লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: মোদী সরকারের আমলে মুসলমানরা কেন ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত?

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: মোদী সরকারের আমলে মুসলমানরা কেন ভবিষ্যত নিয়ে আতঙ্কিত?

  • ১৬ মে ২০১৯   BBC Bangla
শওকত আলী
Image captionআসামে উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন শওকত আলী

সম্প্রতি ভারতে মুসলমানবিদ্বেষী তৎপরতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এর শাসনামলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটি মারাত্মক অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে। বিবিসি’র রজনী বৈদ্যনাথানের রিপোর্ট।

ভারতের নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের মাত্র কদিন আগে এ ঘটনাটি ঘটে।

সেদিন আসামের উত্তর-পূর্ব এলাকার মুসলমান ব্যবসায়ী শওকত আলী কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ বেশ কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল মানুষ তার ওপর হামলা চালায়।

আক্রমণকারীরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। তারপর ময়লা কাদার ওপর হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে।

“আপনি কি বাংলাদেশী?” তার ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে হামলাকারীদের একজন।

“আপনি এখানে গরুর মাংস বিক্রি করেন কেন?” মি. আলীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে এ প্রশ্ন করে আরেকজন।

শওকত আলীর এ লাঞ্ছনার ঘটনা দেখতে ওইখানে উৎসাহী অনেক লোকই ভিড় করেছিল। তবে আলীর সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসে নি। তারা মোবাইলে পুরো ঘটনাটির দৃশ্য ধারণ করছিল।

আরো পড়তে পারেন:

মশা আমদানি করে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানোর উপায়

গ্রিনল্যান্ড: যে দেশে বুধবার ‘গর্ভপাত দিবস’

যে নির্বাচনে মারা গেলেন পাঁচশো’র বেশি কর্মকর্তা

উদ্ধার হওয়া নবজাতকটিকে কার হেফাজতে দেয়া হবে?

ওই ঘটনার পরে গ্রামবাসী মি.আলীকে সহানুভূতি জানাতে এসেছিল
Image captionওই ঘটনার পরে গ্রামবাসী মি.আলীকে সহানুভূতি জানাতে এসেছিল

‘এটি আমার বিশ্বাসের ওপর আঘাত’

ঘটনার এক মাস পর। এখনো মি. আলী ঠিকমত হাঁটতে পারেন না।

আমি মি. আলীর সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে গেলাম। বাজার থেকে সামান্য দূরে শ্যামল সবুজ শস্যক্ষেত পার হয়ে তার বাড়ি। সেটিও সবুজে ঘেরা।

আটচল্লিশ বছর বয়সী লোকটি বিছানায় পা ভাঁজ করে বসেছিল। সেইদিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তার চোখ ছলছল করে উঠল।

“তারা আমাকে লাঠি দিয়ে মেরেছে, আমার মুখে লাথি মেরেছে,” মাথা ও পাঁজরের ক্ষতচিহ্নগুলো দেখিয়ে বলছিলেন মি. আলী।

তার পরিবার কয়েক দশক ধরে তাদের ছোট খাবারের দোকানটিতে ঝোলওয়ালা গরুর মাংস বিক্রি করে আসছেন, তবে আগে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

হিন্দুরা যেহেতু গরুকে পবিত্র মনে করে এজন্য ভারতের অনেক প্রদেশে গরুর মাংস বিক্রি করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে আসামে গরুর মাংস বিক্রি করা আইনত বৈধ।

শওকত আলী শুধু শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হননি, তার সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন। দুর্বৃত্তরা এই ধর্মপ্রাণ মুসলমান লোকটিকে শূকরের মাংস খেতে বাধ্য করেছে।

স্ক্রিনশট
Image captionমি. আলীকে শূকরের মাংস খাওয়ানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল

সেদিন তাকে তারা জোর করে শূকরের মাংস প্রথমে চাবাতে ও পরে গিলে খেতে বাধ্য করে।

“বেঁচে থাকার আর কোনো মানে হয় না আমার,” তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, “এটি আমার সমস্ত বিশ্বাসের ওপর আঘাত।”

