
আবু হেনা মোহাম্মদ (আ হ ম) মুস্তফা কামাল। পরিচিত লোটাস কামাল নামে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট; পাঁচবার এমপি ছিলেন কুমিল্লা-১০ আসনের। সামলেছেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। ক্রিকেট সংগঠক হিসেবেও রয়েছে খ্যাতি। সব পরিচয় ছাপিয়ে লোটাস কামাল একজন বিশেষজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। অথচ তাঁর হাতেই দেশের অর্থনীতি বলা চলে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে!
লোটাস কামাল শেয়ার কারসাজির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন। মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়েছেন বিপুল অর্থ। মেগা প্রকল্প দেখলেই ‘মাথা নষ্ট’ হয়ে যেত তাঁর। প্রয়োজন না থাকলেও কুমিল্লায় গ্রামের বাড়ির পাশে তিনি বাগিয়ে নেন ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ এবং ‘নলেজ পার্ক’ প্রকল্প। স্বজনের মাধ্যমে এসব প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে লোটাস কামাল তকমা পেয়েছেন ‘লুটপাট বিশেষজ্ঞের’।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানান, স্বজনপ্রীতিতে ওস্তাদ লোটাস কামালের কাছে গুরুত্বহীন ছিলেন দলের ত্যাগীরা। মন্ত্রিত্ব ছিল তাঁর টাকা বানানোর মেশিন। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে গভীর সখ্য রেখে নিজের ও স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লোপাট এবং পাচার করেছেন। সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) কে এম সিংহ রতনকে কামাল ‘ছায়ামন্ত্রী’ বানিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতেন আর্থিক ও ব্যাংক খাত। পেতেন তদবির, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যের কমিশন। ভাইয়ের মাধ্যমে কবজায় রেখেছেন দলীয় পদ-পদবি। টেন্ডার, টিআর ও কাবিখা থেকে হাতিয়েছেন অর্থ।
মুস্তফা কামালের বাবা বাবরু মিয়া ছিলেন দিনমজুর। এলাকায় লোটাস কামাল পরিচিত ছিলেন আদম ব্যবসায়ী হিসেবে। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন কুমিল্লা-৯ আসনের এমপি অধ্যক্ষ আবুল কালাম মজুমদার মারা গেলে ভাগ্য খোলে তাঁর। রাজনীতিতে এসে ১৯৯৬ সালে নৌকার টিকিটে প্রথমবার এমপি হন কামাল। ২০০১ সালে পরাজিত হলেও, ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তাঁর দল আওয়ামী লীগের মতোই এমপি হয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৪ সালে পরিকল্পনা এবং ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বিসিবি সভাপতি ও ২০১৪ সালে আইসিসির সভাপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই চিকিৎসার অজুহাতে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন লোটাস কামাল।
সম্পদ অর্জনে ‘স্ত্রীভক্ত’ কামাল
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় কামাল নিজের চেয়ে স্ত্রী কাশমেরী কামালের সম্পদ বহু গুণ বেশি দেখিয়েছেন। গত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় কামালের অস্থাবর সম্পদ ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। কিন্তু স্ত্রীর দেখিয়েছেন ৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা। নিজের স্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য ২ কোটি ৩০ লাখ হলেও, স্ত্রীর রয়েছে ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দান করায় সম্পদ কমেছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের ২ কোটি ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা মেয়ে নাফিসা কামালকে এবং স্ত্রী, মেয়ে ও পাঁচ নাতি-নাতনিকে দিয়েছেন ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তি। সূত্র জানায়, হলফনামায় উল্লেখ করা কামালের সম্পদের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে স্বজনের নামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন তিনি।
ঘরের পাশে ‘লুটপাট প্রকল্প’
নির্বাচনী এলাকায় প্রকল্প বাগিয়ে নিতে এগিয়ে ছিলেন কামাল। জানা যায়, পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পে তিনি শর্ত জুড়ে দেন, কুমিল্লা জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করলেই কেবল অনুমোদন দেবেন। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে বাড়ির পাশে সাড়ে ১০ একর জমিতে হয় শেখ কামাল আইটি সেন্টার। কুমিল্লাসহ সাত জেলায় প্রায় ৫৩৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গ্রামীণ এলাকায় লোটাস কামালের ইচ্ছাধীন এ প্রকল্প কোনো কাজেই আসেনি। প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ থেকে ইট-বালু-রডসহ সব ধরনের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে তাঁরই গড়া সিন্ডিকেট। বিনিময়ে তিনি পেয়েছেন মোটা অঙ্কের কমিশন। একটি মেগা প্রকল্প থাকার পরও কামাল ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর তৎকালীন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে দিয়ে ৭ দশমিক ৮৮ একর জমিতে প্রায় ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে করিয়ে নেন নলেজ পার্ক। জমি অধিগ্রহণ শেষে সীমানা দেয়াল ছাড়া কিছুই হয়নি পার্কের। শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের পিডি হুমায়ুন কবির সমকালকে বলেন, ‘সামান্য কাজ বাকি আছে। শিগগির উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ দিতে পারব। তবে পার্শ্ববর্তী নলেজ পার্কের নির্মাণকাজ আদৌ হবে কিনা সংশয় রয়ে গেছে।’
