শেখ হাসিনা কীভাবে ভারতে আছেন, জানতে চাইলেন ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত

শেখ হাসিনা ও ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন

ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে আচমকাই আবির্ভূত শেখ হাসিনা। পূর্ব ভারতের এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ নিয়ে বিজেপির নিরন্তর অভিযোগের জবাবে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) নেতা হেমন্ত সরেন। বিজেপির কাছে সরাসরি জানতে চাইলেন, হাসিনাকে কারা কী কারণে এ দেশে ঢুকতে দিয়েছে? তা হলে কি ধরে নিতে হবে, বিজেপির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো গোপন বোঝাপড়া রয়েছে?
সরেনের তোলা প্রশ্নের কোনো জবাব অবশ্য বিজেপির শীর্ষ স্তরের কেউ দেননি।

ঝাড়খন্ডে জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারকে হারিয়ে ক্ষমতা দখল করতে বিজেপি এবার মরিয়া। সেই কাজে বিজেপি অনেক দিন আগে থেকেই কোমর কষে নেমেছে। বড়ভাবে ইস্যু করেছে অনুপ্রবেশকে। নির্বাচন ঘোষণার অনেক আগেই বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশের প্রশ্নে লোকসভায় সরব হয়েছিলেন ঝাড়খন্ডের গোড্ডা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত বিজেপি নেতা নিশিকান্ত দুবে।

দুবে বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকারীরা রাজ্যের আদিবাসী এলাকায় ঘাঁটি গাড়ছে। তারপর তারা আদিবাসী তরুণীদের বিয়ে করছে। এভাবে তারা রাজ্যের আদিবাসী এলাকায় জনবিন্যাসে বদল ঘটিয়ে দিচ্ছে।

বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষ নেতারাও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকে বড় করে তুলে ধরছেন। দলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের দিনও অমিত শাহ অনুপ্রবেশের প্রশ্নে সরেন সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘আপনারা অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। তাদের আপনারা ভোট ব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করছেন। আমরা ক্ষমতায় এসে এই তুষ্টিকরণের রাজনীতি শেষ করে দেব। বিজেপি প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে ফেরত পাঠাবে। নতুনভাবে, একেবারে শুরু থেকে গড়ে তুলবে ঝাড়খন্ডকে।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তাঁর প্রচারে রাজ্যের শাসক জোটকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থক বলে চলেছেন। তাঁর অভিযোগ, অনুপ্রবেশকারীদের মামলা আদালতে গেলে প্রশাসন তা মেনে নেয় না। কারণ, প্রশাসনেই অনুপ্রবেশ ঘটে গেছে। মোদি বলেছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা রুটির সঙ্গে বেটিও ছিনিয়ে নিচ্ছে। ভুগছে জনজাতি সমাজ।’

সরকার গড়তে বিজেপি এবার আদিবাসী সমাজে জেএমএমের প্রভাব কমাতে বদ্ধপরিকর। সেই কারণেই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নির্বাচনী ইস্যু করে তুলেছে। সরেনের জবাব তারই পাল্টা এবং তা করতে গিয়ে গত রোববার তিনি সরাসরি টেনে আনেন ভারতে শেখ হাসিনার বসবাসের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে।

রাজ্যের এক নির্বাচনী জনসভায় সরেন বলেন, ‘বিজেপি নেতারা বারবার বাংলাদেশের অনুপ্রবেশ নিয়ে কথা বলছেন। আমি জানতে চাই, ওই বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিজেপির কোনো অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া আছে কি? তা যদি না থাকে, তা হলে শেখ হাসিনা কীভাবে ভারতে চলে আসতে পারেন ও সেই থেকে ভারতেই থাকছেন? দয়া করে তা বলবেন কি?’

এরপরই হেমন্ত সরেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটলে, তা ঘটছে বিজেপিশাসিত রাজ্য দিয়েই। তারা নিজেরাই সে কথা কবুল করছে।

ঝাড়খন্ড জয় করতে বিজেপি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের কথাও শুনিয়েছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে তারা বাধা পেয়েছে আদিবাসী সমাজের কাছ থেকে। সেই কারণে মোদি-শাহ জানিয়েছেন, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করা হলেও আদিবাসী সমাজ তার আওতার বাইরে থাকবে।

prothom alo

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here