রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা : প্রধানমন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা হিসেবে দেখা দেয়া বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ফিরিয়ে নেয়া উচিত বলে বৃহস্পতিবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। তাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয়রা ভোগান্তিতে আছে…মিয়ানমারের উচিত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়া।’
ঢাকা সফররত যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির (এপিপিজি) সভাপতি অ্যান মেইনের নেতৃত্বে ইউকে কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (সিএফওবি) এবং জনসংখ্যা, উন্নয়ন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক যুক্তরাজ্য এপিপিজি প্রতিনিধিদল যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগে সহিষ্ণুতা দেখানোর জন্য কক্সবাজারের স্থানীয়দের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
শেখ হাসিনা স্মরণ করেন যে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থী হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল।
মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়ে মানবিকতার নিদর্শন দেখানোর জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলটি। তারা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং এ বিষয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে।
দুই বছর আগেও তারা রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছিল জানিয়ে তারা বলেন, গত দুই বছরে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন দেয়ার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেন তারা।
যুক্তরাজ্য এপিপিজি প্রতিনিধিদল আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে। তারা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেয়া নীতি ছিল খুব কার্যকর এবং বাংলাদেশের জন্মনিয়ন্ত্রণের উদাহরণ যুক্তরাজ্যের অনেক প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন খুব চমকপ্রদ বলেও মত দেন তারা।
বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল দেশকে মুক্ত করা এবং বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক মুক্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের অগ্রগতি যখন শুরু হয়েছিল তখন তাকে হত্যা করা হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মূল কাজ হলো গ্রামীণ এলাকা ও সেখানকার গণমানুষের অবস্থার উন্নতি করা।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে এখন ১,৯০৯ মার্কিন ডলার হয়েছে। সেই সাথে ২০০৬ সালে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৩,২০০ মেগাওয়াট, তা বেড়ে বর্তমানে ২২,০০০ মেগাওয়াট হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার তৃণমূল মানুষের দরজায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৮,০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছে। ক্লিনিকগুলো থেকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। নারী ও শিশুরা মূলত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে উপকৃত হচ্ছে।
শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকার এখন ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে তাদের মায়েদের উপবৃত্তির টাকা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে ব্রিটেন সবসময় সহায়তা করে আসছে। এ সম্পর্ক আরও বিশালভাবে বিস্তৃত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান ও ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : ইউএনবি