জানা যায়, ২০১৩ থেকে গত জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও আদর্শ সদর উপজেলায় মোট ৪২টি খাল খননের জন্য ১৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কামালের নির্দেশে তাঁর সিন্ডিকেট কোনো কাজ না করেই পুরো টাকা লোপাট করেছে– এমন অভিযোগ এনে গত ১৪ অক্টোবর আদালতে মামলা করেছেন সদর দক্ষিণ জেলা কৃষক সমবায় ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মুহম্মদ আখতার হোসাইন। এতে কামালের ছোট ভাই গোলাম সারোয়ার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাবলু, এপিএস মিজানুর রহমান, জনপ্রতিনিধিসহ ৪৮ জনের নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ২৫ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
সাবেক এমপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, লোটাস কামাল কখনও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। ভোট ডাকাতি করে এমপি হয়েছেন। তিনি এলাকায় পারিবারিক সিন্ডিকেট গড়েছেন। কামালের নির্দেশে গণহারে আমাদের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বছরের পর বছর নেতারা বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি।
সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলায় গত সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়েছেন কামালের অনুসারীরা।
কামালের কারসাজিতে শেয়ারবাজারে ধস
২০০৯-১০ সালে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় সাবেক অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ছিলেন আলোচিত নাম। ২০১০ সালে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে ভয়াবহতম ধসের পর ২০১১ সালে সরকার প্রয়াত বিশিষ্ট ব্যাংকার খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। ওই কমিটির প্রতিবেদনে কামালের তৎকালীন মালিকানাধীন সিএসএম কামাল টেক্সটাইল নামক লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দর কীভাবে ১৬ গুণ পর্যন্ত বেড়েছিল, তার বিস্তারিত উঠে এসেছে।
ওই তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, লোকসানি হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানিটির শেয়ারদর যখন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল, তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে কোম্পানিটির কাছে রুটিন মাফিক ‘দর বৃদ্ধির কোনো কারণ আছে কিনা’– এমন চিঠি দেওয়া হয়। মুস্তফা কামাল তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য এবং অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি থাকায় তাঁর কোম্পানির বিষয়ে কোনো তদন্ত করা হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০৯-১০ সালের যেসব ইস্যু ব্যবহার করে কোম্পানি-সংশ্লিষ্টরা তাদের শেয়ারদর প্রভাবিত করেছিলেন, তার সবটাই ব্যবহার করেছিলেন কামাল। যেমন– ওই দুই বছরে কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে যাচ্ছে– এমন খবর ছড়ালেই সংশ্লিষ্ট শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছিল। তৎকালীন সিএমসি কামাল টেক্সটাইল নামক তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির মূল মালিকানা ছিল মুস্তফা কামালের। এভাবে শেয়ারদর বাড়াতে লোকসানি কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিলেন তিনি। কোম্পানির সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের খবরে তখন শেয়ারের দর হু-হু করে বেড়েছিল।
এ সুযোগও নেন। আবার রাইট শেয়ার বিক্রি করে মূলধন বৃদ্ধির খবরেও দর বেড়েছিল। ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারকে ভেঙে ১০ টাকার ১০টি শেয়ারে রূপান্তর করেও দর বাড়াতে সহায়তা করেন। কামাল এসব সুযোগও নিয়েছিলেন। এভাবে তাঁর কোম্পানির শেয়ারদর অভিহিত মূল্যের তুলনায় ১৬ গুণ হয়ে যায়। এক সময় যা অভিহিত মূল্যের তুলনায় অর্ধেকে কেনাবেচা হয়েছিল। এমন দর বৃদ্ধির পর কামাল এবং তাঁর পরিচালক সদস্যরা স্টক ডিভিডেন্ড হিসেবে পাওয়া শেয়ারগুলো প্রায় ২১ কোটি টাকা মূল্যে বিক্রি করেছিলেন।
ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত দলে এমন অভিযোগ আনা হলেও ঢাকা রিপোর্টার্স ফোরামের অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা কামাল সিএমসি কামাল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, কোম্পানিতে তাঁর ও পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় থাকা মূল শেয়ারের একটিও বিক্রি করেননি। শুধু স্টক ডিভিডেন্ড হিসেবে পাওয়া শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। তবে সমকালের প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে কামাল স্বীকার করেন, শুধু বোনাস শেয়ার বিক্রি করে ২১ কোটি টাকা পেয়েছেন, যেখানে কোম্পানিতে তাদের মোট বিনিয়োগ ছিল ৭ কোটি টাকা। এমন বিপুল অঙ্কের মুনাফা পেতে শেয়ারদর বাড়ানোর সব আয়োজন করেছিলেন কিনা– এমন প্রশ্ন তোলার পর তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন তিনি।
অভিযোগ আছে, শেয়ার কেনাবেচা করে বিপুল অঙ্কের মুনাফা করেছিলেন কামাল। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে সমালোচনা এড়াতে কোম্পানিটি আলিফ গ্রুপ নামক একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের কাছে বিক্রি করেন তিনি। এর পর সাবেক অর্থমন্ত্রী নিজ নামে শেয়ার ব্যবসা না করলেও মেয়ে নাফিসা কামাল নানা কারসাজি গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলে শত শত কোটি টাকা মুনাফা করেছেন, যার বড় অংশ দুবাইতে পাচার করে সেখানকার রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো সিন্ডিকেট
লোটাস কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের রিক্রুটিং এজেন্সি অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ (আরএল-১১৩) এবং তাঁর মেয়ে নাফিসা কামালের এজেন্সি অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৪৫৭) মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সিন্ডিকেটে ছিল। নানা অনিয়মে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। ২০১৫ সালে দেশটিতে ১০ বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর কাজ পায়। সেবারও সিন্ডিকেটে ছিল অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ। সেবার প্রত্যেক কর্মীর সরকার নির্ধারিত ব্যয় ৩৭ হাজার টাকা হলেও, এজেন্সিগুলো ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়।
২০২২ সালে যে সিন্ডিকেট হয়, তাতে আগের বারের ১০ এজেন্সির সাতটি বাদ পড়ে। কিন্তু মন্ত্রিত্বের জোরে টিকে যায় অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ। যদিও কামাল মন্ত্রী পদে থাকায় ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন কাশমেরী কামাল।
২০২২ সালের ৪ জুন সমকাল অনুসন্ধানে জানিয়েছিল, কোন ২৫ এজেন্সি কাজ পেতে যাচ্ছে? তবে তখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়নি এজেন্সি তালিকা। এই এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেট নামে পরিচিত। ‘বঞ্চিতদের সিন্ডিকেটবিরোধী আন্দোলনে’ পরবর্তী সময়ে আরও ৭৫ বেসরকারি এবং একটি সরকারি এজেন্সিকে কর্মী পাঠানোর কাজ দেয় মালয়েশিয়া। এ সুযোগে লোটাস কামালের মেয়ের নামে গড়া প্রতিষ্ঠান অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল সিন্ডিকেটে ঢুকে যায়। তাদের দুই প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়ায় ১১ হাজার ৩৮৭ কর্মী পাঠানোর চাহিদাপত্র পায়। টিকিট জটিলতায় এবং অন্যান্য কারণে তাদের একাংশ যেতে পারেনি।
জনশক্তি ব্যবসায়ী সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, লোটাস কামালের দুই প্রতিষ্ঠানের অন্তত ১০ হাজার কর্মী গেছে। তবে তারা নিজেরা পাঠিয়েছে বড়জোর শ’খানেক। অটো অ্যালোকেশনে পাওয়া চাহিদাপত্র অন্যান্য এজেন্সির কাছে বিক্রি করেছে। প্রত্যেক কর্মীর জন্য ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাহিদাপত্র আনা জনশক্তি ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিবন্ধন, ছাড়পত্র, সরকারি বিভিন্ন ফি বাবদ প্রত্যেক কর্মীর সাড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এজেন্সিগুলোর। বাকি ১ লাখ ৪২ হাজার হিসাবে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা নিয়েছে এজেন্সিগুলো। এতে ১৪২ কোটি টাকা আয় করে লোটাস কামালের দুই এজেন্সি। এর মধ্যে কত টাকা নিজেরা রেখেছে, কত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকদের দিয়েছে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি জনশক্তি ব্যবসায়ীদের সূত্র।
মালয়েশিয়ায় থাকা জনশক্তি ব্যবসায়ী শফিক চৌধুরী, যাঁর রিক্রুটিং এজেন্সি নেই, তিনি রাখঢাক ছাড়াই সমকালকে বলেন, লোটাস কামালের এজেন্সির মাধ্যমেও কর্মী পাঠিয়েছি। প্রত্যেক কর্মীর জন্য দেড় লাখ টাকা গুনে দিয়েছি। টাকা কখনও তাদের হাতে দিয়েছি, কখনও তাদের ম্যানেজারদের কাছে দিয়েছি। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের ঘটনায় দায়ের মামলায় আসামি করা হয়েছে লোটাস কামালকে।
