Prothom Alo
ঢাকা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত আলোচনায় কী কী বিষয়ে সমঝোতা হলো, তা বিশদভাবে জানার ও বোঝার চেষ্টা করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দুজনের একান্ত আলোচনায় কোন কোন বিষয়ে কী কথা হয়েছে, সে সম্পর্কে জনগণকে বিস্তারিত জানানো উচিত বলেও মনে করে দলটি।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বেলা ২টা) অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দুজন একান্তে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনার পর ওই হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরাই তাঁদের সন্তুষ্টির কথা জানান।
এ বৈঠক নিয়ে শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এনসিপি বলেছে, নির্বাচন প্রশ্নে সরকার কেবল একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে বলে বারবার প্রতীয়মান হচ্ছে। দলটি মনে করে, লন্ডনের বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ–সংক্রান্ত আলোচনা যতটুকু গুরুত্ব পেয়েছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রধান দাবি তথা বিচার ও সংস্কার ততটুকু গুরুত্ব পায়নি। জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, জুলাই সনদ কার্যকর এবং বিচারের সুস্পষ্ট পথনকশা ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন গণ-অভ্যুত্থানকে স্রেফ একটি ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে পরিণত করবে বলেও মনে করে দলটি।
বিশদভাবে জানার চেষ্টা

এনসিপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের বিচার, রাষ্ট্র সংস্কারের জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো বিষয়গুলো মানুষের কাছে এখন প্রধান বিবেচ্য বিষয়। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের একান্ত আলোচনায় এ বিষয়গুলো স্থান পেয়েছিল কি না, কিংবা কী কী বিষয়ে আলোচনা বা সমঝোতা হলো, সেটি জানার অধিকার দেশের মানুষের আছে। একান্ত আলোচনার বিষয়বস্তু গোপন রাখা হলে মানুষের মধ্যে নানা সন্দেহ ও সংশয় তৈরি হতে পারে। তাই সরকার এবং বিএনপি—দুই পক্ষ থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত।
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের একান্ত আলোচনার বিষয়বস্তু নানা মাধ্যম থেকে জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান এনসিপির ওই তিন নেতা। তবে প্রধান উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতির যে শর্তের কথা বলেছেন, সেটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন তাঁরা।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের তারিখের মতো সিদ্ধান্ত দেশের মাটিতে বসে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নিলে ভালো হতো। বিদেশের মাটিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য ভালো নয়। এ ছাড়া লন্ডনের বৈঠকে একান্তে যে আলাপ, তার বিষয়বস্তু নিয়ে জনমনে কৌতূহল রয়েছে। দেশ যেহেতু একটি ক্রান্তিকাল পার করছে, সে কারণে যেকোনো আলোচনার বিষয় জনগণকে স্পষ্টভাবে জানানো জরুরি।
অগ্রাধিকারে নিবন্ধন
এই মুহূর্তে এনসিপির প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার শর্ত পূরণ করা। কারণ নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে ২২ জুন। এই সময়ের মধ্যে দলটিকে শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করতে হবে।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে) থাকতে হয়। পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিষয় উল্লেখ থাকতে হয়।
এরই মধ্যে প্রায় ১০০ উপজেলা ও ২০টি জেলায় সমন্বয় কমিটি করেছে এনসিপি। পাশাপাশি জেলা–উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ও নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি দ্রুতই দলের সাধারণ সভায় অনুমোদিত হবে।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা দেশে আমরা পর্যাপ্তসংখ্যক কার্যালয় ও সমন্বয় কমিটি করেছি। এখন গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।’