জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেছেন, মহানগরী এলাকার বাড়ির মালিকদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন যেসব বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দেন না, তাঁদের খুঁজে বের করতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরে অনুষ্ঠিত প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বাড়িওয়ালাদের আয়কর রিটার্নের দাখিল প্রমাণ সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তা বাতিলের প্রস্তাব দেয় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই–ক্যাব)। এ প্রস্তাবের প্রসঙ্গেই এনবিআর চেয়ারম্যান বাড়ির মালিকদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেন।
সভায় ই–ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সরকার একটা নিয়ম করেছে। তা হলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকবেন, ওই বাড়িওয়ালার আয়কর রিটার্নের কপি আপনাকে জমা দিতে হবে। না হলে বাড়ি ভাড়ার কর ওই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। কিন্তু এ নিয়মটি ব্যবসাকে আরও কঠিন করেছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অনেক বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দেন, কিন্তু সে তথ্য অন্যের কাছে দিতে চান না। আবার অনেক বাড়িওয়ালা রিটার্ন দেন না। ফলে বাড়িওয়ালাদের কাছে রিটার্নের কাগজ চাইলে তাঁরা অস্বস্তিতে ভোগেন। কারণ, তাঁরা ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে চান না। এমনকি অনেকে বাসা ভাড়া দিতে চান না। এসব কারণে আমরা নিয়মটি বাতিলের প্রস্তাব করছি।’
তবে ই–ক্যাবের এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। তিনি বলেন, ‘আরও যতটা সহজে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ দেওয়া যায়, আমরা সেই চেষ্টা করছি। অনেক বাড়িওয়ালা আয়কর রিটার্ন দিতে চান না। কিন্তু এ বিষয়ে সরকার আইন করছে যে যাঁরা বাড়ির মালিক রয়েছেন, তাঁদের আয়কর রিটার্ন দিতে হবে। বাড়ির মালিকদের আয় কতটা, তাঁদের কর দিতে হবে কি না—সেটা আমরা দেখব। তবে তাঁদের অবশ্যই রিটার্ন দিতে হবে।’
রহমাতুল মুনিম আরও বলেন, ‘এ আইনটা হয়েছে দুই বছর হয়ে গেল। সরকার এখন আর চুপ করে বসে থাকবে না। মহানগরী এলাকায় বাড়ির মালিকদের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা এখন বিশেষ পদক্ষেপ নেব। রিটার্ন দেওয়া এখন সহজ হয়েছে। অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এরপর বাড়িওয়ালাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এত কিছুর পরেও বাড়ির মালিকদের রিটার্ন জমা না দেওয়ার কোনো কারণ নেই।’
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাক্-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এবং বাংলাদেশ ব্রেড বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতিও তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে। বাজুসের পক্ষ থেকে সোনার গয়না বিক্রিতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সারা দেশে ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইএফডি যন্ত্র স্থাপন এবং স্বর্ণ পরিশোধনাগারশিল্পের জন্য ১০ বছরের কর অবকাশ চেয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া ব্যাগেজ রুল সংশোধনের মাধ্যমে পর্যটকদের সোনার বার আনা বন্ধ করা এবং সোনার অলংকার ১০০ গ্রামের পরিবর্তে ৫০ গ্রাম আনার নিয়ম করার প্রস্তাব দেয় বাজুস।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বৈধ পথে স্বর্ণ আমদানি বাড়ানোর জন্য ডিউটি কমানোসহ বেশ কিছু উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। তারপরও ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ আমদানি বাড়াচ্ছে না। অথচ দেশে স্বর্ণের গয়না ঠিকই তৈরি হচ্ছে। ফলে এটা ডিউটির সমস্যা না অন্য সমস্যা, তা দেখার বিষয়।’
Prothom Alo