জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনেক দাবি উত্থাপিত হচ্ছে। অনেকে দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আসছে। তিনি বলেন, দাবি পূরণ করার জন্য উপদেষ্টা সরকার নয়, প্রয়োজন জনগণের নির্বাচিত সরকার।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন আয়োজিত ‘কাঙ্ক্ষিত শিক্ষানীতি ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে মুজিবুর রহমান এসব কথা বলেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ক্ষমতা আর ছাড়তে চায় না। আবার অতীতে কেউ কেউ ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে নতুন নতুন দল গঠন করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার চেষ্টাও করেছে। রাষ্ট্র সংস্কার করে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে মুজিবুর রহমান বলেন, দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ কোনো নৈতিক শিক্ষা অর্জনকারী ব্যক্তি দিতে পারে না। শেখ হাসিনা দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়ে প্রমাণ করেছেন, তিনি নৈতিকতাহীন, বর্বর, অমানবিক, মনুষ্যত্বহীন ও ক্ষমতালোভী মানুষরূপী পশু। চরিত্র শেষ হলে হারানোর কিছু আর থাকে না। শেখ হাসিনা যাদের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতায় বসিয়েছেন, তারা সবাই ছিল অমানুষ। এরা গত ১৫ বছর মানুষকে কথা বলতে দেয়নি। অধিকার আদায়ে রাস্তায় দাঁড়াতে দেয়নি।
এই জামায়াত নেতা আরও বলেন, খুন-গুম, হত্যা, হামলা-মামলা দিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন বিপ্লবী আর বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে বিপ্লবী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তবে তাঁর দোসরেরা এখনো রয়ে গেছে। এদের দমন না করলে ছাত্র-জনতার বিপ্লব ধরে রাখা যাবে না।
শিল্পকলা একাডেমির নবনিযুক্ত মহাপরিচালকের সমালোচনা করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, যিনি বলেছেন ২০২৪ সালে এসেও কেন মেয়েদের হিজাব পরতে হবে, তাঁকেই শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদকে অপসারণ করতে হবে। রাষ্ট্রের অঙ্গে অঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরেরা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরা একেকবার একেক রূপে আত্মপ্রকাশ করছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছেন। বহু শিক্ষক ফ্যাসিবাদী হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার জন্য নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে ব্রিটিশ-ভারত থেকে প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। ব্রিটিশ-ভারতের প্রণীত এই শিক্ষাব্যবস্থায় একঝাঁক কেরানি তৈরি হচ্ছে ও হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব শেখ হাসিনার এই শিক্ষানীতি বাতিল করে ইসলামি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।
আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) সভাপতি নূর নবী মানিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, বাংলাদেশ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মনির হোসেন হেলালী, প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আলী আকবর গাজী, কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি সিকদার আবদুল কুদ্দুছ, মাধ্যমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবদুল করিম শাহীন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাকসুদুর রহমান, বাংলাদেশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি আবদুস সবুর মাতব্বর, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মোশারফ হোসেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রব, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফুল ইসলাম, ইসলামিক এডুকেশন সোসাইটির সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সারোয়ার হোসেন, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ ন ম রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সেক্রেটারি এ বি এম ফজলুল করিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কুরবান আলী প্রমুখ।
prothom alo