শেখ হাসিনা ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি

শেখ হাসিনা ইস্যুতে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি

ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। রোববার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দু’জনের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রণয় ভার্মা এ কথা জানান।

তিনি বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে এটি ছিল নিয়মিত বৈঠক। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে নিয়মিত বৈঠকের অংশ এটি। যখন আমরা আলোচনা করি, স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কের সব বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। বেশ ইতিবাচক বৈঠক হয়েছে।

প্রণয় ভার্মা আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল ও ইতিবাচক সম্পর্কে আগ্রহী ভারত। আমরা বিশ্বাস করি আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। আমরা দুই দেশের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারত বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল, বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভরশীল। পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়া দরকার।

বৈঠকে ঢাকা-দিল্লি ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) নিয়ে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। ভারত এটি দ্রুত করতে চায়।

ভারতের পর্যটক ভিসা পুনরায় চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন তাদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। কারণ আমাদের জনবল কম। আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে এটি শুরু করা সম্ভব হবে। তবে এখন যাদের জরুরি– মেডিকেল ও স্টুডেন্টদের ভিসা দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে যারা ভারতে গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের ভিসার আবেদন করছেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।

প্রণয় ভার্মা বলেন, আমরা চাই না এ ধরনের ভ্রমণে কেউ কষ্ট পাক। সেজন্য সর্বোচ্চ যতটুকু সম্ভব জরুরি প্রয়োজনীয় ভিসা দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠক নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যা জানালেন

বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ভিসার বিষয়টি জোর দেওয়া হয়েছে। ভারত জানিয়েছে, লোকবলের অভাবে এ সমস্যা হচ্ছে। তবে জরুরি চিকিৎসা ভিসা দিচ্ছে। ভবিষ্যতে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৮ সালে যে ভ্রমণ-সংক্রান্ত সমঝোতা রয়েছে, তা নবায়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত জুলাইয়ে এর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় কিছু জেলে বাংলাদেশে আটকা পড়েছেন, তাদের জন্য কনস্যুলার সুবিধা চেয়েছে। বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতে আটক বাংলাদেশি জেলেদের দ্রুত মুক্তি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, বৈঠকে এফওসি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সর্বশেষ এফওসি ভারতে গত বছর হয়েছিল। এ বছর বাংলাদেশে হওয়ার কথা। বৈঠকটি যেন এ বছরের মধ্যে হয়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এফওসি ঢাকায় অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এটি একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে যখন অনুরোধ আসবে, তখন আমরা এটি দেখব। এখনও কোনো অনুরোধ আসেনি।

ভারত সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে দেশটিতে আছেন। এ নিয়ে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানে কিনা– জানতে চাইলে তৌফিক হাসান বলেন– না, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না।

সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতীয় ভিসা কার্যক্রম, ভারতীয় ঋণ চুক্তির আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে কর্মরত ভারতীয় লোকজনের বাংলাদেশে ফেরার পরিস্থিতি কী, নবায়নকৃত ট্রাভেল অ্যারেঞ্জমেন্টের পুনঃনবায়ন, বাংলাদেশে আটক জেলেদের বিষয়ে দ্রুত কনস্যুলার সুবিধা দেওয়া, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ভারতে আটক বাংলাদেশের জেলেদের ফেরত পাঠানো এবং দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকসহ নানা ধরনের নিয়মিত বৈঠক শুরুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

samkal