- by খেলাধুলা ডেস্ক
-
বুধবার রাতে গতবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদকে ২-১ গোলে হারিয়ে ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে আর্সেনাল। এই ম্যাচে দুটি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নির্ধারণে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ম্যাচের দৃশ্য, ছবি – সংগ্রহীত
গত সপ্তাহে লন্ডনে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জেতায় আর্সেনাল দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ অগ্রগামিতায় পরের পর্বে জায়গা করে নিলো। এর ফলে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাব প্রতিযোগিতাটিতে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল দলটি। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকছে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেই (পিএসজি)।
বুধবার অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ইন্টার মিলান এবং সেখানে তারা বার্সেলোনার মুখোমুখি হবে।
এবার আর রিয়াল মাদ্রিদের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন দেখা গেল না। সান্তিয়াগো বার্নাব্যু স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তের গোল, টানটান উত্তেজনা বা কোনও জাদুকরী মুহূর্ত সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয় তারা।
১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নরা ২০২০ সালের পর এই প্রথম শেষ চারে উঠতে পারল না, যার ফলে চার মৌসুমে তৃতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের আশাও শেষ হয়ে গেল।
আর্সেনালের মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস বলেন, ‘এখানে আসার আগে রিয়াল মাদ্রিদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল, কারণ তারা এর আগেও বহুবার এমনটা করেছে। কিন্তু প্রথম লেগের ম্যাচ থেকে আমাদের যে আত্মবিশ্বাস এবং ভরসা ছিল, তা নিয়েই আমরা এখানে এসে জিতেছি। আমরা মনে মনে এটা করার পরিকল্পনা করেছিলাম এবং এখন বাস্তবে তা করে দেখিয়েছি।’
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত
খেলার প্রথমার্ধে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে ডি-বক্সে ফাউল করা হলে মাদ্রিদ পেনাল্টি পেয়েছিল। কিন্তু ০-০ গোলে সমতা থাকা অবস্থায় প্রায় পাঁচ মিনিটের ভিএআর পর্যালোচনার পর সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে গেলে মাদ্রিদের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা বড় ধাক্কা খায়।
এর আগে ভিডিও পর্যালোচনার পর আর্সেনাল একটি পেনাল্টি পেলেও বুকায়ো সাকা স্পট কিক থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন।
তবে ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে মিকেল মেরিনোর পাস থেকে ডি-বক্সের ভেতর থেকে গোল করে আর্সেনালকে এগিয়ে দেন সাকা। এর কয়েক মিনিট পরেই উইলিয়াম সালিবার একটি রক্ষনাত্মক ভুলে ভিনিসিয়াস জুনিয়র গোল করে মাদ্রিদকে সমতায় ফেরান।
অতিরিক্ত সময়ের তিন মিনিটের মাথায় মেরিনোর দ্বিতীয় অ্যাসিস্টে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি গোল করে আর্সেনালের জয় নিশ্চিত করেন।
আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবেই আমার ফুটবল ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা রাত। এই প্রতিযোগিতায় আমাদের অনেকের জন্য অনুপ্রেরণা এমন একটি দলের বিপক্ষে জয় পাওয়াটা সত্যিই বিশেষ কিছু। যেভাবে আমরা এই পর্ব জিতেছি, তাতে আমরা খুব গর্বিত হতে পারি।’
আহত এমবাপ্পে
ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে দৃশ্যত চোট পাওয়ায় এমবাপ্পেকে তুলে নিয়ে ব্রাহিম দিয়াজকে নামানো হয়। বদলির ঘোষণা আসার সময় বার্নাব্যুর দর্শকদের একাংশ ফরাসি এই তারকাকে উদ্দেশ্য করে দুয়োধ্বনি দেয়। এটি ছিল এমবাপ্পের আরেকটি নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স, যিনি এখনও চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিততে পারেননি।
মাদ্রিদের লুকাস ভাসকেজ বলেন, ‘এটি একটি কঠিন মুহূর্ত। আমরা চেষ্টা করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব। মাদ্রিদ সবসময় এটাই করে।’
শুরু থেকেই মাদ্রিদের জন্য ম্যাচটি কঠিন ছিল। আর্সেনাল প্রায় তিন বছর ধরে তিন গোলের ব্যবধানে হারেনি। উয়েফার তথ্যমতে, চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে মাত্র চারবার কোনও দল ঘরের মাঠে প্রথম লেগে তিন বা তার বেশি গোলের ঘাটতি পূরণ করে পরের পর্বে যেতে পেরেছে।
এর আগের তিন দেখায় মাদ্রিদের কাছে হারেনি আর্সেনাল। ২০০৫-০৬ মৌসুমেও চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্বে মাদ্রিদকে হারিয়েছিল তারা, সেবার ফাইনালে উঠে বার্সেলোনার কাছে হেরে গিয়েছিল দলটি।
আনচেলত্তির বক্তব্য
মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি বলেন, ‘আমাদের মাথা উঁচু রাখতে হবে কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা এই প্রতিযোগিতায় খুব ভালো করেছি। এ বছর আমাদের কষ্ট সইতে হচ্ছে। খেলাধুলায় এমনটা হতেই পারে, কারণ কোনও দলই অপরাজেয় নয়। আমি খেলোয়াড়দের স্পষ্টভাবে বলেছি, আমাদের মাথা উঁচু রাখতে হবে, এই হার থেকে শিখতে হবে এবং পরের ম্যাচের জন্য লড়াই করতে হবে।’
এই হার মাদ্রিদের কোচ হিসেবে তার শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আনচেলত্তি বলেন, তিনি জানেন না। ‘হতে পারে ক্লাব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেবে। এটা এ বছর বা পরের বছর হতে পারে, যখন আমার চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে,’ তিনি বলেন।
‘যেদিন আমি এখান থেকে বিদায় নেব, আমি কেবল একটি কাজই করতে পারি আর তা হলো এই ক্লাবকে ধন্যবাদ জানানো। সেটা আগামীকাল, ১০ দিন পর বা এক বছর পরেও হতে পারে, এবং আমি কেবল ক্লাবকে ধন্যবাদই জানাব।’
বার্নাব্যুর উত্তাল দর্শকদের সমর্থনে মাদ্রিদ শুরুটা দুর্দান্ত করতে চেয়েছিল। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই তারা বল জালে জড়ায়, কিন্তু স্পষ্ট অফসাইডের কারণে এমবাপ্পের সেই গোল বাতিল হয়ে যায়।
প্রায় ১০ মিনিট পর পেনাল্টি পেয়ে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল আর্সেনাল। কিন্তু সাকার নেওয়া চিপ শট রুখে দেন মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। কর্নার কিকের সময় ডি-বক্সের ভেতরে মিকেল মেরিনোকে রাউল আসেনসিও ফাউল করলে পেনাল্টিটি দেওয়া হয়। ফরাসি রেফারি ফ্রাঁসোয়া লেতেক্সিয়ের প্রথমে ঘটনাটি ধরতে পারেননি, কিন্তু ভিএআরের সাহায্য নিয়ে মাঠের পাশের মনিটরে রিপ্লে দেখে তিনি পেনাল্টির নির্দেশ দেন।
২৩তম মিনিটে আবারও ভিডিও পর্যালোচনার ভূমিকা দেখা যায়। এবার ডি-বক্সের ভেতরে রাইসের দ্বারা এমবাপ্পে ফাউলের শিকার হলে রেফারি লেতেক্সিয়ের পেনাল্টির বাঁশি বাজান। কিন্তু দীর্ঘ ভিএআর পর্যালোচনার পর তাকে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।