শীর্ষ জোট নেতাদের আসন নিশ্চয়তা বিএনপির

শীর্ষ জোট নেতাদের আসন  নিশ্চয়তা বিএনপির

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক সমমনা দলগুলোর ঐক্য সুদৃঢ় রাখার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে আসনভিত্তিক জোট নেতাদের সহযোগিতা করতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীকে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে দলটি। ওই চিঠিতে জোটভুক্ত নেতাদের জনসংযোগ ও তার দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে সহায়তা করতে নির্বাচনী আসনের থানা, উপজেলা, পৌরসভার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিএনপি নেতাকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ওই চিঠির অনুলিপি জোটের সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদেরও দিয়েছে দলটি।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ আন্দোলনে থাকা বিভিন্ন দলের ছয় নেতাকে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে বগুড়া-২, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ঢাকা-১২, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি চিঠিতে ওই সব আসনের থানা-উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির নেতাকর্মীকে জোট নেতাদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। এসব চিঠির বাইরে ১২ দলীয় জোট নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে মৌখিকভাবে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে কাজ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীকে এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জোট নেতারা জানান, এসব চিঠির মাধ্যমে তারা যাতে প্রতিবন্ধকতা ছাড়া কাজ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে নিজ নিজ এলাকায় জনসংযোগের মতো কর্মসূচি, কর্মিসভা, সাংগঠনিক সভা যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন স্থানে ওই নেতারা কাজ করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। কোনো কোনো স্থানে বিএনপি নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তাদের কোণঠাসা করতে সব আয়োজন করেছেন। এমনকি মামলা পর্যন্ত দেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া নেতাকর্মীর ওপর হামলার ঘটনাও রয়েছে। এসব বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডকে অবহিত করলে তারা এ চিঠি দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীকে সহায়তা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাতে কোনো রকম বাধা না দেওয়া হয়। এসব আসনের বেশির ভাগেই ২০১৮ সালে জোটগতভাবে তারা নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু সেখানে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এবার জোটকে ছাড়তে নারাজ। ফলে তারা প্রতি পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছিলেন।

নাগরিক ঐক্যের একজন নেতা জানান, তাদের দলের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে বগুড়া থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অন্যান্যরা জোটগত নির্বাচনে অংশ নিলে এই আসন থেকেই মান্না নির্বাচন করতেন। আগামীতেও তিনি এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তবে এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। যার কারণে ৫ আগস্ট দেশের পট পরিবর্তনের পর বিভিন্ন হত্যা মামলায় স্থানীয় নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীকে ফাঁসানো হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একইভাবে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-আলেকজান্ডার এলাকায় বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা আ স ম রবের নেতাকর্মীর ওপর হামলা করে আহত করেছেন বলে জানান জেএসডি নেতাকর্মীরা। এ বিষয়েও বিএনপির হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলটির দপ্তর থেকে ওই সব আসনের স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীকে চিঠি দিয়েছে। যার অনুলিপি জোট নেতাদের দেওয়া হয়। এ রকম দুটি চিঠি সমকালের হাতে এসেছে।
জেএসডি সহসভাপতি তানিয়া রব সমকালকে বলেন, তিনি নিজেও শুনেছেন এ রকম চিঠির কথা। যদিও তিনি ওই চিঠি হাতে পাননি। তবে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। এলাকায় কাজ করতে তাদের জন্য সুবিধা হবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের কয়েকজন নেতা জানান, এ চিঠির মাধ্যমে জোটের কয়েক নেতাকে আসনভিত্তিক নির্বাচনে প্রাক নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনের আন্দোলনে জোট নেতাদের ভূমিকা, তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে পুরস্কারস্বরূপ এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটা তাদের একটি স্বীকৃতি। এর মধ্যে জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর এবং জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রাক্কালে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
নেতারা আরও জানান, এ সময়ে রিমান্ডের নামে তাদের অকথ্য নির্যাতনও সইতে হয়েছে। জোটগত কর্মসূচি পালনে বিএনপির শীর্ষ নেতা তারেক রহমান সব সময়ে তাঁকে পছন্দ করেন। তার স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কারস্বরূপ এবং তাঁকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়ার অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের চিঠি দিয়েছেন বলে জোটের একাধিক নেতা জানান। যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সৈয়দ এহসানুল হুদা।
এ জোটের আরেক নেতা বিএলডিপি মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকেও এ চিঠি দেওয়ার কথা ছিল। তবে আপাতত সেটা না দিয়ে তারেক রহমান তাঁকে মৌখিকভাবে আশ্বাস দিয়েছেন। এ রকমভাবে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

samakal