শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে একের পর এক যত কালো আইন: মির্জা ফখরুল

Prothom-Alo-logo | Design Works Group

বিশেষ প্রতিনিধি

ঢাকা

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলমান আন্দোলনে ‘শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলমান আন্দোলনে ‘শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম  ছবি: সংগৃহীত

অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন করেই সরকারকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আজ সমগ্র দেশ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, হত্যা-খুন চলছে। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার একের পর এক যত রকমের কালো আইন তৈরি করেছে।’

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চলমান আন্দোলনে ‘শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

আমার বাবাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ১০ বছর হলো বাবা নিখোঁজ। আমি ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। কিন্তু বাবাকে দেখি না। বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পারি না। আমার আর ভালো লাগে না, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

সাদিকা সরকার, নিখোঁজ ছাত্রদল নেতা মো. সোহেলের মেয়ে

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, পার্লামেন্টে সরকারপ্রধানের বক্তব্য। এখানে সাংবাদিকদের কোনো সম্মান নেই এবং তাদের নিরাপত্তাও নেই। এখানে সম্পাদকদের কোনো নিরাপত্তা নেই, সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নেই, রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নেই, শিশু-নারীর কোনো নিরাপত্তা নেই।’

মহাসচিবের বক্তব্যের আগে ‘গুম হওয়া’ নিউমার্কেট থানা ছাত্রদল নেতা মাহমুদুর রহমানের (বাপ্পী) বোন ঝুমুর ও পুরান ঢাকার ছাত্রদল নেতা মো. সোহেলের মেয়ে সাদিকা সরকার (সাফা) বক্তব্য দেয়। এ সময় শিশু সাফা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘আমার বাবাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ১০ বছর হলো বাবা নিখোঁজ। আমি ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। কিন্তু বাবাকে দেখি না। বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পারি না। আমার আর ভালো লাগে না, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।’

পরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাফার কথার পর আমাদের কথা বলার খুব একটা অবকাশ থাকে না। সাফার একটি ছবি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ছবি ডেইলি স্টারে (ইংরেজি দৈনিক) ফটো অব দ্য ইয়ার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল। এই ছবির মধ্য দিয়ে যে বেদনা ও সারা দেশের মানুষের যে আন্দোলন, একই সঙ্গে এই সরকারের নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছিল।’

সারা দেশে কমপক্ষে ৭০০ মানুষ গুম ও সহস্রাধিক কর্মী খুন হয়েছেন বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৪-১৫ বছর ধরে এ রকম একটা ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন, হত্যা-খুন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য গুম কথাটা, বাংলাদেশের মানুষ আগে কখনো জানত না। তুলে নিয়ে গিয়ে নাই হয়ে যাওয়া, এটা লাতিন আমেরিকায় ছিল।’

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গুম-খুন যে এখানে হচ্ছে, এটা তারা স্বীকারই করত না। আন্তর্জাতিক বিশ্ব, বিভিন্ন সংস্থা পরিষ্কার করে বলছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক কারণে গুম করা হচ্ছে। আজকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইউরোপ বলছে, সবাই বলছে।’

দেশে সত্যিকার অর্থে মুক্ত, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে; যেখানে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এভাবে খুন-গুম হয়ে, নির্যাতিত হয়ে, আর মুখ থুবড়ে থাকবে না। মানুষ জেগে উঠতে শুরু করেছে। এই যে রক্তের স্রোত, আর বাচ্চা মেয়েটার (সাফা) যে কান্না, কখনো বৃথা যেতে পারে না। বিজয় আমাদের হবেই।’

বিএনপি জানিয়েছে, সারা দেশে চলমান আন্দোলনে ‘শহীদ, গুম ও নির্যাতনের শিকার’ এক হাজার পরিবারকে আগামী এক সপ্তাহে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম ঈদ উপহার হিসেবে ১১টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আখতার উপস্থিত ছিলেন।