- গোলাম মাওলা রনি
- ২৩ জুন ২০২২
র্যাব সম্পর্কে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা কখন হয়েছিল মনে করতে পারছি না। তবে দিনটির কথা বিলক্ষণ মনে আছে। ঘটনার দিন আমি মগবাজারে আমার এক ব্যবসায়িক বন্ধুর অফিসে গিয়েছিলাম। ভদ্রলোক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং বাংলাদেশের তৎকালীন সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ব্র্যান্ডের টেলিভিশন নির্মাণ কারখানার মালিক ছিলেন। ফলে চাঁদাবাজ ও গুণ্ডাপাণ্ডাদের জন্য তিনি এবং তার অফিসটি ছিল রীতিমতো হটস্পট। তিনি আপাদমস্তক ভালো মানুষ এবং কারো সাথেই ঝামেলায় জড়াতেন না। ফলে কেউ চাঁদা দাবি করলে অনুনয় বিনয় করে চাঁদাবাজদের মন নরম করার চেষ্টা করতেন এবং বাবা-সোনা বলে অথবা চা-নাশতা করিয়ে যত কম টাকায় দফারফা করা যায় সেই চেষ্টা করতেন।
আমি সেদিন তার অফিসে গেলাম যেদিন সেখানে মনে হলো চাঁদের হাট বসেছে। অফিসের সবাই বেজায় খুশি এবং আমার বন্ধুটি খুশিতে আটখানা হয়ে এমন ভাব দেখাতে লাগলেন যা দেখে মনে হলো তিনি কোনো পরশপাথর পেয়ে গেছেন অথবা জান্নাতের আবেহায়াত অথবা সরাবান তহুরা পান করেছেন। আমি তার খুশির কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি প্রথমে শিশুর মতো কাঁদলেন তারপর আবার পাগলের মতো হাসলেন। কিছুক্ষণ পর সম্বিত ফিরে পেয়ে বললেন- ভাই! আমি খুব গরিব মানুষের সন্তান। আমার মা তার জীবন বাজি রেখে আমাকে বুয়েটে পড়িয়েছেন। লেখাপড়া শেষে বড় চাকরি পেয়ে মায়ের কাছে গেলাম সালাম করার জন্য। মা আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন, বাবা কথা দাও, জীবনে এমন কোনো কাজ করবে না যার কারণে লোকজন তোমার মাকে উদ্দেশ করে গালি দেয়। কথাটি বলে তিনি আবার কান্না শুরু করলেন।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। আমি বুঝতে পারলাম না আসলে কী ঘটেছে বা তিনি বলতে চাচ্ছেন। সুতরাং কোনো প্রশ্ন না করে আমি নীরব থাকলাম। তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, গতকাল এক চাঁদাবাজ এসেছিল। সে অফিসে ঢুকেই রিসিপশনে বসা মেয়েটিকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয় এবং আমার নাম ধরে বলতে থাকে খা…কীর পোলা অমুক কোথায়। আমি আমার রুমে বসে গালিটি শুনতে পাই। জীবনে প্রথম আমার মাকে নিয়ে গালি এবং তাও আমার কারণে এবং আমার অফিসে। আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল। আমি সারা জীবনের কাপুরুষতা, দুর্বলতা এবং ভীরুতার খোলস ছেড়ে এক লাফে রুম থেকে বের হয়ে এলাম বটে কিন্তু জন্মগত শিক্ষার কারণে চাঁদাবাজের মতো উঁচু গলায় কিছুই বলতে পারলাম না। তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে রুমে নিয়ে গেলাম।
আমি চাঁদাবাজকে বললাম, কত টাকা চাঁদা চাও। সে উত্তরে বলল, এক লাখ টাকা। আমি বললাম, দুই লাখ টাকা দেবো। তবে একটা শর্ত আছে। চাঁদাবাজ বলল, কী শর্ত। আমি বললাম, প্রথমে বলো তুমি কার লোক। সে পরিচয় দিলো। এরপর আমি বললাম, তোমার বসকে আসতে বলো। আমি তার হাতে দুই লাখ টাকা দেবো আর সে না এলে মেরে ফেললেও একটি পয়সা দেবো না। আমার দৃঢ়তা দেখে চাঁদাবাজ কী বুঝল বলতে পারব না। সে তার বসকে ফোন করে পুরো ঘটনা জানাল এবং সেই বস আধা ঘণ্টার মধ্যে আমার অফিসে এসে পৌঁছাল। আমি চাঁদাবাজদের বসকে বললাম, দুই লাখ টাকা দেবো! কিন্তু আপনার কাছে