বিদ্যমান শ্রম আইনের সংস্কারে প্রতিশ্রুত রূপরেখা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কী করছে? তাতে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। শ্রমিক সংগঠকদের সঙ্গে বৈঠকে এমনটাই জানিয়েছে ঢাকা সফররত উচ্চ পদস্থ মার্কিন প্রতিনিধি দল। সফরের প্রথম দিন শনিবার রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে বহুল আলোচিত শহীদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) উদ্বেগ রয়েছে। তাদের সুপারিশেই আইনটির সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজনের রূপরেখা তৈরি করেছে সরকার।
সূত্র মতে, বাংলাদেশে মার্কিন উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফরের এডভান্স টিম অর্থাৎ দু’জন কর্মকর্তা শনিবার সকালে ঢাকা পৌঁছান। সেই দুই কর্মকর্তা হলেন- ইউএসএআইডির এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মাইকেল শিফার এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার। পরবর্তীতে আসেন টিম লিডার
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার জ্যেষ্ঠ পরিচালক রিয়ার এডমিরাল আইলিন লাউবেচার। দুপুরে বিরোধী দল বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রাজনৈতিক পরিস্থিতির ধারণা নিয়েছে অগ্রগামী দলটি। আর সন্ধ্যায় বৈঠক করেছে বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠকদের সঙ্গে।
গতকাল সন্ধ্যায় সার্বিক শ্রম আইন ও অধিকার নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বৈঠক শেষে শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসা যেহেতু ক্রেতাদের সঙ্গে, ফলে প্রতিনিধি দল জানতে চেয়েছে এখানে মার্কিন ক্রেতারা শ্রম পরিস্থিতি উন্নয়নে কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সরকারের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের কয়েকটি বৈঠক রয়েছে, সেখানে বিষয়গুলো তুলে ধরবে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম হত্যার প্রসঙ্গ এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, শহীদুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড দেশে যেমন আলোচিত, বিদেশেও তেমনি। মার্কিন দল জানতে চেয়েছে এ হত্যাকাণ্ডটির পূর্নাঙ্গ তদন্ত হচ্ছে কি না। বৈঠকে শ্রম আইনে শ্রমিকদের কল্যাণ ও স্বার্থ রক্ষায় কি ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন, তা বৈঠকে জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সেখানে এ সংক্রান্ত উদ্বেগ সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকরা বর্তমানে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন, তাও জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দল। এক্ষেত্রে শ্রমিক সংগঠকদের পক্ষ থেকে আইনের সংস্কারের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশের শ্রম আইন সংস্কার, কল্যাণ ও অধিকার রক্ষায় বৈঠকে মার্কিন ক্রেতারা কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে, তা জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দল। এক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা একটি বড় বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে শ্রমিক সংগঠকরা। পরিস্থিতি উত্তরণে ও ইতিবাচক ভূমিকার জন্য সংলাপের পক্ষে মত দিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। তারা সরকার, ব্র্যান্ড ও শ্রমিকদের মধ্যে তৃপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজনের প্রয়োজনিয়তার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের শ্রম বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি জানিয়ে বৈঠকে উপস্থিত আরেক শ্রমিক সংগঠক বলেন, বর্তমান শ্রম আইনে শ্রমিকদের জন্য কি কি অধিকার সংরক্ষিত রয়েছে তা জানতে চেয়েছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। তবে বাংলাদেশের শ্রম আইন ও পরিস্থিতি সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা বর্তমানের চেয়ে আরও কাজ করবে। এছাড়া দুই দেশের ট্রেড ইউনিয়নের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোববার মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান দেশটির প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়ার জেষ্ঠ্য পরিচালক এলিন লাউবেচারের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সকালে সচিবালয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকের পর দুপুরে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে মূল বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে দেখা করবে ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দলটি।
এদিকে শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ইউএসএআইডি এবং বাংলাদেশের বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিরা।
সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা সফররত ইউএসএআইডি এশিয়া অঞ্চলের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মাইকেল শিফার, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর রিড অ্যাশলিম্যান। বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে সমঝোতা স্মারকে সই করেন শিক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান শিখো’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীর চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে মাইকেল শিফার বলেন, বাজারে চাহিদা আছে এমন বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে, এদেশের তরুণরা দেশকে আরো প্রতিযোগিতাসম্পন্ন ও পরবর্তী এশিয়ান টাইগার – ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। সেই সঙ্গে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে সমৃদ্ধিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে।
মানব জমিন