আমাদের সাক্ষাতের দিন স্থানীয় মুসলমান কমিউনিটির দশ-বারোজন নেতা মি. আলীর খোঁজ নিতে তার বাসায় এসেছিলেন। তার এ বিবরণ শুনে তাদের মধ্যে কয়েকজন কেঁদে ফেলেন। তারা নিজেরাও এখন আর নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারছেন না।

আরেকটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে অনেকেই এ প্রশ্ন তুলেছেন যে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়, যাদের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ২০ লাখ, তাদের অধিকার এখানে ঠিক কতটা সমুন্নত রয়েছে?

গরুর মাংস বিক্রি করার কারণে বা বিক্রির সন্দেহে হামলার ঘটনা ভারতে বেড়েই চলেছে। শওকত আলীর ঘটনা এর সাম্প্রতিক উদাহরণ।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এর এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ এর মে থেকে ২০১৮ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ভারতের ১২ টি প্রদেশে ৪৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ জনই মুসলমান।

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রধান, মিশেল বাচেলে, তার বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন-হামলার ঘটনা বাড়ছে, বিশেষ করে মুসলমান এবং যারা ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনার শিকার, যেমন দলিত সম্প্রদায় (আগে যাদেরকে ‘অস্পৃশ্য’ বলা হত), তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।’

ভারতে স্বাধীনতার কাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় সব ধর্মের মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা এদেশের একটা প্রধান অনাকাঙ্খিত বিষয়।

তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এখন যারা এ দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তারা এসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ বিষয়ে তারা নীরবতার সংস্কৃতি পালন করছে।

এক সভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মুসলমানদেরকে 'উইপোকা' বলে সম্বোধন করেন।ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image captionএক সভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ মুসলমানদেরকে ‘উইপোকা’ বলে সম্বোধন করেন।

মাত্র কয়েকবছর আগে ভারতে এক নৃশংস গণধর্ষণের পরে যা ঘটেছিল সেটি এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ বটে।

গত বছরের জানুয়ারিতে ভারতের কাশ্মীর অংশের কঠুয়া জেলায়, আট বছর বয়সী এক মুসলমান মেয়ে ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার পথে অপহৃত হয়।

এক সপ্তাহ ধরে তাকে একটি হিন্দু মন্দিরের ভেতর আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়। এসময় তার উপর চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয় এবং শেষে তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়।

পুলিশ তাদের রিপোর্টে জানায়, যাযাবর বাকারওয়াল সম্প্রদায়কে (মেয়েটি ওই সম্প্রদায়ের) শিক্ষা দিতে কিছু হিন্দু লোক সংঘবদ্ধভাবে পরিকল্পনামাফিক এ কাজ করেছিল, যাতে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

এক বছর পার হয়ে গেছে। কঠুয়ার দুর্গম অঞ্চলে সেই মেয়েটির বাড়ি এখনো সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরায় রয়েছে।

‘তারা বলেছে, এটা মুসলমানের মেয়ে-একে মেরে ফেল, তাহলে ওরা ভয় পাবে আর এই এলাকা ছেড়ে চলে যাবে’, চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছিলেন মেয়েটির বাবা।

একসময় তাদের ছোট্ট মেয়েটি যে বাড়িতে থাকত সে বাড়ি ছেড়ে যেতে নারাজ তার বাবা-মা। যদিও তাদের নিরাপত্তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে।

“আমরা বাড়ির বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি, এখনো আমাদের জীবনের ঝুঁকি রয়ে গেছে,” মেয়েটির মা জানালেন। “আমরা বাইরে গেলে লোকজন আমাদেরকে অকথ্য গালাগাল করে, মারধর করার হুমকি দেয়।”

আট বছর বয়সী শিশুটির এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে হাজারো লোক রাস্তায় নেমেছিল, প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু দোষী প্রমাণিত হওয়া ওই আটজন হিন্দুর পক্ষ নিয়ে স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েকবার প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

