samakal.com
প্রকাশ: ০৯ জুন ২২
এবারের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে চমক না থাকলেও বরাদ্দ বেড়েছে। মূল বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘কভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’। এর আলোকে শিক্ষা বাজেট সেভাবে হতে পারতো। বাজেটের শিক্ষা অধ্যায়ে ‘অতিমারির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা খাতে বিশেষ উদ্যোগ’ শিরোনামের ১০৪ নম্বর অনুচ্ছেদটি এ সংক্রান্ত হলেও ভেতরে বিশেষ উদ্যোগের কোনো কথা নেই। এখানে অধিকাংশই পুরোনো কথা। করোনার সময়ে রেডিও-টিভির মাধ্যমে শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, বতর্মানে শিক্ষা কার্যক্রম সরাসরি চলছে। তবে নতুন এই অংশটুকুর কথা বলা যায়, ‘শিক্ষার্থীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য শিক্ষকরা নিয়মিত তাঁদের সঙ্গে মোবাইল ফোন এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।’ বিশেষ করে কভিড সৃষ্ট শিক্ষার ক্ষতি বলতে বিশেষজ্ঞরা যে শিখনশূন্যতা ও ঝরে পড়ার কথা এতদিন বলে আসছেন সেগুলো থাকা উচিত ছিলো।
এবারের শিক্ষা বাজেটে শিক্ষার নতুন যে রূপরেখা অনুমোদন হয়েছে এবং নতুন শিক্ষাক্রম যে আগামী বছর থেকে আংশিক বাস্তবায়ন হচ্ছে, সে বিষয়েও কথা থাকতে পারতো। শিক্ষানীতি-২০১০ এর কথা বলা হয়েছে ‘ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে’। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। আমরা জানি, নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখার খসড়া সরকার ২০২০ সালেই প্রণয়ন করে এর ওপর পরামর্শ আহ্বান করে। ২০২১ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ইতোমধ্যে এর পাইলটিংও শুরু হয়েছে। কিছুদিন আগে এর চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে এবং আগামী বছর থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ারও কথা রয়েছে। এজন্য এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় আট লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। সেখানে নিশ্চয়ই বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হওয়ার কথা।
এবারের বাজেটের ১১০ নম্বর অনুচ্ছেদটি এরকম- ‘আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা বর্তমান ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ২৬ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা।’ আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খাতে ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর সঙ্গে এও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ৯ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে শিক্ষার এই তিন খাতের প্রতিটির সঙ্গেই বর্তমান অর্থবছরের বরাদ্দের অঙ্ক তুলে ধরার মানে এটাই প্রমাণ করা, এবার শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে। তবে এটা বলা দরকার, গত অর্থবছরে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য মঞ্জুরি হিসেবে এককালীন আট কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে, এবার সেখানে ২০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে। এটা ভালো দিক এবং যথার্থই যাদের প্রয়োজন তারা যেন অর্থটা পায় তা নিশ্চিত করা চাই।
তবে মোটের ওপর এবার শিক্ষায় বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও তা কতটা যথার্থ কিংবা জিডিপির দিক থেকে মানসম্মত, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃহস্পতিবার বাজেট পাসের দিন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্যেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষায় বিনিয়োগ জিডিপির ছয় ভাগে যেতে হবে। আমরা তিন ভাগে আছি।’ বাস্তবে জিডিপির ৩ শতাংশও বরাদ্দ হয় না। প্রস্তাবিত বাজেটে মোট জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। সে হিসাবে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ মাত্র। অথচ এই বরাদ্দ দিয়েই আমরা ঢোল পেটাই ‘শিক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে আসছি’
সময় ও প্রয়োজন বিবেচনায় করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষা খাতে বিশেষ উদ্যোগ ও সেখানে বরাদ্দ জরুরি ছিল। কিছুদিন আগেও যেখানে বেসরকারি গবেষণায় বেরিয়েছে, প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়েছে, সেখানে আমরা নির্বিকার। শিক্ষায় অনেকের যে প্রায় দেড় বছরের শিখনশূণ্যতা তৈরি হলো, তা নির্ণয়ে কিংবা পোষাতেও কোনো উদ্যোগ নেই।