শিক্ষার্থীদের পছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হোক

logo

আমাদের দেশে নাম রাখা আর নাম মোছার সংস্কৃতি সেই জন্মলগ্ন থেকেই। যারা ক্ষমতায় থাকেন তারা তাদের স্বজনদের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। আবার তেলের জন্যও কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদের নামে প্রতিষ্ঠানের নাম রাখেন। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আছে।

আবার ক্ষমতা থেকে যাবার পর নতুন শাসক এসে পূর্বের নাম মোছায় আত্মনিয়োগ করেন। বিগত সরকারের আমলে দেশের নাম পরিবর্তন ছাড়া মোটামুটি বাকি সব কিছুর নামের সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবার-পরিজনের নাম যোগ করা হয়েছিল। গত ১৭ বছরে নতুন যতগুলো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে প্রায় সবগুলোই শেখ পরিবারের নানা সদস্যদের নামে।

বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন করে সম্প্রতি রাখা হয়েছে ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তীব্রভাবে এই নাম প্রত্যাখ্যান করেছে। শিক্ষার্থীরা হাসিনার পতনের পরপরই ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঠিক করেছে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’। গাজীপুর নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু প্রতিবাদই জানাননি তারা মানববন্ধন, রেল চলাচল বন্ধ করে দেয়াসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। বর্তমানে ক্লাস বর্জন করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় চরমভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছে। বিশাল বাজেট, নানা ধরনের মেগা প্রজেক্টসহ যেসব প্রযুক্তিগত সুবিধার কথা উল্লেখ ছিল শিক্ষার্থীরা ভর্তির পর তার কোনো সুবিধাই পায়নি।

বুয়েটে আবরারের ঘটনার পর অনেক অভিভাবক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সন্তানদের পড়ানোর ব্যাপারে আতঙ্কিত ছিলেন। অনেক শিক্ষার্থী ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও র‌্যাগের ভয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হননি। এখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম, ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে নতুন বিষয় নির্বাচন, প্রযুক্তিগত নতুন কৌশল ভবিষ্যতের পরিবর্তিত বিশ্বে কর্মসংস্থানে সহায়তা করবে এই ধারণা থেকেই অনেকে তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নিয়েছে।

ভর্তির পর দেখা গেল ক্লাসে প্রত্যেকের একটি করে কম্পিউটার থাকার কথা কিন্তু সে কম্পিউটার থাপ্পড় দিলে চলে, আবার একটু পর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রত্যেককে নিজস্ব ল্যাপটপ কিনতে হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখানে বেতনও কয়েকগুণ বেশি।

অবকাঠামো বলতে কিছুই নেই। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এতই খারাপ যে লোডশেডিং-এর কারণে জ্ঞান হারান ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীরা। মূলত বিগত সরকারের লুটপাটের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র হিসাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করা হয়েছিল। এর মূল কারিগর ছিলেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

নানা ধরনের সমস্যার মাঝেও শিক্ষার্থীরা তাদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে।

বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এখানে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। লেখাপড়া নিয়ে যাদের আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। সরকার পতনে যেহেতু শিক্ষার্থীদের ভূমিকা মুখ্য ছিল তাই নাম বদলের সময় শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নিজেদের পছন্দমতো রাখবে এটাই স্বাভাবিক।

৫ আগস্ট তারা জানত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে পরিবর্তন আসবে। তাই তারা সবাই মিলে নাম ঠিক করে সেই নাম প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি সংক্ষেপে ‘বিডিইউ’ আবার বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি সংক্ষেপে ‘বিডিইউ’। একটি শব্দের পরিবর্তনে সংক্ষিপ্ত নাম একই থাকে। তাছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউই চায় না তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সাথে গাজীপুর সংযুক্ত হোক। শিক্ষার্থীদের রক্তে, তাদের জীবনের, সংগ্রামের বিনিময়ে স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে যে নাম পরিবর্তের সুযোগ এসেছে সে নাম নির্ধারণে কেন শিক্ষার্থীদের মতামত উপেক্ষা করা হবে?

নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত এবং পছন্দকে গুরুত্ব দেয়া হবে এ কথা প্রশাসন থেকে জানালেও কথা রাখছে না তারা। ক্লাস, পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের জন্য প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে, তাদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। সেশনজট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের মতামত, তাদের ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নির্ধারণ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পাঠাবেন। প্রশাসনের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেবে প্রশাসন- সেটাই কাম্য।

অভিভাবক
বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here