তারা মেয়েটি ও তার অসহায় পরিবারের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার বদলে হত্যাকারীদের সমর্থন জানিয়েছে।

হত্যাকারীদের পক্ষে যারা রাস্তায় নেমেছিল তাদের মধ্যে চৌধুরী লাল সিং ও চন্দর প্রকাশ গঙ্গা নামে ক্ষমতাসীন বিজেপির দুই মন্ত্রীও ছিলেন।

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: তরুণ ভোটারদের ভাবনা

মি. সিং ওই সময় এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, “এই একটা মেয়ে মারা গেছে আর এখানে এত তদন্ত হচ্ছে। অথচ এখানে কত মেয়ে মারা যায়।”

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গণধর্ষণের ঘটনায় নিন্দা জানালেও তাঁর দলের ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেন নি। পরে সপ্তাহব্যাপী তীব্র বিক্ষোভের মুখে তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব এরপরও এসব ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

তিনি বলেন, “পার্টি চায়নি মি. গঙ্গা ও মি. সিং পদত্যাগ করুক। তারা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ মিডিয়া এমনভাবে তাদেরকে উপস্থাপন করেছে যেন তারা ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েছেন।”

এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এমন আরো বেশ কিছু ঘটনা আছে যেখানে বিজেপির সদস্যরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধা জানিয়ে প্রকাশ্যে দাঙ্গাবাজদের পক্ষ নিয়েছে।

বিজেপি হিন্দু জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। এ দলটিতে এমন বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা আছেন যারা মনে করেন ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। যদিও দলটির নেতারা বারবারই বলেছেন, তারা সংখ্যালঘু বিদ্বেষী নন।

২০১৫ সালে, মোহাম্মদ আখলাক নামের পঞ্চাশ বছর বয়সী এক মুসলমানকে গরু জবাই করার সন্দেহে ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হত্যাকারীদের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নিতে দেখা গেছে।

বিজেপির এই বিতর্কিত নেতা, ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্যের জের ধরে সম্প্রতি ভারতের নির্বাচন কমিশন যার নির্বাচনি প্রচারণা কয়েকদিনের জন্য স্থগিত করেছে, তাকে মোদীর সঙ্গে বহুবার একই মঞ্চে দেখা গেছে।

সিভিল এভিয়েশন মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহা, যিনি মোদির কেবিনেটের অন্যতম সদস্য, সম্প্রতি বিবিসিকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে একজন মুসলমান গরু ব্যবসায়ীকে হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড থেকে বাঁচাতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অর্থ দিয়েছেন তিনি।

বিবিসি হিন্দির সাংবাদিক যুগল পুরোহিতের নেয়া এক সাক্ষাৎকারে মি. সিনহা বলেন, অভিযুক্তদের বাঁচাতে তিনি সাহায্য করেছেন কারণ তারা সবাই বিজেপির সদস্য এবং তিনি মনে করেন তাদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে।

লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট অরুন্ধতী রায়, বিজেপি সরকারের সমালোচনায় যিনি সবসময় সোচ্চার, তিনি মনে করেন, একটি গোষ্ঠী এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস পাচ্ছে কারণ তারা ওপরমহল থেকে সুরক্ষাকবচ পেয়েছে। তারা জানে যে তাদের কিছুই হবে না।

লোকসভা নির্বাচন ২০১৯: ভারতে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াটা কীরকম?

তিনি বললেন, ‘শুধু নেতারা যা করছে তা নয়, মানুষকে ক্রমাগত যেসব বিদ্বেষ ও উস্কানি দেওয়া হচ্ছে তা তাদের মনে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে সেটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যে বিষ তাদের অন্তরে সহজেই প্রবেশ করানো হচ্ছে তা কিন্তু সহজে বের করা যাবে না। এটা অনেক কঠিন কাজ।’

