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। আউট হবার আগে করেন ১৭ বলে ১৯ রান।
১৩তম ওভারে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তাওহীদ হৃদয় আর শামীম পাটোয়ারীর ব্যাটে ভর করে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছে টাইগাররা। দু’জনে মিলে আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের এই ওভারে ২১ রান তুলেন। সেই ওভারেই শতক স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
এরপর ফারুকির করা ১৭তম ওভারে ১৬ রান তুলে সমীকরণ হাতের মুঠোয় নিয়ে আসেন দুজনে। শেষ ১৮ বলে তখন ১৯ রান প্রয়োজন। এমন সময় ফেরেন শামিম। রাশিদকে মারতে গিয়ে উইকেট কিপারকে ক্যাচ দেন তিনি। ফলে ভাঙে হৃদয়ের সাথে তার গড়ে তোলা ৭৩ রানের জুটি। আউট হন ২৫ বলে ৩২ করে।
শেষ ওভারে বল সমান ৬ রান প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে যা আরো সহজ করে তুলেন সাতে নামা মিরাজ। তবে পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। পরের বলেই তাসকিন ফিরলে জমে উঠে ম্যাচ। হ্যাট্রিক বলে নাসুমও ধরাশায়ী। হ্যাট্রিক তুলে নেন করিম জানাত।
এর আগে পাওয়ার প্লেতে ৪ উইকেট হারানোর পরও মানসম্মত সংগ্রহ পায় আফগানিস্তান। যেখানে বড় ভূমিকা রাখে শেষ চার ওভারে তাদের তোলা ৫৩ রান। সব মিলিয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান তুলে নেয় সফরকারীরা।
এইদিন তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই নাসুম আহমেদকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন জাজাই। তবে পরের বলেই তার প্রায়শ্চিত্ত করেন নাসুম, জাজাইকে দেখান সাজঘরের পথ। ১০ বলে ৮ রান করে তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ১৬ রানে ভাঙে আফগানিস্তানের উদ্বোধনী জুটি।
পরের ওভারেই আরেক ওপেনার গুরবাজকে ফেরান তাসকিন। এবারো যেন প্রতিশোধের গল্প। তাসকিনকে জোড়া চার মেরে মোমেন্টাম ধরে রাখতে চেয়েছিলেন গুরবাজ। তবে তা আর হলো কই! ১১ বলে ১৬ রান করেন গুরবাজ। ৪ ওভারে ২৬ রানে ২ উইকেট হারায় আফগানিস্তান।
পরের ওভারেই আরো একটা উইকেট হারায় সফরকারীরা, এবার ফেরেন ইবরাহীম জাদরান। এবার শরিফুলকে ছক্কা মেরে পরের বলেই ফিরেছেন তিনি। লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৬ বলে ৮ রান করে। এরপর করিম জানাত আর নাবি মিলে চেষ্টা করেন ইনিংস মেরামতের। তবে এবার বাঁধা হয়ে দাঁড়ান সাকিব আল হাসান।
প্রথম ওভার করতে এসে করিম জানাতকে ফেরান সাকিব। ৯ বলে ৩ করে শান্তকে ক্যাচ দেন তিনি। তাতে নাবির সাথে ভাঙে তার ১৮ বলে ২০ রানের জুটি। ৫২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও চলতে থাকে নাবির ব্যাট। এবার তাকে সঙ্গ দেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ৩৮ বল থেকে যোগ করেন ৩৫ রান।
১৪তম ওভারে জুটি ভেঙে ফেরেন নাজিবুল্লাহ। ২৩ বলে ২৩ করা এই ব্যাটারকে ফেরান মেহেদী মিরাজ। তবে নাবি তখনো খেলছিলেন নিজের মতো করে। এবার সঙ্গী হিসেবে পান ওমরজাইকে। ১৬তম ওভারে দলীয় শতক পূরণ করে আফগানিস্তান।
শতক পূরণের পর আফগানরা খেলতে থাকে হাত খুলে, রান তুলতে থাকে দ্রুত গতিতে। জমে উঠে দুজনের জুটি। ১৭ ও ১৮তম ওভারে তাসকিন ও মোস্তাফিজ উভয়েই দেন সমান ১৪ করে রান। সাকিব আল হাসান ১৯তম ওভারের শেষ বলে এই জুটি ভাঙলেন বটে, তবে তিনিও রান দিলেন ১৪।
ওমরজাই ফেরেন ৪ ছক্কায় ১৮ বলে ৩৩ রান করে। নাবির সাথে ভাঙে তার ৩২ বলে ৫৬ রানের জুটি। শেষ ওভারে এসে অর্ধশতক তুলে নেন নাবি, শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৪০ বলে ৫৪ রানে। শেষ ওভারে রাশিদ খান ফেরেন ২ বলে ৩ করে।
২৬ রানে ২ উইকেট নেন সাকিব। নাসুম, তাসকিন, শরিফুল, মোস্তাফিজ ও মিরাজ নেন একটি করে উইকেট।