লোকসানে শীর্ষে পিডিবি মুনাফা বেশি বিপিসির

লোকসানে শীর্ষে পিডিবি মুনাফা বেশি বিপিসির.

চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোকসানে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান ৬ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। অন্যদিকে মুনাফার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকায়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার আগামী অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের দিন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মুনাফা ও লোকসানের সাময়িক হিসাব দেওয়া হয়েছে।
নিট লোকসানে বিপিডিবি এবং মুনাফায় বিপিসি শীর্ষে থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম সমকালকে বলেন, বেশ কয়েক দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও এখন পর্যন্ত এর উৎপাদন খরচের চেয়ে বিক্রির দাম কম। এ কারণে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এই লোকসান। অন্যদিকে জ্বালানি তেলে বিপিসি মুনাফা করছে। যার প্রভাব পড়েছে তাদের নিট আয়ে।
গত অর্থবছরে বিপিডিবির লোকসানের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। ওই অর্থবছরে নিট লোকসান হয় ১১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোয় লোকসানের পরিমাণ কমে এসেছে। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৪৫ কোটি টাকার নিট মুনাফা করে সংস্থাটি।

চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ হিসাবে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে নিট লোকসানে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির নিট লোকসানের পরিমাণ ৬ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় এটি বেশি। ওই অর্থবছরে এটি ছিল ১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা হয় ৮৫৪ কোটি টাকার বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লষ্টিরা।

জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির গতকাল সমকালকে বলেন, টিসিবি ব্যবসা করে না। টিসিবি পণ্য কিনে সরকার নির্ধারিত ভর্তুকি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে। এতে মানুষ উপকৃত হন। এই ভর্তুকিকে লোকসান হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটি আসলে লোকসান নয়।
নিট লোকসানে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাতের আরেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিইআরইবি)। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান প্রায় ৪ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত সংস্থাটির নিট লোকসান দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। পঞ্চম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। প্রতিষ্ঠানটির নিট লোকসান ৫৭১ কোটি টাকা।
অন্যদিকে মুনাফার ক্ষেত্রে বিপিসির পরই অর্থাৎ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। সেতু কর্তৃপক্ষ চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৬৩ কোটি টাকার নিট মুনাফা করেছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সিপিএ) নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএ)। প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ৭৮২ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৫৪৭ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার অ-আর্থিক শ্রেণিভুক্ত ৪৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা তথ্যগুলো সাতটি খাতে ভাগ করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, গত ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান লাভ-লোকসান মিলিয়ে সার্বিকভাবে নিট লোকসানে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪১ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিকভাবে ১০৯ কোটি টাকার মতো নিট মুনাফা হয়েছিল। আগের কয়েকটি অর্থবছরে মুনাফার পরিমাণ ছিল আরও বেশি।

সমকাল