তবে বিজেপির মুখপাত্র নলিন কোহলি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন তার দলের নীতির সঙ্গে বিদ্বেষমূলক অপরাধ বা ‘হেইট ক্রাইম’ এর কোনো সম্পর্কই নেই। তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টগুলিতে মিথ্যা পরিসংখ্যান ব্যবহার করে কাল্পনিক ইস্যুকে বাস্তব প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।

মি. কোহলি আরো বলেন, মোদি সরকারের সময়ে বিজেপি সব ধর্মের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছে। এটি কোনো সাম্প্রদায়িক দল নয়। বিজেপি সর্বভারতীয় দল, ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের দল।

তবে ভারতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে, বিজেপি দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হলে এ দেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের (মেজরিটারিয়ান) দেশে পরিণত হবে।

দলটির ইশতেহারে বলা হয়েছে, ভারতে অবৈধভাবে বসবাসরত সব বাংলাদেশীদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে।

দলটি বেশ কিছু ধর্মের অনুসারীদের আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব ধর্মের মধ্যে রয়েছে- সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, পার্সি এবং জৈন ধর্মাবলম্বীরা। তবে লক্ষ্য করার মত ব্যাপার হল, মুসলমানরা এ তালিকায় নেই।

বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সভা-সমাবেশে মুসলমান অভিবাসীদের ‘উইপোকা’, ‘সন্ত্রাসী’ বলেছেন। শুধু তাই-ই নয়, তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নানা ধরনের বক্তব্যও দিয়েছেন তিনি।

আসামের গোয়ালপাড়া জেলায় গ্রামবাসীদের একটি অংশ গোলবৈঠকে বসেছে।

তাদের অনেকেরই হাতে পরিবারের সদস্যদের ছবিসম্বলিত কাগজ।

গত বছর তাদেরকে বলা হয়েছে তাদের পারিবারিক ইতিহাস নথিভুক্ত করতে এবং প্রমাণ করতে যে তারা ভারতীয়। এক্ষেত্রে তারাই ভারতীয় হিসেবে গণ্য হবে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার একদিন আগে, অর্থাৎ ২৪শে মার্চ ১৯৭১ এর আগে আসামে প্রবেশ করেছে।

আসাম প্রদেশের এক শিশু নিজের পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে
Image captionআসাম প্রদেশের এক শিশু নিজের পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে

চার সন্তানের মা উফান তার হাতের কাগজটি খুলল। সেখানে সবচেয়ে ওপরে তার স্বামীর ছবি, যিনি গত বছর মারা গেছেন। এর নিচে তার চার সন্তানের ছবি।

উফানের পরিবারের জন্ম ভারতে হলেও তাদের কারো নাম সরকারি নথিভুক্ত নয়। এনআরসি’তে (ন্যাশনাল রেজিষ্ট্রার অব সিটিজেনস) তারা কেউ নাম লেখাননি।

চল্লিশ লাখ লোক-যাদের অধিকাংশই মুসলমান- এ তালিকাভুক্ত নন।

উফানের ভয় এই নিয়ে যে, যে দেশকে সে নিজের দেশ বলে জানে সেখান থেকে তাকে হয়ত বের করে দেয়া হবে।

একই আশঙ্কায় রয়েছেন মোহাম্মদ শামসুল। তিনি জানালেন, তার বাবা এবং দাদা দুজনেরই জন্ম আসামে। সরকারি নথিতে তাদের নামও রয়েছে। সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও এনআরসি’তে তার নাম নেই।

‘আমরা সারাক্ষণ আতঙ্কে রয়েছি।আমাদের ভয় হয় যে, আজ রাতেই হয়ত পুলিশ এসে আমাদের ধরবে। আমার পরিবারকে কোন শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যাবে।’

যদিও বিজেপি বলছে তাদের এ আইন শুধুমাত্র অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু এটি ব্যবহার করে মুসলমানদের তাড়ানোর আশঙ্কা থেকেই গেছে।

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই ভারতের শক্তি। ভারতের সংবিধানে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনের কথা বলা হয়েছে। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে ভারতের বর্তমান শাসকদল দেশটির এই অসাম্প্রদায়িক নীতির আর তোয়াক্কা করছে না।