- ইকতেদার আহমেদ
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০
সাংবিধানিক পদধারীদের মধ্যে সংবিধানের তৃতীয় তফসিলে যে সব পদধারীর উল্লেখ রয়েছে তারা সবাই শপথের অধীন। এ সব পদধারী কোনো পদে নির্বাচিত বা নিযুক্ত হওয়া পরবর্তী শপথ গ্রহণ ব্যতিরেকে পদে আসীন হন না। আবার এ সব পদধারী পদ থেকে পদত্যাগ করলে বা অবসরগ্রহণ করলে বা যেকোনো কারণে তাদের পদ শূন্য হলে তারা তাদের স্বপঠিত শপথ থেকে অবমুক্ত হয়ে যান।
সাংবিধানিক পদধারীদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারকে শপথ গ্রহণ করাকালীন পাঠ করতে হয়- তারা বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবেন; তারা সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন এবং তারা ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করবেন। রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ব্যতীত উপরোক্ত অপর সব পদধারীর শপথ পাঠের পর গোপনীয়তার শপথ পাঠ করতে হয়। প্রধান বিচারপতি বা বিচারককে শপথগ্রহণ করাকালীন উপরোক্ত পদধারীরা যা পাঠ করেন তার অতিরিক্ত পাঠ করে বলতে হয়- তারা বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করবেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের শপথগ্রহণ করাকালীন উপরোক্ত পদধারীদের মতো ‘ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সবার প্রতি আইন অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করব’-এ বাক্যটি পাঠ করতে না হলেও তাদের সাথে ভিন্নতায় পাঠ করতে হয়- তারা সরকারি কার্য ও সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রভাবিত হতে দেবেন না।
সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হওয়া পরবর্তী যে শপথ পাঠ করেন তাতে অপর সব সাংবিধানিক পদধারীর মতো তাদেরও পাঠ করতে হয়- তারা বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করবেন। কিন্তু এর ভিন্নতায় তারা অতিরিক্ত যে দু’টি বাক্য পাঠ করেন তা হলো- তারা যে কার্যভার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তা আইন অনুযায়ী বিশ্বস্ততার সাথে পালন করবেন এবং সংসদ সদস্যরূপে তাদের কর্তব্য পালনকে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রভাবিত হতে দেবেন না।
সাংবিধানিক পদধারীদের মধ্যে যারা শপথের অধীন কি কি কারণে তাদের শপথ ভঙ্গ হয় এ বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু বলা না থাকলেও একজন শপথধারী ব্যক্তি কর্তৃক শপথের ব্যত্যয়ে কোনো কিছু করাকে ভাবার্থগতভাবে (ইমপ্লিকেশন) শপথ ভঙ্গ বোঝায়।
শপথ ভঙ্গের পরিণতি ভাবার্থগতভাবে পদ থেকে অবমুক্ত হওয়া বোঝালেও সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রণয়ন পূর্ববর্তী সংবিধান লঙ্ঘনের সাজা বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না। একজন সাংবিধানিক পদধারীর শপথ ভঙ্গ সংবিধান লঙ্ঘনের সমার্থক। উল্লেখ্য, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ নম্বর ৭ক সন্নিবেশন করতঃ বলা হয়- কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায়- এ সংবিধান বা এর কোনো অনুচ্ছেদ রদ, রহিত বা বাতিল বা স্থগিত করলে কিংবা তা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে; কিংবা এ সংবিধান বা এর কোনো বিধানের প্রতি নাগরিকের আস্থা, বিশ্বাস বা প্রত্যয় পরাহত করলে কিংবা তা করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে তার এ কাজ রাষ্ট্রদ্রোহিতা হবে এবং ওই ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে দোষী হবে।
অনুচ্ছেদটিতে আরো বলা হয়- এরূপ কার্যের সহযোগী বা উসকানিদাতা সমঅপরাধে অপরাধী হবে এবং এরূপ অপরাধের সাজা প্রচলিত আইনে অন্যান্য অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ দণ্ড।
