ঢাকা
বিদেশের রেলওয়ে কার্যক্রম সরেজমিনে দেখে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ সফরে যেতে চায় রেল মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ জন্য কোরিয়া, চীন বা জাপান সফরের আয়োজন করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রেলপথ মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানায়।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, এর আগে গত মার্চে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংসদীয় কমিটি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঈদের পর কোরিয়া, চীন কিংবা জাপানের রেলওয়ের কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করে। কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সফর আয়োজন করতে বলা হয়েছিল।
গতকালের বৈঠকে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কোরিয়া, জাপান ও চীনে করোনাভাইরাসের কারণে এখনো ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভ্রমণ-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল হলে ভ্রমণ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে গতকালের বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সংসদীয় কমিটির প্রধান কাজ কমিটির আওতাধীন মন্ত্রণালয়ের কাজ পর্যালোচনা, অনিয়ম ও গুরুতর অভিযোগ তদন্ত করা এবং বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া বা সুপারিশ করা। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা নিলে তা স্বার্থের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রণালয়ের টাকায় সংসদীয় কমিটির বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সংসদ সচিবালয়ের খরচে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বিদেশ সফরের নির্দেশনা দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বিদেশ সফরের সুপারিশের বিষয়ে জানতে কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
রেলের হিসাব নিয়ে অসন্তোষ
সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে রেলওয়ের মোট ৪০টি ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। সংসদীয় কমিটি এই ট্রেনগুলোর পেছনে বার্ষিক খরচ ও রাজস্ব আদায়ের তথ্য চেয়েছিল। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৪০টি ট্রেন থেকে বার্ষিক আয় হয়েছে ৯৮ কোটি ৬১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৯০ টাকা। আর ব্যয়ের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যয় ও আয় বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবছর ‘রেলওয়ে কস্টিং প্রোফাইল’ তৈরি করা হয়। ট্রেনভিত্তিক খরচের হিসাব তৈরি করা হয় না। এই প্রোফাইলে যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ট্রেনের প্রতি কিলোমিটার চালানোর খরচ হিসাব করা হয়। সে হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যাত্রীপ্রতি প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ২ টাকা ৪৩ পয়সা। আয় হয়েছে ৬২ পয়সা।
আর মালামাল পরিবহন বাবদ এক কিলোমিটারে প্রতি টনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৯৪ পয়সা, আয় হয়েছে ৩ টাকা ১৮ পয়সা।
সূত্র জানায়, আয় ব্যয়ের এই হিসাবে ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব না দেওয়ায় সংসদীয় কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে। কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তেল, মাস্টার সবই সরকার দিচ্ছে। তারপরও প্রতি কিলোমিটারে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। বেসরকারি খাতে দিয়েও যদি লোকসান হয়, তাহলে বেসরকারি খাতে দেওয়ার অর্থ হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলেও সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত ৪০টি ট্রেনের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য পরবর্তী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, চট্টগ্রামের সিআরবি অথবা কুমিরায় ১৩ একর জমিতে হাসপাতাল নির্মাণ, অবৈধভাবে দখল করা সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের জায়গা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনগণের সহযোগিতায় পুনরুদ্ধার, হবিগঞ্জের সাটিয়াজুরী রেলওয়ে স্টেশন পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিকায়ন বিষয়ে বৈঠকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান নূর, সাইফুজ্জামান, এইচ এম ইব্রাহিম, গাজী মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ ও নাদিরা ইয়াসমিন বৈঠকে অংশ নেন।