ছায়ামন্ত্রী রতন, সিন্ডিকেটের হোতা ভাই
২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আছেন লোটাস কামাল। প্রথমে দীর্ঘ ১০ বছর আহ্বায়ক এবং পরে দুই দফায় সভাপতির পদ দখলে রেখেছেন তিনি। কাগজে-কলমে মুস্তফা কামাল এমপি হলেও নির্বাচনী এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছেন ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে তাঁকে ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান করেন তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান সারোয়ার তাঁর গাড়িচালক আবদুর রাজ্জাক ও বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদের সহায়তায় লালমাই পাহাড়ে মাটিকাটা সিন্ডিকেট থেকে চাঁদা তুলেছেন। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টিআর-কাবিখার টাকা লুটেছেন। জুনের প্রথম সপ্তাহে সারোয়ার কানাডা গিয়ে আর ফেরেননি। অভিযোগ রয়েছে, কামালের সিন্ডিকেটকে ম্যানেজ না করে কেউ ইউপি সদস্যও হতে পারেননি। জনপ্রতি একজন চেয়ারম্যানকে ৩০-৪০ লাখ এবং ইউপি সদস্যদের ৫ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে নিয়েছেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা।
২০১৭ সালে নবগঠিত লালমাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করেন বড় ভাই আবদুল হামিদকে। আর সাধারণ সম্পাদক করেন এপিএস কে এম সিংহ রতনকে। গত বছর হামিদের ছেলে ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান ওরফে শাহীনকে কেন্দ্র দখলের মাধ্যমে লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। রতনকে নাঙ্গলকোট এলাকার দায়িত্ব দেন কামাল। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর অসুস্থতার অজুহাতে অর্থমন্ত্রী এলাকায় আসা বন্ধ করে দেন। তখন রতনই ছিলেন ছায়ামন্ত্রী। দলীয় পদ-পদবি ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, সরকারি চাকরি ও বদলির নামে ঘুষ বাণিজ্য করেছেন রতন। তাঁরও দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে। রতন ছাড়াও একান্ত সচিব (পিএস) মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম ঢাকায় লোটাস কামালের নির্দেশে ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে জানা গেছে।
২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর একনেক সভায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাস সম্প্রসারণসহ অধিকতর উন্নয়নে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, কামাল পরিকল্পনামন্ত্রী থাকায় ওই প্রকল্প পাস হওয়ার আগেই তাঁর ভাই গোলাম সারোয়ার দলীয় নেতাকর্মীর মাধ্যমে পাহাড়-টিলা, জঙ্গলঘেরা জমি নামমাত্র দামে কিনে পরে অধিগ্রহণের সময় চড়া দামে বিক্রি করেন। প্রায় ৪৭১ কোটি ১১ লাখ ২২ হাজার টাকায় ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জানা যায়, মন্ত্রীর ভাইয়ের সিন্ডিকেট এ প্রকল্প থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোপাট করেছে।
ব্যাংক হিসাব জব্দের আগেই সরানো হয় টাকা
গত ২২ আগস্ট মুস্তফা কামাল, তাঁর স্ত্রী কাশমিরী কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামালের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়। সূত্রের দাবি, দেশে-বিদেশে মুস্তফা কামাল ও তাঁর স্বজনের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। সরকার পতনের আগেই কামাল ব্যাংক, রাজধানীর বাসা-অফিস থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার সরিয়ে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে লোটাস কামাল ও তাঁর ভাইদের মোবাইল নম্বরে কল দিলে রিসিভ হয়নি। মেসেজ পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। হোয়াটঅ্যাপ কলও ধরেননি।
samakal
His extreme greed is explained by the fact that his father was a “day laborer”, so he came from a poor family. Poverty makes some people turn to religion, while others turn to thievery if/when they get a chance. The article says that he “gave away” a lot of his ill-gotten money to his wife, children and family. Don’t be so naive that he (or others like that) are doing it out of love. This is just the strategy of a big-time thief – to distribute the stolen money into different people, different accounts and different places, so that he can claim he himself has very little wealth. But, what I fail to understand is why this corrupt AL people had to steal millions and millions of dollars. What will they do with so much money. Even their 10 generations will not be able to spend so much money. Amazing!