একজন সংসদ সদস্য মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভ করলে তাকে মন্ত্রী পদের জন্য নির্ধারিত শপথ পাঠ করতে হয় এবং ওই শপথ পাঠ ব্যতিরেকে তিনি মন্ত্রী পদে আসীন হন না। সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৬৬(২)-এ যে সব অযোগ্যতার বিষয় উল্লেখ রয়েছে একজন সংসদ সদস্য ওই যেকোনো অযোগ্যতার অধীন হলে তিনি সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকতে পারেন না; তবে একজন সংসদ সদস্য কোনো অযোগ্যতার অধীন কি না তা নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত এবং এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আবার সংবিধানের বিধান অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হয়- যদি তিনি তার নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তৃতীয় তফসিলে নির্ধারিত শপথ গ্রহণ করতে ও শপথপত্রে স্বাক্ষর দান করতে অসমর্থ হন; তবে এ ক্ষেত্রে মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার আগে যথার্থ কারণ উল্লেখপূর্বক স্পিকারকে সময় বর্ধিত করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তা ছাড়া একজন সংসদ সদস্য সংসদের অনুমতি ব্যতিরেকে একাদিক্রমে ৯০ বৈঠক (দিবস) অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ শূন্য হয়। সংসদ ভেঙে গেলেও একজন সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হয়। সংবিধানের ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদে যে পরিস্থতির উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ওই দল থেকে পদত্যাগ অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোটদান একজন সংসদ সদস্যের পদ শূন্য হওয়ার কারণের উদ্ভব ঘটায়।
মন্ত্রী পদে আসীন যেকোনো ব্যক্তি যিনি সংসদ সদস্য হিসেবে ওই পদে আসীন হয়েছেন তিনি যে মুহূর্ত থেকে সংসদ সদস্য না থাকেন সে মুহূর্ত থেকে তার মন্ত্রী পদ শূন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকেন। অনুরূপ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে যদিও মন্ত্রীদের সবাই পদত্যাগ করেছেন বলে গণ্য হয়, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাদের উত্তরাধিকারীরা কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারাও নিজ নিজ পদে বহাল থাকেন। একজন মন্ত্রীর পদে বহাল থাকা প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে এবং প্রধানমন্ত্রী একজন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ করলে তার পক্ষে তা অমান্য করে পদে বহাল থাকার সুযোগ নেই।
একজন উপমন্ত্রীকে প্রতিমন্ত্রী অথবা একজন প্রতিমন্ত্রীকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ দেয়া হলে তাকে পুনরায় শপথ গ্রহণ করতে হয়, কিন্তু মন্ত্রীদের দফতর পুনর্বণ্টন করা হলে পুনঃশপথের কোনো আবশ্যকতা নেই।
সুপ্রিম কোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত অথবা অধস্তন বিচার বিভাগে বিচারক হিসেবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তিকে যখন উচ্চাদালতের বিচারক পদে নিয়োগ দেয়া হয় তখন এ নিয়োগটি সংবিধানের অনুচ্ছেদ নম্বর ৯৮-এর অধীন কার্যকর হয়। এরূপ বিচারককে অতিরিক্ত বিচারক বলা হয় এবং এরূপ অতিরিক্ত বিচারকের বিচারিককর্ম সন্তোষজনক হলে তাকে সংবিধানের ৯৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীন বিচারকরূপে নিয়োগ দেয়া হয়।
একজন অস্থায়ী বিচারককে যখন ৯৫ নম্বর অনুচ্ছেদের অধীন স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তখন তার জন্য শপথ গ্রহণ অত্যাবশ্যক, কিন্তু একজন অস্থায়ী বিচারক দীর্ঘ দিনের প্রচলিত প্রথানুযায়ী নিয়োগ পরবর্তী শপথ গ্রহণ করলেও এ ধরনের শপথ অত্যাবশ্যক কি না তা বিবেচনার অবকাশ রয়েছে।
সাংবিধানিক পদধারীদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, প্রধান বিচারপতি বা বিচারক, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা গুরুতর অসদাচরণ অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে সংসদীয় অভিসংশনের মাধ্যমে অপসারণযোগ্য। তা ছাড়া উপরোক্ত যেকোনো পদধারী যদি সংবিধান লঙ্ঘন করেন অথবা এমন কোনো কাজ করেন যা তাদের স্বপঠিত শপথের পরিপন্থী সে ক্ষেত্রে এটি তাদের জন্য গুরুতর অসদাচরণ। এখন প্রশ্ন- একজন সাংবিধানিক পদধারী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন কি না অথবা শপথের পরিপন্থী কোনো কাজ করেছেন কি না- এটি নির্ধারণের দায়িত্ব কার ওপর ন্যস্ত?