বিচার চাই। আপনার লোক আমার মাকে কেনো গালি দিলো। লোকটি আমার কথা শুনে তার পাণ্ডাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিলো এবং আমাকে খুশি করার জন্য চড়থাপ্পড় মারতে উদ্যত হলো। আমি কথা না বাড়িয়ে চাঁদার টাকা দিয়ে দিলাম। গতকালের সেই ঘটনার জন্য সারা রাত ঘুমাইনি। কিন্তু সকালে পত্রিকার খবর দেখে অন্তর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। পত্রিকা লিখেছে, র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নান নিহত। এই খবরে আমাদের অফিসে আজ ঈদের আনন্দ। আমি র্যাবের জন্য দোয়া করছি এবং কোনো দিন যদি রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য কিছু করতে হয় তবে আমি আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে সব কিছু করব।
আমি আমার বন্ধুর উল্লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে জীবনে প্রথমবারের মতো র্যাব সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারণা পোষণ শুরু করলাম। র্যাবের কালো পোশাক, কালো চশমা, কালো গাড়ি এবং মাথায় অদ্ভুত কালো পাগড়ি আমার এর আগে একদম ভালো লাগত না। কিন্তু সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের ঘটনা শোনার পর আমার মধ্যে র্যাবের কালো রঙ নিয়ে যে অ্যালার্জি ছিল তা চলে গেল। আগে র্যাবের গাড়ি দেখলে ভয় লাগত। কিন্তু সেই ভয় ভালোবাসা ও নির্ভরতায় পরিণত হলো। আমার বাসভবনটি ঢাকা কলেজের গলির একদম শেষ মাথায়। ফলে নিউ মার্কেট, গাউসিয়া, এলিফ্যান্ট রোড ইত্যাদি এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাস্তানি এবং মারামারির আতঙ্ক- ওই এলাকার অন্য বাসিন্দাদের মতো আমাকেও অস্থির করে তুলত। ফলে রাত-বিরেতে চলতে কিংবা কাকডাকা ভোরে প্রাতভ্রমণে বের হওয়ার আগে যত দোয়া দরুদ জানা আছে তা পাঠ করে বুকে ফুঁ দিয়ে নিজের বিশ্বাস চাঙ্গা করতাম। এ অবস্থায় আমার বন্ধুর ঘটনা শোনার পর আমি যখন রাস্তায় র্যাবের কোনো টহলরত গাড়ি দেখতাম তখন একধরনের নিরাপত্তাবোধ এবং স্বস্তির অনুভব আমাকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করে তুলত।
বন্ধুর ঘটনা বাদ দিয়ে আমি র্যাব সম্পর্কে আমার নিজের কিছু অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে আজকের শিরোনাম সম্পর্কে আলোচনা করব। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের সাথে কিছুতেই পেরে উঠছিলাম না। ভিসিআরে ব্লু ফ্লিম দেখানো, গ্রামগঞ্জে ক্যারম বোর্ড খেলার নামে জুয়া, প্রান্তিক খুদে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহের মতো ছিঁচকে ঘটনার সাথে পুলিশের যে কিরূপ সংযোগ থাকতে পারে তা এমপি না হলে বুঝতেই পারতাম না। আমি যেকোনো মূল্যে আমার নির্বাচনী এলাকা গলাচিপা এবং দশমিনার মানুষের জীবনের শান্তি বিঘ্নকারী অপরাধগুলো নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হলাম এবং একদিন র্যাব হেড কোয়ার্টারে গিয়ে লে. কর্নেল জিয়াউল আহসানের সাথে পরিচিত হলাম। পরে র্যাব পটুয়াখালীর সহায়তায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদাবাজদের সিন্ডিকেটে এমন আঘাত হেনেছিলাম যার ফলে আমার কার্যকালে অর্থাৎ ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল অবধি ওরা আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি।
