১৭ এপ্রিল ২০২৩
নিজস্ব প্রতিনিধি
মানুষের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে স্থাপিত পরিবেশ বিনষ্টকারী রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে হঠাৎ করেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। গত শনিবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে উৎপাদনে নেই রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর আগে গত ১৪ই জানুয়ারি কয়লা সংকটে বন্ধ হয়েছিল রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কার মধ্যেই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম গণমাধ্যমকে জানান, কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৫ই এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সমস্যা সমাধান করে আবারও দ্রুত উৎপাদনে যাবে কেন্দ্রটি।
এদিকে হঠাৎ করে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহে। ফলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়েছে বাগেরহাট, খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। তখন বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সংগঠন গুলো প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে সুন্দরবন রক্ষার জন্যে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে খুশি করতেই এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেশটির পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এই বাতিল প্রকল্প সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে স্থাপন করেন শেখ হাসিনা।
২০১২ সালের ২৯শে জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাঃ) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৫ই অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে এ বছরের ১১ই জুলাই বয়লার স্টিম ব্লেয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ই আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ই আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়। পরে ১৭ই ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হয় কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ। পরে ১৪ই জানুয়ারি কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় কেন্দ্রটি। এর প্রায় এক মাস পরে কয়লা প্রাপ্তি সাপেক্ষে ১৫ই ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ১২টায় আবারও প্রথম ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়।