রুপিতে লেনদেনে কী লাভ বাংলাদেশের

আজকের পত্রিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রুপিতে লেনদেনে কী লাভ বাংলাদেশেরডলারের ওপর চাপ কমাতে ১১ জুলাই ভারতের সঙ্গে রুপিতে লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এটি চালু হলে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম রুপিতে শোধ করা যাবে। একই সঙ্গে দেশটিতে রপ্তানি হওয়া পণ্যের দামও রুপিতে গ্রহণ করতে পারবে বাংলাদেশ। তবে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় মুদ্রায় লেনদেনে কী লাভ হবে বাংলাদেশের? অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দুই দেশের মধ্যে যে অসম বাণিজ্য পরিস্থিতি বিরাজমান, তাতে রুপিতে লেনদেনে বাংলাদেশ খুব বেশি লাভবান হবে না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এর বিপরীতে দেশটি থেকে আমদানি হয় প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই চিত্র থেকে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশ রপ্তানি করে দুই বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ রুপি পাবে, যা এত দিন ডলারে পেয়ে আসত। আর আমদানির ক্ষেত্রেও দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি আমদানি মূল্য রুপিতে পরিশোধের সক্ষমতা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নেই। ফলে আমদানি বাবদ বাকি অর্থ ডলারেই শোধ করতে হবে।

এই বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের আমদানি ও রপ্তানিতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। এ জন্য রুপিতে লেনদেনে ডলার-সংকট কমবে না। উল্টো আমরা আগে যে ২ বিলিয়ন ডলার পেতাম, সেটা এখন ভারত রুপিতে পরিশোধ করবে। এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের কোনো লাভ নেই। এতে বাংলাদেশে ভারতীয় রুপির ডিমান্ড বাড়বে। আর ভারতে মুদ্রা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শক্তিশালী হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, রুপিতে লেনদেনের জন্য বাংলাদেশে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া নস্ট্র হিসাব খুলেছে। এখন গ্রাহক পেলেই রুপিতে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করা যাবে। আর ডলারের বিপরীতে রুপি ক্রয় করে বাণিজ্য করা হবে না। এমনটাই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইতিমধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ইস্টার্ণ ব্যাংক রুপি লেনদেনে বিশেষ (ভস্ট্র) অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) থেকে অনুমোদন পেয়েছে। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে সোনালী ব্যাংক। দেশের কোনো ব্যাংক অন্য দেশের কোনো ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনের উদ্দেশ্যে হিসাব খুললে সে হিসাবকে নস্ট্র হিসাব বলা হয়ে থাকে। একইভাবে বিদেশের কোনো ব্যাংক যদি বাংলাদেশের কোনো ব্যাংকে একই উদ্দেশ্যে হিসাব খোলে, তবে তাকে বলা হয় ভস্ট্র হিসাব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেডকে (ইবিএল) স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংকের হিসাব খুলতে অনুমোদন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত সপ্তাহে আরবিআই অনুমোদন দিয়েছে। এখন আর লেনদেন করতে সমস্যা থাকল না। গ্রাহক পেলেই যেকোনো সময় লেনদেন শুরু হবে।’

এদিকে ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে দেশে টাকা-রুপিভিত্তিক ডেবিট কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৮ জুলাই অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি উপস্থাপনকালে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এই ঘোষণা দেন। কার্ডের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা টাকা দিয়ে যেমন দেশের মধ্যে কেনাকাটা করতে পারবেন, তেমনি একই কার্ড দিয়ে ভারতে রুপিতেও কেনাকাটা করতে পারবেন। এই কার্ডের মাধ্যমে ডাবল কারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়তা মিটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যাপক বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় রুপিতে লেনদেনে ঝুঁকিও আছে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি শুরু হলে পণ্য বাণিজ্যেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে না; ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও হবে।