রাজপালঙ্ক নিয়ে যা বললেন মাগুরার ডিসি
মাগুরা প্রতিনিধি
ষোড়শ শতাব্দীতে ভূষণা রাজ্যের রাজা সীতারাম রায়ের একটি পালঙ্ক নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক আলী আকবর। শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘রাজপালঙ্কের খোঁজ মিলল ডিসির বাস ভবনে’, ‘মাগুরার ডিসি ঘুমাচ্ছেন রাজার পালঙ্কে’ এমন সংবাদ নিয়ে তৈরি হয়েছে এ অবস্থা। শুক্রবার বিকেলে মাগুরা জেলা প্রশাসকের বাসভবনে গিয়ে নিচতলার স্টোররুমে অন্য মালপত্রের সঙ্গে খোলা অবস্থায় দেখা গেছে পুরনো এ পালঙ্কটি। এটি অনেক পুরনো ও অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে আছে।
বিষয়টি নিয়ে মাগুরা জেলা প্রশাসক আলী আকবর বলেন, ‘৩০ বছর ধরে এ ধরনের একটি পালঙ্ক জেলা প্রশাসকের বাসভবনের একটি স্টোররুমে পড়ে আছে। আগের জেলা প্রশাসকরা এটি যেভাবে পেয়েছেন, আমি একইভাবে পেয়েছি। এটি সংরক্ষিত ছিল, এখনও তাই আছে। এটিতে ডিসি ঘুমায় না। যে কেউ দেখলে বুঝবে এটিতে ঘুমানোর অবস্থা নেই। কারণ এটি ব্যবহারের অনুপযোগী। কোনো মানুষেরই এটিতে ঘুমানোর অবস্থা নেই। বর্তমান জামানায় এ ধরনের পালঙ্ক তেমন কেউ ব্যবহার করেন বলেও মনে হয় না।’
প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেসব মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, তারা তো ডিসির বেডরুমে যাননি। তাহলে তারা কীভাবে নিশ্চিত হলেন ডিসি কিসে ঘুমান।’
তিনি আরও বলেন, এটি যে রাজা সীতারামের পালঙ্ক তা পত্রিকায় সংবাদ দেখেই আমি প্রথম জানলাম। শুক্রবার এ-সংক্রান্ত নথিপত্র আমি অনুসন্ধান করেছি। এটি অতীতে ট্রেজারি কিংবা রেকর্ড রুমে ছিল সে রকম কোনো তথ্য পাইনি। এটি যে রাজা সীতারাম রায়ের পালঙ্ক সে ব্যাপারেও এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য কেউ দিতে পারেনি। তবে তিনি বাংলোর পুরনো কর্মচারীদের কাছে শুনেছেন দীর্ঘকাল ধরে এটি অন্যান্য মালপত্রের সঙ্গে ওই রুমেই পড়ে আছে। অতি উৎসাহী কোনো পক্ষ হীন স্বার্থে এ রকম একটি বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
শুক্রবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় ভূষণা রাজ্যের রাজা সীতারাম রায় এই পালঙ্কে বিশ্রাম নিতেন। মাগুরার মহম্মদপুর ছিল এই রাজ্যের রাজধানী। সীতারাম রায়ের রাজত্বের সীমারেখা ছিল উত্তরে পাবনা, দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত। রাজা সীতারামের অস্ত্রভাণ্ডারের স্মৃতি হিসেবে কিছু তরবারি মহম্মদপুর থানায় পুলিশের মালখানায় রয়ে গেছে। আর যে পালঙ্কটিতে রাজা বিশ্রাম নিতেন, সেটি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল মাগুরা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজের সুবিধার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনটি ট্রেজারি থেকে কখনও রেকর্ডরুমের স্তূপে কখনও জিম্মাখানার আবার কখনও ডিসির বাংলোর স্টোররুমে অন্যান্য অব্যবহূত উপকরণের পাশে জায়গা পেয়েছে।
এদিকে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) রাজীব চৌধুরী বলেন, পালঙ্কটি রেকর্ডরুমে ছিল কি-না আমার জানা নেই। এটি আমি জেলা প্রশাসকের স্টোররুমে দেখেছি। এটি ব্যবহারের উপযোগী নয়।
samakal.com