মাঝে কঠিন সময় গেছে লিটন কুমার দাসের। স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছিলেন না কোনো সংস্করণেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ৬৭ রান সাকুল্যে, ওয়ানডেতে জোড়া ডাক। সিরিজের শেষ ম্যাচের দল থেকেই বাদ পড়তে হয়েছিল। এভাবে সিরিজ থেকে বাদ পড়া ছিল লিটনের জন্য বিব্রতকর। কঠিন সময় পেছনে ফেলে উইকেটরক্ষক ব্যাটার লিটন আবার ছন্দে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় টেস্টে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেছেন। ১৩৮ রানের ইনিংস খেলে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয় ও নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন লিটন। আর রোমাঞ্চকর টেস্ট জয়ের গল্প শুনেছেন সেকান্দার আলী।
সমকাল: আপনার সেঞ্চুরির গল্প শুনতে চাই। কীভাবে ‘মেক’ করলেন?
লিটন: কীভাবে যে ‘মেক’ করলাম; চেষ্টা করেছি শতভাগ দেওয়ার। আমরা খুবই ব্যাকফুটে ছিলাম। যে ধৈর্যের প্রয়োজন ছিল, সেটা দেখাতে পেরেছি। মিরাজকে (মেহেদী হাসান) ধন্যবাদ দেব সাহস নিয়ে খেলার জন্য। আমি বলব, ওর কারণেই জুটি গড়ে উঠেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি ছন্দ কাজে লাগিয়ে ইনিংস বড় করার।
সমকাল: পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ভালো করা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালে এই রাওয়ালপিন্ডিতে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। এবার কি জয়ের পণ নিয়ে খেলেছেন?
লিটন: জেতা বা ওরকম চিন্তা কখনোই ছিল না। আমাদের আলোচনা ছিল, কীভাবে টেস্ট সিরিজে ভালো খেলা যায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেক দিন ধরে ভালো কিছু করতে পারছিলাম না। বিশেষ করে অ্যাওয়েতে (বিদেশ) গিয়ে। পাকিস্তান যেহেতু আমাদের হোম কন্ডিশনের মতো, আর আমাদের দলেও ভারসাম্য ছিল। পেস, স্পিন বোলিং ও ব্যাটিং সব দিক থেকে ভালো ছিল। আমরা চেষ্টা করেছি, সব বিভাগে শতভাগ দিতে। আপনি শতভাগ দিলে সাফল্য পাবেন। আর ছোট ছোট সাফল্য থেকে ম্যাচে জয় আসে।
সমকাল: সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ব্যাকফুটে চলে যাওয়া এবং সেখান থেকে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন করা। কীভাবে সম্ভব হলো?
লিটন: পুরো ছন্দটাই ছিল পাকিস্তানের দিকে। আমরা ভাবছিলাম, কীভাবে ছন্দটা ঘুরিয়ে দিতে পারি। উইকেটে টিকে থেকে, জুটি গড়ে তাদের হাত থেকে খেলাটা আমাদের হাতে আনার চেষ্টা করছিলাম। কারণ ক্রিকেটে অধিকাংশ জিনিসই ছন্দের ওপর নির্ভর করে। দেখবেন, ১০-১১ ওভারে অধিকাংশ উইকেট পড়ে গেছে ফ্লোতে। আমার ও মিরাজের একটাই কথা ছিল, ছন্দ ঘুরিয়ে দিয়ে বাজে বলে রান নিতে হবে। কারণ স্কোরবোর্ডে রান জমা হতে থাকলে চাপ কমে যাবে। ব্যাটাররা স্বাভাবিক থেকে খেলতে পারে। ওই সময় এটুকুই ভেবেছি।
সমকাল: আপনাদের ইনিংস শেষে ড্রেসিংরুমের আলোচনা কী ছিল?
লিটন: বাহবা দিয়েছে। আসলে এটা তো একজন খেলোয়াড়ের কাজ। ব্যাটার হিসেবে আমার কাজই রান করা। আমাদের টপঅর্ডার পারেনি, আমার সুযোগ ছিল আমি করেছি। মিরাজ করেছে। মিরাজ যখন ব্যাটিংয়ে নামে, সেও ব্যাটার। রান করাই তার কাজ। সবাই আসলে খুশি ছিল।
সমকাল: পেস বিভাগে উন্নতির কারণেই কি পাকিস্তানের মাটিতে এ রকম ফল করা সম্ভব হয়েছে?
