রামমন্দির আর ভারতের সঙ্গে আমাদের লড়াই

রামমন্দির আর ভারতের সঙ্গে আমাদের লড়াই

 

ক্ষনরেখা একেবারে সুস্পষ্ট করে দেয়া হলো। এখন আর মাঝামাঝি বলে কিছু নেই। জানুয়ারী ২২, ২০২৪ দিনটা ভারতবর্ষের জন্য এক বিকট দিন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, এদিন হিন্দুত্ববাদের সবচেয়ে বড় প্রতীকটার উদ্বোধন হলো। রামমন্দির স্থাপন কেবল যে গোটা উপমহাদেশের জন্য  জন্য হুমকি তাই না, হিন্দুত্ববাদের সবচেয়ে দৃশ্যমান এই রাজনৈতিক প্রকল্প হিন্দুধর্ম এবং অন্যন্য বিশ্বাসের জন্যও শত্রু।

লোকরঞ্জনবাদের এই রমরমা সময়েও আশার কথা এই যে, আমরা দেখতে পাই, ভারতে কিছু হলেও প্রতিবাদ হচ্ছে। মুলধারার প্রচারমাধ্যেম সরকার আর হিন্দুত্ববাদের গুনগান গাইলেও এর বাইরে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। খোদ মন্দিরের সেবকরা পর্যন্ত বলছেন, রাজনীতির স্বার্থে ধর্মের এই ব্যাবহার বিপদজনক। একটা বড় অংশের মানুষের উত্তেজনা হয়তো কমছে না, কিন্তু, ক্রমশ প্রতারিত হওয়া মানুষ, হুশ ফেরা রাজনীতিবিদদের একটা অংশ বুঝতে পারছে, একজোট হয়ে এই দানবকে মোকাবিলা ছাড়া রাস্তা নেই।

বাংলাদেশের মানুষের এই নিয়ে কি? বিশাল প্রতিবেশী দেশের রাজনীতি আর অর্থনীতির সরাসরি প্রভাব আমাদের এইখানে পড়ে। আর, কিছুদিন আগে হওয়া নির্বাচনের নামে প্রহসনে আরো সুস্পষ্ট যে, প্রতিবেশী দেশের সরাসরি প্রভাবে আমাদের দেশের ক্ষমতাও নিয়ন্ত্রিত হয়।

তাহলে কি ভারতের সঙ্গে আমরা যুদ্ধে নামবো? সব সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবো? ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি হবে উপনিবেশীক দখলদারদের মতো?

এই যুগে সেই ব্যাপারটা কঠিন। ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে গেলে তো বটেই, এমনকি বাণিজ্য যুদ্ধ করতে গেলেও ক্ষতিটা আমাদেরই হবে। শুধু তাই না, এই উছিলায়, ভারতের শাসকগোষ্ঠী আরো বেশী নির্মম হবে বাংলাদেশ ও নিজের দেশে মুসলিমসহ সকল ধরনের প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে।

তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে এই লড়াই যদি ভারত বনাম বাংলাদেশ কিংবা হিন্দু বনাম মুসলিমে পরিণত করে দেয়া যায়। ভারতের শাসক গোষ্ঠী ও তাবেদাররা ঠিক এইটাই চায়। রামমন্দিরের মতো ব্যাপার ঘটা করে পালন করে তাঁরা এই লক্ষনরেখা এঁকে দিতে চায়। তাঁরা বোঝাতে চায় এই যুদ্ধটা ধর্মের, দুই দেশের মানুষের।

কিন্তু, মনে রাখা দরকার, এই লড়াইটা যেমন সব ধর্মের মানুষের তেমনি দুই দেশের শোষিত মানুষেরও। বাংলাদেশে ধর্মীয় উত্তেজনা দেখিয়ে ভারতের কোটি কোটি মুসলমানের উপর আক্রমণ জায়েজ করা হয়, পাকিস্তানের জুজুর ভয় দেখানো হয়। বাংলাদেশেও সেই জজবা ছড়ানোর চেষ্টা হয়।

এই কঠিন সময়ে, উত্তেজনা ধরে রাখা কঠিন। লোকরঞ্জনবাদের লোভ এড়ানো কঠিন। কিন্তু, ইতিহাস সাক্ষী, লোকরঞ্জবাদে গা ভাসাইলে, ধর্মের হাত ধরে রাজনীতি করতে চাইলে মানুষ বরাবরই প্রতারিত হয়েছে। উপমহাদেশের ইতিহাসে ধর্মের ব্যবহার করে লুটপাট আর বিভেদই হয়েছে। যারা জনগণের রাজনীতি করতে চান, জনগণের সত্যিকারের কল্যান ও মুক্তি চান, তাঁদের নীরবতা ক্ষতির কারন হয়েছে।

আমাদের এখন সুষ্পটভাবে এই লড়াইটা বুঝতে হবে।