
ঘরের মাঠে ফুরালো অপেক্ষা। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই জয়। মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালো বাংলাদেশ। টানা চার ম্যাচে হেরে ‘বিধ্বস্ত’ মিরাজ-তাসকিনদের জন্য এ যেন মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টি।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আজ শনিবার আগে ব্যাট করে ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ রান করে বাংলাদেশ। যা তাড়া করতে নেমে ৩৯ ওভারে ১৩৩ রান তুলেই গুটিয়ে গেছে ক্যারিবীরা। স্বাগতিকদের জয় ৭৪ রানে।
২০৮ রানের লক্ষ্য, আধুনিক ক্রিকেটে সহজ সমীকরণ হলেও মিরপুরে মোটেও সহজ নয়। লক্ষ্যটা আরো কঠিন করে তুলেন রিশাদ হোসেন, একাই ধস নামান ক্যারিবীয়দের ইনিংসের। ৩৫ রান দিয়ে শিকার করেন ৬ উইকেট।
প্রথম ৫ উইকেটের সবগুলো একাই নেন তিনি। তাতে বিনা উইকেটে ৫১ রান তোলা ৯২ রানে ৫ উইকেট হারায় তার ঘূর্ণিতে আটকা পড়েই। এর আগে কখনো কোনো ফরম্যাটে ৫ উইকেটের দেখা পাননি তিনি।
রান তাড়া করতে নেমে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠার বার্তা দেন ব্রেন্ডন কিং ও অ্যালিক অ্যাথানেজ। তবে ১২ ওভার শেষে অ্যাথানেজকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রিশাদ। অ্যাথানেজ আউট হন ৩৬ বলে ২৭ রান করে।
তবে এরপরও ব্রেন্ডন কিংয়ের ব্যাটে এগিয়ে যেতে থাকে ক্যারিবীয়রা। তবে রিশাদ বেশিদূর যেতে দেননি, ১৯.৫ ওভারে করেন দ্বিতীয় আঘাত। তিনে নামা কেসি ক্যার্থি আউট হন ৩০ বলে মাত্র ৯ রান করে।
পরের ওভারে এসে রিশাদ আউট করেন কিংকে। ৬০ বলে ৪৪ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। পরের উইকেটও আসে একই ওভারে। শেরফানে রাদারফোর্ডকে রানের খাতা খোলার আগেই ফেরান রিশাদ।
তাতে মাত্র ৩ রানে ২ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের স্কোর তখন ২১.৪ ওভারে ৮২/৪। তবে রিশাদ ম্যাজিক তখনো শেষ হয়নি। আর ১০ রান যোগ হতেই ফেরান ১০ বলে ৬ রান করা রোস্টন চেজকেও।
২৫ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর দাঁড়ায় ৯৫/৫। তিন অঙ্কে পৌঁছাতেই ফেরেন গোদাকেশ মোতি, ১৪ বলে ৩ রান করে মেহেদী মিরাজের শিকার হন তিনি। থিতু হওয়ার চেষ্টা করা শাইহোপকে ফেরান তানভির ইসলাম।
ক্যারিবীয় অধিনায়ক ৩২ বলে ১৫ রান করে আউট হন। এরপর জাস্টিন গ্রিভস ও শেরফানে রাদারফোর্ডকে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। আর জয়দেন সিলসকে (৩) আউট করে ইনিংস গুটিয়ে দেন রিশাদ।
এর আগে সাইফ হাসানের সাথে এদিন ইনিংস শুরু করতে আসেন সৌম্য সরকার। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর প্রথমবার ওয়ানডে খেলতে নামেন তিনি। তবে পারেননি সুবিধা করতে, মাত্র ৪ রানেই শেষ তার ইনিংস।
সিলসের করা ২.১ ওভারে রোস্টন চেজকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তার ১ বল আগেই ফেরেন সাইফ হাসানও, ৬ বলে ৩ রান করে রোমারিও শেফার্ডের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। মাত্র ৮ রানে ২ উইকেট হারায় দল।
সেই ধাক্কা কাটিয়ে তুলার চেষ্টা করতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। তবে রানে গতি আনতে পারেননি, ১২০ বল খেলে যোগ করেন ৭১ রান। ৪ ইনিংস পর দুই অঙ্কে পৌঁছালেও বড় রান তুলতে পারেননি শান্ত।
খারি পিয়েরেকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ৬৩ বলে ৩২ রান নিয়ে। মাঠে আসেন অভিষিক্ত মাহিদুল।তবে তিনিও রানে গতি আনতে পারেননি। তাওহীদ হৃদয়ের সাথে তার ৭৫ বলের জুটিতে আসে ৩৬ রান।
বিস্ময়কর বিষয় হলো এই জুটিতে আসেনি কোনো বাউন্ডারি! যেখানে ৪৩ বলই খেলেন মাহিদুল। জুটি ভাঙে হৃদয়ের বিদায়ে। আউট হওয়ার আগে অবশ্য ফিফটি তুলে নেন তিনি। ফেরেন ৯০ বলে ৫১ রান করে।
তবে তিনি ফিরলে ৮২ বল পর মাহিদুলের ব্যাটে আসে কোনো বাউন্ডারি। এরপর রানে কিছুটা গতি আনার চলে করেন মাহিদুল। মেহেদী মিরাজকে নিয়ে পরের ৫৫ বলে যোগ করেন ৪৩ রান। মিরাজ ২৭ বলে ১৭ করে আউট হলে ভাঙে জুটি। তবে মাহিদুল ছিলেন ফিফটির পথে।
তবে ফিফটি আসেনি, মাহিদুল আউট হন ৭৬ বলে ৪৬ করে। ৪৫.২ ওভারে ১৬৫ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর নুরুল হাসান সোহান (৯) ফিরলে দেখা দেখা দেয় দুই শ’র আগেই থেমে যাওয়ার শঙ্কা।
রিশাদের ২ ছয় ১ চারে ১৩ বলে ২৬ রান করে সেই শঙ্কা অনেকটা কেটে যায়। আর তানভির ইসলামের ৪ বলে ৯* রানে ২০০ পেরোয় দল। তবে পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারেনি, ২ বল থাকতেই অল আউট হয় বাংলাদেশ। সিলস ৩, রোস্টন চেজ ২ ও জাস্টিন গ্রিভস নেন ২ উইকেট।