স্টাফ রিপোর্টার
২৭ এপ্রিল ২০২৩
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশগামী যাত্রীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম জাবেদ বাহিনী । এই বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা করে আসছে। যাত্রীদের টাকা আত্মসাৎ থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, টিকিট নিয়ে পালিয়ে যেতো। ডলার কিনে এনে দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিতো। এ ছাড়া পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন যাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে হয়রানি করে চাঁদাবাজি করতো। জাবেদ নিজে ও তার বাহিনীর সদস্যদের প্রতারণা ও হয়রানিতে প্রায় অতিষ্ঠ ছিল শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে যাওয়া-আসা করা যাত্রীরা। বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এখন পর্যন্ত ৫ বার গ্রেপ্তার করেছে এই বাহিনীর মূলহোতা মো. জাবেদ (৪৭)কে। জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের একইভাবে প্রতারণা করে। জেলে থাকা অবস্থায় তার বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করতো। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জাবেদকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে এপিবিএন।
এপিবিএন কর্মকর্তারা জানান, জাবেদ দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে আসছিল। কখনো ডলার ক্রয় করে দেয়ার কথা বলে যাত্রীর টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যেতো। কৌশলে যাত্রীর পাসপোর্ট এবং ট্রাভেল ডকুমেন্টস নিয়ে চলে যেতো। যাত্রী ফ্লাইটে যেতে পারবে না বলে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে যাত্রীর আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো। পুলিশ পরিচয়ে হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল জাবেদ। এসব অপকর্ম করার জন্য গাজীপুরের বাসিন্দা সে বিমানবন্দর কেন্দ্রিক বড় ধরনের একটি চক্র গড়ে তুলেছিল। তার চক্রের ৫-৬ জন সক্রিয় সদস্যকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এয়ারপোর্ট এপিবিএন সূত্র বলছে, গত ৩রা জানুয়ারি সিঙ্গাপুরগামী যাত্রী মো. শফিকুল ইসলামের স্বজনদের ফোন করে জাবেদ জানায়, শফিকুল ফ্লাইট মিস করে আটকা পড়েছে। এখন তাকে নতুন করে টিকিট করে দিতে হবে। স্বজনরা যাতে বিশ^াস করে সেজন্য জাবেদ নিজেই শফিকুলের কণ্ঠ নকল করে কান্নাকাটি শুরু করে। জাবেদ তখন স্বজনদের বলে, সিঙ্গাপুরে পাঠাতে হলে ৬৮ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে সরাসরি ফ্লাইটের টিকিট করতে হবে। এজন্য দ্রুত টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। উপায়ান্তর না দেখে শফিকুলের আত্মীয়-স্বজন বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে ৬৫ হাজার ৫৫০ টাকা জাবেদকে পাঠান। অথচ যাত্রী মো. শফিকুল ইসলাম তখন সিঙ্গাপুরগামী ফ্লাইটে ছিলেন। এজন্য তার মোবাইল বন্ধ ছিল। সেজন্য স্বজনরা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ পাননি। কিন্তু যাত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা টাকা পাঠানোর পর পরই তার ফোন নম্বরটি বন্ধ করে দেয়।
এয়ারপোর্ট এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক মানবজমিনকে বলেন, শফিকুল সিঙ্গাপুর পৌঁছার পর তার স্বজনদের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তারা বুঝতে পারেন কেউ প্রতারণা করেছে। পরে তারা এয়ারপোর্ট এপিবিএনের কাছে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত শুরু করে এপিবিএন গোয়েন্দারা। তদন্তের একপর্যায়ে কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন এই প্রতারণা জাবেদই করেছে। তাকে চিহ্নিত করে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আটক করে এপিবিএনের গোয়েন্দা দল। এর আগেও জাবেদকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করে এপিবিএন। বিমানবন্দরে কর্মরত ম্যাজিস্ট্রেট জাবেদকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও প্রদান করেন। তার বিরুদ্ধে ডিএমপি’র বিমানবন্দর থানাতেও একাধিক মামলা রয়েছে। ওই মামলায় জামিন পেয়ে বের হয়ে আসে এবং একই ধরনের প্রতারণার কাজে আবারো যুক্ত হয়।