শূন্যতা পূরণে বিকল্প নেই

অবসর না নিলেও তামিম ইকবাল টেস্ট খেলেন না অনেক দিন হলো। তিনি জাতীয় দলে থাকাকালেই বিকল্প ওপেনার খেলাতে হয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্ত ও সাদমান ইসলাম ওপেনিং জুটি ছিলেন কয়েকটি টেস্টে। মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান নতুন করে যোগ হওয়ায় বিকল্প বেড়েছে ওপেনিং জুটিতে। সেরা ছন্দ থাকার পরও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না জয়। যদিও তারা কেউই তামিমের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেননি। এখন সাকিব আল হাসান, মাহমু

শূন্যতা পূরণে বিকল্প নেইদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমের বিকল্পও খুঁজতে হচ্ছে নির্বাচকদের। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও হাবিবুল বাশার মনে করেন, এই তারকা ক্রিকেটারদের বিকল্প পাওয়া যাবে না। পাইপলাইন থেকে সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে পূরণ করতে হবে সাকিব-মাহমুদউল্লাহদের শূন্যতা।

চার দিন আগে টেস্ট ও টি২০ ছাড়ার ঘোষণা দেন সাকিব। অর্থাৎ ভারতের বিপক্ষে টি২০ দলে সাকিবের বিকল্প নিতে হয়েছে নির্বাচকদের। বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের শূন্যস্থান পূরণ করা হচ্ছে আরেক স্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের শূন্যতা কতটা পূরণ করতে পারবেন মিরাজ, জানা নেই। সাবেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার মনে করেন, ওয়ানডে ও টেস্টে সাকিবের শূন্যতা পূরণ করতে প্রয়োজন একজন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে যেটার ঘাটতি দেখতে পান তিনি।

বাশারের মতে, ‘আমরা যাদের নিয়ে আলাপ করছি, তাদের ব্যাকআপ এত সহজে তৈরি হবে না। মাশরাফি বিন মুর্তজার বিকল্প তৈরি করতে আমাদের দু-তিনজনকে দেখতে হয়েছে। সাইফউদ্দিনকে বিকল্প ভাবা হলেও সে পারেনি। ফাস্ট বোলিং বিভাগ সেটেল হতে তিন বছর লেগে গেছে। এখন যারা জাতীয় দল ছেড়ে যাচ্ছে, তাদের শূন্যস্থান পূরণে কেউ না কেউ মাথায় আছে। মিরাজ প্রস্তুত হয়েছে, তাকে দিয়ে হয়তো সাকিবের শূন্যতা কিছুটা পূরণ করা সম্ভব। ওপেনিংয়ে কয়েকজনকে দেখা হচ্ছে। আশা করি, শিগগির একটি সেটেল জুটি পাওয়া যাবে।’

মিরাজকে দিয়ে টি২০ দলের শূন্যতা পূরণ করা গেলেও টেস্ট ও ওয়ানডেতে তা চ্যালেঞ্জিং। কারণ মিরাজ আগে থেকে এ দুই সংস্করণে সাকিবের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলছেন। সাকিব না থাকায় ভারসাম্য একাদশ গঠন করতে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে কোচকে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যেমন সাকিবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলছিলেন, ‘সাকিব থাকলে একজন ব্যাটার বা বোলার বেশি নিয়ে খেলতে পারি। আর দুইজন অলরাউন্ডার খেলাতে পারলে ব্যাটিং লাইনআপটা বড় হয়।’ পরের সিরিজ থেকেই সাকিবের না থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে কোচকে একজন বিশেষজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার খেলিয়ে।

মাহমুদউল্লাহ এখনও টি২০ এবং ওয়ানডে ক্রিকেট খেলেন। তবে বেশ কিছু দিন ধরে তাঁর জায়গায় অনেককে পরখ করে দেখে সফল হয়নি। আফিফ হোসেন বা শামীম হোসেন পাটোয়ারি টি২০তে কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্স করতে পারছেন না। অথচ তারা দু’জনই জাতীয় দলে খেলছেন অনেক দিন হয়ে গেছে। ২০২০ সালে অভিষেক করা আফিফ ৩১ টি২০ খেলে ফেলার পরও জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। তাঁকে জাতীয় দলে নেওয়া হয়েছিল ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে তৈরি করতে। কারণ মাহমুদউল্লাহর মতো অফস্পিন বোলিংও পারেন তিনি। শামীমকে দেখা হচ্ছিল সাদা বলের গেমের ফিনিশারের জায়গায়। তিনিও নিজেকে প্রমাণ করতে ব্যর্থ। ফলে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর ওপরই ভরসা রাখতে হচ্ছে নির্বাচকদের।

এই পরিবর্তন ও বিকল্প নিয়ে প্রধান নির্বাচক লিপুর কাছে জানতে চওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সবাইকে একদিন না একদিন যেতে হবে বয়সের কারণে বা ইনজুরির কারণে। সে জায়গাগুলোতে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য সেরা খেলোয়াড়দের নিতে হবে। কোনো কিছু দিয়ে তো মাপা যাবে না যে, কেউ তৈরি আছে। সবকিছু চাহিদা মোতাবেক হয়ও না। কেউ তৈরি হওয়ার পথে থাকে। কেউ পরিস্থিতির কারণে অপরিণত অবস্থায় জাতীয় দলের সুযোগ পায়। যারা যাচ্ছে, তাদের জায়গায় কেউ না কেউ খেলবে। কিন্তু তারা তো ওই সিনিয়রদের মতো হবে না। কারণ অভিজ্ঞতা, পারফরম্যান্স, স্কিল রাতারাতি হয় না। অনেকে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। কেউ ছিটকে যায়। সেখানে নতুন কাউকে নিতে হয়।’

লিপু মনে করেন, বিসিবি যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাক চালাতে পারলে মানসম্পন্ন বিকল্প ক্রিকেটার পাওয়া যাবে। তাঁর মতে, ‘বিসিবি এখন যে উদ্যোগ নিয়েছে, টাইগার এইচপি; সেগুলো ঠিকমতো রান করা গেলে ভালো হবে। যদিও আমাদের সুযোগ-সুবিধার অভাব আছে। কোচ বাড়ানো। এইচপি ও এ দলের খেলা নিয়মিত রাখা। যেগুলো হচ্ছে, সেখান থেকে যেন না কমে। বৃদ্ধি করা গেলে ভালো।’ বিকল্প নেই, বিকল্প হয়ও না। কারণ ১৮ বছরের অভিজ্ঞতা ৫-১০ ম্যাচ খেলে হওয়ার নয়।

samakal