শান্তর সেঞ্চুরি আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে

শান্তর সেঞ্চুরি আশা দেখাচ্ছে বাংলাদেশকেটেস্টে নেতৃত্বের অভিষেকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির পর শান্তর উল্লাস ইউসুফ আলী

তিন অঙ্কের ইনিংসগুলো এভাবেই উদযাপন করেন তিনি। ব্যাটের কোনায় উড়ন্ত চুম্বন পাঠিয়ে দেন ড্রেসিংরুমের দিকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরির পর সেই চুম্বন পৌঁছাতে ভুল করেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে এদিনের চুম্বনে বোধ হয় ভালোবাসার মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল! টেস্ট নেতৃত্বের অভিষেকে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরির দেখা পেলেন; বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে কম ৪৬ ইনিংস খেলে পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি করলেন। তবে এসবের চেয়েও শান্তর স্বস্তি, তৃতীয় দিন শেষে তিনি ১০৪ রানে আর মুশফিকুর রহিম ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে আজ চতুর্থ দিন মাঠে নামবেন। সকালের সেশনে টিম সাউদি ও জেমিসন এতটা না ভোগালে হয়তো তৃতীয় দিন শেষে লিডটা আড়াইশর আশপাশে থাকত। কিউইদের এই নবম জুটি ফিফটি প্লাস রান করায় বাংলাদেশের লিডের গ্রাফটা দুইশ ছাড়িয়েই থামল। তবু শান্তর সেঞ্চুরি ও মুশফিকের চমৎকার লড়াই ভুলিয়ে দিয়েছে সেই চিত্র; উল্টো দেখাচ্ছে নতুন সম্ভাবনা। গতকাল নিউজিল্যান্ডকে ৩১৭ রানে থামিয়ে দেওয়ার পর ৩ উইকেটে ২১২ রান করে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ। তাতে নিউজিল‍্যান্ডের চেয়ে স্বাগতিকরা এগিয়ে যায় ২০৫ রানে। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে এটা কম কীসে! সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল হক তো বলেই দিলেন, ২০৫ রানের লিড খুবই ভালো। এখন চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা ঠিকঠাক হলেই হয়। তাতে নাকি ৩৫০ বা ৪০০ রানের চূড়ায় পৌঁছানো যাবে।
এমন একটা শুরুই চেয়েছিল বাংলাদেশ। অন্তত বিশ্বকাপের মলিন এক ছবি দ্রুত ভুলতে টেস্টে এই ধারটাই বেশি প্রয়োজন ছিল। এখন পর্যন্ত সিলেট টেস্টের নাটাই বাংলাদেশের হাতে। কিছু কিছু ভুল বাদ দিলে তৃতীয় দিনটা খুবই সুন্দর কেটেছে স্বাগতিকদের। সকালের প্রথম ঘণ্টায় অবশ্য ভুগিয়েছিলেন কিউই দুই টেলএন্ডার কাইল জেমিসন ও টিম সাউদি। প্রায় ১৮ ওভার ক্রিজ আঁকড়ে থেকে ৫২ রান যোগ করে এই জুটি। শেষ পর্যন্ত এই জুটির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন বোলার মুমিনুল। বিরতির পর প্রথম বলেই জেমিসনকে আউট করেন মুমিনুল। ওই ওভারে সাউদিকেও বোল্ড করেন তিনি। ৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট– ক্যারিয়ারসেরা এই বোলিং নিশ্চিতভাবেই মনে রাখবেন মুমিনুল। সেই সঙ্গে হয়তো আফসোস করবেন গতকাল নিজের রানআউট নিয়ে। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই রিভার্স সুইপ মেরে মুমিনুল তাঁর স্বাছন্দ্যের জানান দেন। শান্তর সঙ্গে ৯০ রানের জুটি গড়েন তিনি। বেশ সতর্কতার সঙ্গে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল এই জুটি। চা বিরতির আগে-পরে প্রায় ২০ ওভার কোনো বাউন্ডারির ঝুঁকি নেননি তারা। ঠিক তখনই এক ভুল করে বসেন মুমিনুল। মিডঅনে বল ঠেলেই সিঙ্গেলস নিতে যান; অন্যপ্রান্তে শান্ত তাকিয়ে দেখেন, বল ফিল্ডারের হাতে। ক্রিজের মাঝপথ থেকে আর ফিরে আসতে পারেননি মুমিনুল। ৪০ রানে শেষ হয়ে যায় তাঁর সম্ভাবনার ইনিংস। তার আগে আরেকটি রানআউটের দুর্ভাগ্য মেনে নিতে হয় ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে; শান্তর একটি স্ট্রেইট ড্রাইভ বোলার সাউদির হাতে লেগে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে গেলে। ৮ রানে শেষ হয় জয়ের ইনিংস। তার আগে এজাজ প্যাটেলের এক ঘূর্ণি বলে ১৭ রান করা জাকির আউট হয়ে যান। ১১৬ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর আর কোনো ভুল করেননি শান্ত ও মুশফিক।

যে শান্তর শুরুটা ছিল ৪৫ বলে ৩৭, সেই তিনিই হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে পরবর্তী সময়ে আরও ৫০ বল খেলেন। শত রান আসে তাঁর ১৯২ বলে। আজ শান্ত-মুশফিক যদি স্বাচ্ছন্দ্যে প্রথম সেশনটা কাটিয়ে দিতে পারেন, তাহলে মুমিনুলের চাওয়ার মতো ৩৫০ বা ৪০০ রানের লিড দেখেও ফেলতে পারেন দর্শক। যেটা সিলেটে অন্তত টপকানো হবে মহাকঠিন। যদিও লাক্কাতুরায় এই ম্যাচের আগে একটি মাত্র টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেটিও ২০১৮ সালে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের। ওই ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩২১ রানের লিড দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু জেতার আশায় নেমে টাইগারদের ব্যাটিংলাইন গুটিয়ে যায় মাত্র ১৬৯ রানে। এই বাংলাদেশ যদি তেমন কোনো লিড দিতে পারে, তাহলে এই টেস্ট জেতা তাদের জন্য অসম্ভব কিছু না। তা ছাড়া উইকেটও ব্যাটিং সহায়ক। যেমনটা মুমিনুলেরও মনে হচ্ছে, ‘উইকেট তো এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে ভালোই। আমার কাছে বলা কঠিন। চারশ হতে পারে, সাড়ে তিনশও হতে পারে (লক্ষ্য)। নির্ভর করছে কালকের (আজকের) ওপর। কাল (আজ) চতুর্থ দিন, অন্য রকম আচরণ করতে পারে। চারশ হলে ঠিক আছে।’

যদিও মুমিনুল ব্যক্তিগতভাবে তেমন অবদান রাখতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে টেনেটুনে ৩৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে এক অবাক করা রানআউটের খপ্পরে পড়েন। তাঁর পাশাপাশি এদিন বাংলাদেশের পতন হওয়া তিন উইকেটের মধ্যে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও রানআউটে কাটা পড়েন। বাকিজন জাকির হোসেন এজাজ প্যাটেলের এলবির ফাঁদে পা দেন। এই তিন আউটের বাইরে বাকিটা শুধুই রঙিন। আর সেই রঙিন আঙিনাটা মনের মতো করে সাজাতে মূল দায়িত্ব পালন করেন শান্ত। তাঁকে বেশির ভাগ সময় সঙ্গ দেন মুশফিক; তার আগে মুমিনুল। যদিও অহেতুক এক রানআউটের কারণে তাঁর ৪০ রানের ইনিংসও আড়ালে পড়ে যায়।

সমকাল