লিটন: অবশ্যই। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, পাকিস্তানে অনেক বড় রান হয়। তাদের কন্ডিশন রান করার ভালো জায়গা। টেস্ট, ওয়ানডে বা টি২০ সব ফরম্যাটেই ব্যাটাররা রান বেশি করে। সেই জায়গায় ২০ উইকেট নেওয়া সহজ ছিল না। পুরো কৃতিত্ব বোলারদের। উইকেট নিতে চাইলে ভালো বল করতে হয়। এই একটা সিরিজ গেল, যেখানে একাদশের তিনজন পেস বোলারই ভালো বোলিং করেছে। শরিফুল প্রথম ম্যাচ খেলেছে, ও খুব ভালো বল করেছে। স্পিনাররা তো বরাবরই ভালো বল করে। তবে এবার প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে তিনজন পেস বোলার ভালো বল করেছে। এমন না যে একজন ভালো বল করছে, দু’জন করতে পারেনি। বাংলাদেশের জন্য এটা বিশাল পাওয়া।
সমকাল: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন চার নম্বরে। ভারতে রেজাল্ট হলে আরও ওপরে ওঠার সুযোগ। এবার কি আশা করা যায়, ভারতে ভালো ক্রিকেট খেলবে বাংলাদেশ?
লিটন: আশা বা কোনো কিছুই আমি বলব না। আমরা যখন পাকিস্তানে যাই, তখন হয়তো কেউ আশা করেনি ফল হতে পারে। ক্রিকেটে সব কিছুই সম্ভব। আমরা পাকিস্তানে যেভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছি, ওটা এখন অতীত হয়ে গেছে। অতীতের প্রভাব ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারে। ভারতে এসজি বলে খেলা। দল, বল, কন্ডিশন সবই ভিন্ন। আমাদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। হ্যাঁ, আমরা ভালো একটা সিরিজ জিতেছি ভারত সফরে যেটা বাড়তি আত্মবিশ্বাস দেবে। তবে ভারত অনেক শক্তিশালী দল। তাদের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে হলে ‘এ’ প্লাস ক্রিকেট খেলতে হবে।
সমকাল: এই যে সাফল্য, তিন বিভাগে ভালো করা– এর পেছনে বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্প, লাহোরের অনুশীলন বা ‘এ’ দলে খেলার ভূমিকা কতটা?
লিটন: অবশ্যই ভূমিকা আছে। লাল বলের ক্রিকেটটাই এমন। আপনি যতক্ষণ লম্বা অনুশীলন করবেন আয়ত্ত তত বাড়তে থাকবে। ওয়ানডে, টি২০তে ৫ থেকে ১০ ওভার পরে একটা স্লিপ সরে যেতে পারে। সেখানে টেস্ট ক্রিকেটে সারাদিন স্লিপ ফিল্ডার রাখা হয়। বেসিকটা অনেক ভালো করতে হয় পেস ও স্পিন দুই বিভাগেই। পেস বোলারদের সুযোগ একটু কম, ফিল্ডার খুব একটা বাইরে পায় না। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং করতে হয়। ভালো জায়গায় বল সারাদিন ধরে করতে হয়। আপনি যখন প্র্যাকটিস করবেন, তখন এই জিনিসটা রপ্ত হতে থাকে। বিসিবি চট্টগ্রামে একটি ক্যাম্প করিয়েছে। আমিও গিয়েছিলাম ম্যাচ খেলতে। বৃষ্টির কারণে ওইভাবে ম্যাচটি হয়নি। ঢাকায় আসার পর সোহেল ইসলাম স্যারের অধীনে অনেক দিন অনুশীলন করেছি। লাহোরে তিন দিনের একটি ক্যাম্প ছিল। ‘এ’ দলে খেলতে গিয়েছিল ছয়জন। তারা ওখানে ম্যাচ খেলে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিলেন। ওই জিনিসগুলো অবশ্যই সাহায্য করেছে।
samakal