উল্লিখিত ঘটনা ছাড়া আরেকটি কাহিনী আপনাদের বলা অবশ্যক। ঢাকায় আমার বাসভবনের নাম নায়েমের গলি। গলিটি নির্জন এবং অন্ধকার। অর্থাৎ গলিতে ঢোকা এবং বের হওয়ার একটিই রাস্তা। ফলে গলির বাসিন্দা ছাড়া সাধারণত কেউ সেখানে যায় না। ঢাকা কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, নায়েম এবং গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাড়াও টিচার্চ ট্রেনিং কলেজ আমাদের গলিতে হওয়ার কারণে দিনের বেলায় এটি মতিঝিলের শাপলা চত্বরের মতো সরগরম থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় আজিমপুর কবরস্থানের মতো নীরব-নিথর এবং নিকষ হয়ে পড়ে। এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য ঢাকা শহরের একশ্রেণীর মাদকসেবী, ছিনতাইকারী এবং সন্ত্রাসী পুরো গলিতে সারা রাত তাণ্ডব চালাত। তাদের সম্পর্কে টুঁ শব্দ উচ্চারণ করার দুঃসাহস কারো ছিল না এবং কেউ সেটি দেখায়নি। তো আমি একবার পুরো ঘটনা বর্ণনা করে নয়া দিগন্তে একটি উপসম্পাদকীয় লিখলাম এবং মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বজ্রপাত আকারে সন্ত্রাসীদের মাথার ওপর পড়ল। র্যাব অভিযান চালাল এবং পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত সেরকম অবস্থাতেই রয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনে আমি একজন নিভৃতচারী মানুষ। একা থাকা আমার পছন্দ। দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত, ভোগ বিলাস, হইচই পরিহার করে চলি। ফলে মামলা-মোকদ্দমা, উকিল-মোক্তার, কোর্ট-কাচারি, থানা-পুলিশ, দালাল-ফড়িয়া থেকে শুরু করে ক্লাব ক্যাসিনো পাড়া সম্পর্কে আমার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। কেউ সম্মান করে নিমন্ত্রণ করলেও তেমন একটা কোথাও যেতে মন চায় না- আর অনাহূত কিংবা বিনা দাওয়াতে কোথাও উপস্থিত হওয়ার মতো ঘটনা আমার জীবনে কোনোকালে ঘটেনি। ফলে র্যাবের সাথে প্রয়োজন ছাড়া আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি আবার র্যাবের সাহায্য পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সম্পর্ক যে দরকার তাও আমার কোনোকালে মনে হয়নি। অধিকন্তু কিছু ভুক্তভোগী মানুষ বা সাংবাদিক ও পেশাজীবীর সাথে কথা বলে জেনেছি যে, তারা দেশের যেকোনো বাহিনীর তুলনায় র্যাবের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন এবং তুলনামূলকভাবে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন।
র্যাবের মিডিয়া উইং এবং জনসংযোগ বিভাগের তৎপরতাও আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় ও ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল অবধি র্যাবের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছি। কিন্তু নিজের অভ্যাসের কারণে কোনো দিন যাওয়া হয়নি। তাদের সেই অনুষ্ঠানগুলোতে ভিন্নমতের লোকজনকেও দাওয়াত দেয়া হতো। জামায়াতপন্থী বলে পরিচিতি পাওয়া ড. তুহিন মালিককেও র্যাব তাদের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাত এবং ড. তুহিন উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের প্রথম সারিতে বসতেন। আমি পরে সেই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে দেখে ভাবতাম র্যাব কি কোনো বাংলাদেশী সংস্থা নাকি আধুনিক গণতন্ত্রের দ্বারা পরিচালিত একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থা!
