শম্ভুর রাজত্বে তিনিই রাজা
- জেলার সদর, তালতলী, আমতলী নিয়ে বরগুনা-১
- বরগুনা-১ আসনে এবার প্রার্থী মোট সাতজন
- প্রার্থীদের সবাই ভোটের মাঠে তেমন সক্রিয় নন
- শম্ভু, মতিয়ার ও অলি ভোটের মাঠে আছেন
- একচেটিয়া প্রচার চালিয়েও স্বস্তিতে নেই শম্ভু
বরগুনা-১ আসনে একচেটিয়া প্রচার চালাচ্ছেন এই আসনের বর্তমান সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। অদৃশ্য চাপ আর গ্রেপ্তার–আতঙ্কে কোণঠাসা বিএনপি প্রচারে না থেকেই প্রত্যাশা করছে ‘ভোটবিপ্লবের’ চমকের।
তবে একেবারেই নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না শম্ভু। দলীয় কোন্দল আর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর প্রভাব তাঁর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বরগুনা জেলার সদর, তালতলী ও আমতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা–১ আসন। এই আসনে এবার প্রার্থী মোট সাতজন। তবে সবাই ভোটের মাঠে তেমন সক্রিয় নন। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মতিয়ার রহমান তালুকদার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের অলি উল্লাহ ভোটের মাঠে আছেন। বুধবার ও বৃহস্পতিবার এই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার খুব কম। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর পোস্টার প্রচুর। আর ধীরেন্দ্র দেবনাথের প্রচার একচেটিয়া। তিনটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পোস্টার ব্যানারে ছেয়ে আছে। নির্বাচনী ক্যাম্প ছাড়াও দোকানপাটে বাজছে নৌকার গান।
মাঠছাড়া বিএনপি
প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনী প্রচার শুরু হলে মাঠে বেশ সক্রিয় ছিলেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। তবে দিন যত ঘনিয়েছে, ততই তাঁরা মাঠের বাইরে চলে যেতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি দলের নেতা-কর্মী ও পুলিশের হুমকি–ধমকিতে অনেকই বাড়িছাড়া। গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। প্রচার শুরুর পর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত ১৫ জন বিএনপির নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ কারণে জেলা বিএনপির কোনো নেতাই নাম প্রকাশ করে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। খোদ বিএনপির প্রার্থীও কথা বলতে রাজি হননি।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি দলটি। দলের জেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লাও এবার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এবারের প্রার্থী মতিয়ার রহমান তালুকদার একসময় জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনের সময় বিএনপিতে যোগ দিয়ে সাংসদ হন মতিয়ার। ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন তিনি। এরপর থেকে তিনি মাঠে তেমন ছিলেন না।
হাতপাখার বাতাস নৌকার ওপর
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অলি উল্লাহ এই এলাকায় বেশ সুপরিচিত। এলাকায় তাঁর প্রভাবও রয়েছে। এবারের নির্বাচনের মাঠে এসে তিনিও ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছেন। তবে তাঁকেও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অলি উল্লাহ বলেন, নানাভাবে বাধা দিচ্ছে সরকারি দল। ভোটারসহ নেতা-কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে যেতে বারণ করা হচ্ছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের ব্যবহার করে হুমকি দিচ্ছে সরকারি দল। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, নিজস্ব ভোট ব্যাংকের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকে যাঁরা নীরবে দলের প্রার্থীর বিরোধিতা করছেন, তাঁদের অনেকে হাতপাখা প্রতীকে ভোট দিতে পারেন। এটাই নৌকার প্রার্থীর বড় আশঙ্কা।
আশঙ্কা কম নেই শম্ভুর
এবারের আগে পাঁচবার অংশ নিয়ে চারবারই সাংসদ হয়েছেন শম্ভু। এলাকায় তাঁর প্রভাব ব্যাপক। তবে তাঁর বিরোধীপক্ষও বেশ সক্রিয়। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম তুলেছিলেন ৫২ জন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর বিরোধী হিসেবে পরিচিত জেলার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ারসহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের একটি বড় অংশ শম্ভুবিরোধী হিসেবে পরিচিত। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এঁদের নেতৃত্বে শম্ভুকে বরগুনায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তবে প্রচারের শুরুতে মাঠে না নামলেও সপ্তাহখানেক ধরে এঁদের প্রচারমঞ্চে শম্ভুর পাশে দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মহল বলছে, এসব নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা আন্তরিকভাবে কাজ করলে ফল একরকম হবে, না হলে ভরাডুবির শঙ্কা।
সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রচারণাতেই বাধা দিচ্ছি না। বিএনপি আমাদের নানা রকম উসকানি দিচ্ছে। তারপরও আমরা সংযত আছি। প্রশাসনই সব ব্যবস্থা নেবে।’
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মোহাম্মদ রফিক, বরগুনা)