সংসদ একজন সাংবিধানিক পদধারী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন কি না অথবা তার শপথের পরিপন্থী কোনো কাজ করেছেন কি না অথবা শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে দায়িত্ব পালনে অপরাগ কি না এর যেকোনো বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; তবে এরূপ একজন সাংবিধানিক পদধারীকে পদ থেকে অপসারণ করতে হলে সিদ্ধান্তটি সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের অনুমোদিত হওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। তা ছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালত কোনো মামলা সংশ্লেষে যদি সিদ্ধান্ত দেয়- উপরোক্ত যেকোনো পদধারী সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন অথবা তার শপথের পরিপন্থী কোনো কাজ করেছেন অথবা শরীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যরে কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগ, সে ক্ষেত্রে সংসদের পক্ষে তা অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করার সুযোগ ক্ষীণ।
সম্প্রতি ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রবর্তিত উচ্চাদালতের বিচারকদের অপসারণ বিষয়ক সংসদীয় অপসারণ প্রথা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হলে বর্তমানে সংসদ যতক্ষণ পর্যন্ত না এ বিষয়ে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করছে ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে শূন্যতা পরিলক্ষিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বা অপর কোনো মন্ত্রীর সংবিধান লঙ্ঘন বা শপথের পরিপন্থী কোনো কাজ করা বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে কোনো মামলা সংশ্লেষে সিদ্ধান্ত দেয়া হলে তা গুরুতর অসদাচরণের সমরূপ। এ ধরনের কোনো সাংবিধানিক পদধারী এরূপ গুরুতর অসদাচরণের কবলে পড়লে তার পক্ষে পদত্যাগ যথার্থ বিবেচিত হয়; তবে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তটির যথার্থতা বিষয়ে সংসদে আলোচনা বারিত নয়। এরূপ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদধারীর সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে কি না তা নির্ধারণের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত; তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আদালতের সিদ্ধান্তের ভিন্নতর অবস্থান গ্রহণ একেবারে নেই বললেই চলে।
সংবিধান বা দেশের প্রচলিত আইনের কোথাও অসদাচরণ বা গুরুতর অসদাচরণের কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি; যদিও সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-তে অসদাচরণ বলতে- অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এমন আচরণকে বোঝানো হয়েছে যা একজন কর্মকর্তা অথবা ভদ্রলোকের পক্ষে অনুচিত।
আমাদের বিভিন্ন সাংবিধানিক পদধারীকে শপথ গ্রহণের সময় যে বাক্যসমষ্টি পাঠ করতে হয় তা অবলোকনে প্রতীয়মান হয়- সংবিধান বা আইন অনুমোদন করে না একজন সাংবিধানিক পদধারী এমন যেকোনো কাজ করলে তার অসদাচরণ বা গুরুতর অসদাচরণে অভিয্ক্তু হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
সংবিধান বা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন সাংবিধানিক পদধারী বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত একজন ব্যক্তির দায়িত্ব পালনের সময় সততাকে সমুন্নত রাখতে হয় এবং যেকোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি পরিহার করে চলতে হয়। যেকোনো সাংবিধানিক পদধারী তাকে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বেতন-ভাতা বহির্ভূত কোনো অর্থ বা দ্রব্যসামগ্রীর বিনিময়ে কোনো ব্যক্তিকে যদি কোনো সুযোগ-সুবিধা দেন তবে সেটি ঘুষ বা উৎকোচ হিসেবে বিবেচিত। এরূপ ঘুষ বা উৎকোচ দুর্নীতির সমার্থক। আবার দুর্নীতি অসদাচরণ বা গুরুতর অসদাচরণ হিসেবে পরিগণিত। অসদাচরণ বা গুরুতর অসদাচরণকে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এ ঘুষের সমার্থক হিসেবে অপরাধমূলক অসদাচরণ বলা হয়েছে। একজন সাংবিধানিক পদধারীর ক্ষেত্রে অনুরাগ বা বিরাগ অথবা কর্তব্য পালনে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রভাবিত হওয়া অথবা সরকারি কার্য ও সরকারি সিদ্ধান্তকে ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রভাবিত হতে দেয়ার প্রশ্ন তখনই দেখা দেয় যখন তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত অথবা পক্ষপাতদুষ্ট।
একজন সাংবিধানিক পদধারীর স্বপঠিত শপথের পরিপন্থী অথবা শপথের সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো কাজ আইনের দৃষ্টিতে অসদাচরণ বা গুরুতর অসদাচরণ। সংবিধান একজন সাংবিধানিক পদধারীর গুরুতর অসদাচরণকে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে। এরূপ গুরুতর অসদাচরণ সংবিধান লঙ্ঘনের সমার্থক। একজন সাংবিধানিক পদধারী দেশের যেকোনো সাধারণ নাগরিকের চেয়ে অনেক বেশি দায়িত্বশীল হবেন এটিই জনমানুষের প্রত্যাশা। একজন সাংবিধানিক পদধারী নির্বাচিত বা নিযুক্ত যাই হোন না কেন, তাকে অবশ্যই সংবিধান ও আইনকে সমুন্নত রেখে স্বপঠিত শপথ অনুযায়ী স্বীয় কার্য সমাধা করতে হয়। এর যেকোনো ধরনের ব্যত্যয় একজন সাংবিধানিক পদধারীর জন্য কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটালেও ক’জন সাংবিধানিক পদধারী এরূপ ব্যত্যয়ের সাথে সম্পৃক্ত নন এবং ক’জন ব্যত্যয় পরবর্তী অভিযুক্ত হয়ে পদ হারিয়েছেন এ হিসাবটি সঠিকভাবে করতে পারলে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব খুব কমই ঘটবে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]