র্যাবের উল্লিখিত কর্মকাণ্ড এবং অন্যান্য ইতিবাচক দিক মূলত ২০১৬ সাল অবধি মোটামুটি অক্ষুণ্ণ ছিল।
নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব নিদারুণভাবে সমালোচিত হয় এবং সেই ঘটনার পর মানুষ র্যাবকে একটি ভয়ঙ্কর সংস্থারূপে গণ্য করতে থাকে। এর আগে র্যাবের গুলিতে লিমনের পা হারানো, ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া, চৌধুরী আলমসহ আরো অনেকের লাপাত্তা হওয়ার ঘটনাগুলো একটি অপরটির সাথে গ্রথিত হয়ে নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনাকে এত বিশাল ও ব্যাপক করে তোলে যে, তাদের অতীতকালের প্রশংসিত শুভকর্মগুলো ঘোর অমানিশার অন্ধকারে চাপা পড়ে যেতে থাকে। আর বর্তমানকালে পরিস্থিতি এমন হয়ে পড়েছে যে, জনসম্মুখে র্যাব সম্পর্কে কোনো পীর আউলিয়াও যদি ইতিবাচক কিছু বলতে চেষ্টা করেন তবে বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে বেইজ্জত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে যদি না তার পেছনে উর্দি পরা বন্দুকধারীরা পাহারায় থাকে।
এখন প্রশ্ন হলো, র্যাবের এই সর্বনাশ কারা করল কিংবা এই সর্বনাশ কিভাবে ঘটল। আমি নিবন্ধের শুরু থেকে এই পর্যন্ত মোট ১১টি প্যারা লিখেছি। এর মধ্যে ১০টিতে সংস্থাটির প্রশংসা করেছি এবং মাত্র একটি প্যারায় তাদের কিছু কর্মকাণ্ডের কাহিনী বলেছি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, পাঠকরা ১০টি প্যারার ঘটনাগুলো ভুলে যাবেন এবং ১১তম প্যারা ও তৎপরবর্তী বক্তব্যগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন। মানব মনের যে চিরায়ত বৈশিষ্ট্য সেখানে সুখস্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং দুঃখের স্মৃতি সর্বদা রাজত্ব করে। এ কারণে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অমিয় বাণী হলো, তুমি সুখ যদি নাও দিতে পারো তবুও নিন্দিত হবে না কিংবা যদি এক বিন্দু দুঃখ তোমার দ্বারা রচিত হয় তবে কিয়ামত পর্যন্ত তোমার জন্য ঘৃণা এবং অভিশাপ অনিবার্য হয়ে পড়বে।
র্যাবের গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ের কর্তাব্যক্তিরা রাষ্ট্র পরিচালনার উপরোক্ত মর্মবাণীটি স্মরণে রাখেননি। অধিকন্তু ২০১৬ সালের পর থেকে র্যাবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে নোংরা রাজনীতির যে অপছায়া ভর করেছে তাও র্যাবের ইমেজ, কর্মক্ষমতা, চেইন অব কমান্ড ইত্যাদি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। বাহিনীটি পুলিশের অধীন থাকলেও মূল কমান্ডগুলো পরিচালিত হতো সশস্ত্র বাহিনী থেকে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া ব্যাটালিয়ন কমান্ডারদের হাতে যার ধারাবাহিকতা পরে বজায় থাকেনি। বরং বাহিনীটিকে পুলিশের অপরাপর শাখা প্রশাখারূপে ব্যবহার করার জন্য পুলিশ কর্তাদের বাড়াবাড়ি এবং পুলিশ থেকে যখন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পদে পদায়ন করা হয়েছে তখন বাহিনীটির ইমেজ আর আগে মতো সংরক্ষণ করা যায়নি।
উল্লিখিত কারণ ছাড়াও মুদ্রণ অযোগ্য কিছু ঘটনা রয়েছে যা র্যাব সদর দফতরের মৌলিকত্ব নষ্ট করেছে। কিছু কর্মকর্তার সাথে প্রমীলাদের যোগাযোগ এবং অফিসগুলোতে অনৈতিক ফিসফিসানির গুজব সৎ ও চৌকস কর্মকর্তাদের মনোবল নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে স্বভাবজাত দুর্নীতিবাজদের সাথে সুযোগসন্ধানী দুর্নীতিবাজরা যুক্ত হয়ে একটি সম্ভাবনাময় প্রশংসিত ও নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে বর্তমানের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
আমি মনে করি, র্যাবের পক্ষে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। বাহিনীটিকে যদি অন্যান্য রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মতো স্বাধীন করে দেয়া হয় তবে তারা ভালো করতে পারবে। পুলিশ সদর দফতরের কর্তৃত্বমুক্ত করে এটিকে যদি বিজিবি, আনসার, ফায়ার ব্রিগেড ইত্যাদি সংস্থার মতো স্বতন্ত্র ম্যানেজমেন্ট, স্বতন্ত্র আইন এবং স্বতন্ত্র জবাবদিহির আওতায় আনা যায় সে ক্ষেত্রে বাহিনীটি স্বমহিমায় ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং রাষ্ট্রসত্তার সাহায্যকারী সংস্থারূপে আগের মতো সুনাম সৃষ্টি করতে পারবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য