রাশিয়ার নির্বাচন থেকে যা শিখতে পারেন হাবিবুল আউয়াল

 আসিফ মাহমুদ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যবেক্ষন করতে রাশিয়া সফরে গেছেন। রাশিয়ার নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে আবার বিজয়ী হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে এই নির্বাচন নিয়ে দুনিয়ার কোনো দেশের তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যে প্রবল আগ্রহ আছে তার সফর থেকে বোঝা যায়। এর আগে পুতিনের মিত্র আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোও বেলারুশে নির্বাচিত হয়েছেন। সে নির্বাচনের ফল ছিলো সবার জানা।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের সাথে রাশিয়ার রয়েছে ঘনিষ্ট সর্ম্পক।  বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত সব সময় সন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।  বাংলাদেশের নির্বাচনের আগেও সবাই জেনেছিলো নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে।  ফলে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু তাতে নির্বাচনের ফল থেমে থাকেনি। যার বিজীয় হওয়ার কথা তিনি বিজয়ী হয়েছেন।

নির্বাচনের পর হাবিবুল আউয়াল ঘোষণা করেছিলেন কে নির্বাচনে আসলো , কত শতাংশ ভোট পড়লো তা গুরুত্বপূর্ন নয়। গুরুত্বপূর্ন হলো নির্ধারিত সময়ে শান্তিুপূর্ন ভাবে নির্বাচন হয়েছে কিনা? হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচন কমিশন র‌্যাব, পুলিশ , বিজিবি ও অনুগত খুদকুড়ো খাওয়া রাজনীতিকদের নিয়ে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্টানে সফল হয়েছেন। যেভাবে একের পর এক নির্বাচনে সফল হয়ে চলছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।  তিনি কখনো প্রেসিডেন্ট , কখনো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধন করে এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে তিনি ২০৩৬ সাল পর্যন্ত নির্বিঘ্ণে ক্ষমতায় থাকবেন।

প্রশ্ন হলো হাবিবুল আউয়াল রাশিয়ার নির্বাচন পর্যবেক্ষন করে কি অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন? অর্জিত সেই অভিজ্ঞতা কিভাবে প্রয়োগ করবেন? এ প্রশ্নের জবাব খুজঁতে হলে আমাদের প্রেসিডেন্ট পুতিনের উন্থান কাহিনী দেখে নিতে হবে।

পুতিন যেমন আর্ন্তজাতিক রাজনীতির একজন পাকা খেলোয়াড় তেমনি আভ্যন্তরিন রাজনীতিতে তার অবস্থান সুদৃঢ়। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছেন। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুতিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে রুশ প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলৎসিন আকস্মিকভাবে পদত্যাগ করার প্রেক্ষাপটেই তার এই দায়িত্বভার গ্রহণ।

২০০০ সালের ২৬ মার্চ তিনি রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ১৫ মার্চ তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতাজনিত কারণে পুতিন ধারাবাহিকভাবে তৃতীয় মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। পরে ২০০৮ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তার উত্তরসূরি হিসেবে দিমিত্রি মেদভেদেভ জয়লাভ করেন। এতে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেয়ার মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় মেদভেদেভ রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভ্লাদিমির পুতিনকে মনোনীত করেন।

২০০৮ সালের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাফতরিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন পুতিন। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে পুতিন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন যে, তিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য নতুন করে ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ২০১২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি তৃতীয় মেয়াদে জয়লাভ করেন। তার এ মেয়াদকাল ছয় বছর। এরপর তিনি আবারো প্রেসিডেন্ট হন। এই মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৪ সালে।

এর আগে ২০২৪ সালের নির্বাচনে পুতিনের অংশগ্রহনের অনুমোদনের জন্য রুশ সংসদের নিম্নকক্ষে সাংবিধানিক পরিবর্তনের প্রস্তাব পাস করানো হয়। । পুতিনের সমর্থনে সংবিধান সংশোধনীর ফলে তার প্রেসিডেন্সিয়াল মেয়াদের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে পুনরায় শূন্য থেকে শুরু হবে।

এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি আরো টানা অন্তত এক যুগ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন। অর্থাৎ তিনি এবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করবেন। তার এই ক্ষমতায় থাকা নিয়ে কোনো প্রতিবাদ- বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তার একমাত্র বিরোধী রাজনীতিক আলেক্সি নাভালনি কিছু দিন আগে জেল খানায় মারা গেছেন।

এখানে বলে রাখা ভালো রাশিয়াতেও প্রেসিডেন্টের অনুগত একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন আছে। যার নাম সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশন। সম্ভবত বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের আমন্ত্রনে রাশিয়া সফরে গেছেন। তাদের কাছে অনেক কিছু হয়তো হাবিবুল আউয়ালের শেখার আছে। বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা ঘোষণা করেছেন,  তারা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে চান। ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের চেয়ে তার অর্জন এ দিক থেকে কম নয়। আগামি ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে হলে সংবিধান সংশোধনসহ নানা কিছু করতে হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল ঝামেলাহীন ভাবে পুতিনের বিজয়ী হওয়ার কলাকৌশল সরেজমিন শিখে আসবেন। সেই জ্ঞার্নাজনের জন্য তিনি রাশিয়া গেছেন। তিনি হয়তো ক্ষমতার উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে রাশিয়ার নির্বাচন পর্যবেক্ষনে গেছেন।

বাংলাদেশে নির্বাচন আসলে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হয়। তার পূর্বসূরী পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে রাতের বেলা ভোটের আয়োজন করেছিলেন। হাবিবুল আউয়াল দিনের বেলায় ভোটের আয়োজন করলেও জনগন ভোট দিতে যায়নি। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে রাশিয়া মডেল হতে পারে তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। যার মাধ্যমে তিনি শেখ হাসিনাকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখার কৌশল বাতলে দিতে পারেন। যার মাধ্যমে তিনি তার যোগ্যতা ও আনুগত্যর সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবেন।