রাজনীতি: ভীতির রাজত্ব সৃষ্টি করতেই বিরোধী নেতাদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ: ফখরুল

logo

স্টাফ রিপোর্টার

৭ অক্টোবর ২০২২

3

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বেতার বার্তা ভাইরাল হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকাস্থ স্পেশাল ব্রাঞ্চ হেডকোয়াটার্সের বরাত দিয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশ সুপার গত ২৫শে সেপ্টেম্বর বেতার বার্তায় জেলার সকল থানার ওসিদেরকে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের রাঙ্গামাটি জেলার কমপক্ষে ৮ জন শীর্ষ ব্যক্তি, প্রতি উপজেলার শীর্ষ ৫ ব্যক্তি এবং রাঙ্গামাটি জেলার সকল পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের অধীন কমপক্ষে ৫ ব্যক্তি যারা বর্তমান সরকার বিরোধী চলমান গণআন্দোলনে ‘জনবল সংগঠক’ বা অর্থায়ন করে কিংবা অন্য কোনভাবে সহযোগিতা করে এমন ব্যক্তিদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে তার কাছে প্রথমে ইমেইল যোগে এবং পরে হার্ডকপি পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছে। এই বার্তায় ঢাকা স্পেশাল ব্রাঞ্চের মেমো নং ৬১৪(৩৫)  ২২ সেপ্টেম্বর এর রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বিএনপি বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পেরেছে যে ঢাকাস্থ স্পেশাল  ব্রাঞ্চের নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের সকল জেলার পুলিশ সুপার নিজ নিজ এলাকার সকল থানার ওসিকে উপরোক্ত বেতার বার্তা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য অনুরূপ নির্দেশনা জারি করেছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অপ্রত্যাশিত, অসাংবিধানিক, এখতিয়ার বহির্ভূত, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আচরণবিধি পরিপন্থি এবং রাজনৈতিক দল তথা গণমানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আন্দোলন সমাবেশ করার মৌলিক অধিকার বিরোধী।

ফখরুল বলেন, বেতার বার্তার বিষয়বস্তু থেকে এটি প্রমাণিত হয় যে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থসমূহ বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের নির্দেশে একটি নীল নকশার অধীনে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে গুঁড়িয়ে দমন করার জন্য একযোগে কাজ করছে। অথচ বর্তমান গণআন্দোলন চলছে মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করা, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে এবং এরিমধ্যে গত জুলাই থেকে আমাদের দলের ৫ জন নেতা নিহত হয়েছে (ভোলায় ২ জন, নারায়ণগঞ্জে ১ জন, মুন্সিগঞ্জে ১ জন এবং খুলনায় ১ জন)  এবং অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে। দিনে দিনে আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, পুলিশ বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের যে তথ্য সংগ্রহ করছে তা আমাদের সংবিধান, কিংবা দেশের অন্য কোন প্রচলিত আইন বা বিধি বিধানের আওতায় তারা করতে পারে না। পুলিশ সুপার তার আওতাধীন ওসিদের নিকট বেতার বার্তা বা অন্য কোন ব্যবস্থায় যেসব তথ্য চেয়েছে তা যে কোন মানদন্ড, বে-আইনি, স্বেচ্ছাচারি এবং অননুমোদিত পদক্ষেপ। এটি দিবালোকের মত স্পষ্ট যে বর্তমান সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, অত্যাচার-নির্যাতনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক মেরুদন্ডও ভেঙে দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গণআন্দোলন দমনের হীন উদ্দেশ্যে মানুষ হত্যার জন্য শান্তিপূর্ণ আইনসিদ্ধ গণতান্ত্রিক মিছিলে বিনাউস্কানিতে গুলিবর্ষণ করে নেতাকর্মীদের হত্যা করছে।

আমাদের দেশের সংবিধান (অনুচ্ছেদ ২৭, ৩২, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১, ৪৪), প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনেও দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে রাজনীতি করা এবং মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা স্বীকৃত রয়েছে। অসৎ রাজনৈতিক উদেশ্য নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ধরনের বেতার বার্তা বা অন্য প্রকারে তথ্য সংগ্রহ আইনের দৃষ্টিতে অকার্যকর, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক।

 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেতার বার্তাটি আমাদের কষ্টার্জিত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে আঘাত করেছে যা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, আইনের শাসন, আইনানুগ সংস্থা ও সমাবেশের নিশ্চয়তা, জনগণের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আইন অনুযায়ী সমানভাবে আচরণ করার অধিকার এর পরিপন্থী। উল্লিখিত বেতার বার্তা দেশের রাজনৈতিক কর্মীদের সরকারপন্থী এবং সরকারবিরোধী কর্মী হিসাবে বিভাজিত করে চরম বৈষম্য সৃষ্টি করবে। বিরোধী রাজনৈতিক মতবাদের লোকদের আলাদা করে চিহ্নিত করা, দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ধ্বংস করা এবং সমাজে ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করাই এই বেতার বার্তার উদ্দেশ্য।

তিনি আরো বলেন,  এই সরকার প্রায় দেড় দশক সময়কাল ধরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলিকে অত্যন্ত বেআইনি ও স্বেচ্ছাচারী পদ্ধতিতে ব্যবহার করে আসছে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। তারা একটি নীল নকশার অধীনে সামগ্রিকভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। কেবল অন্যায়ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা পুলিশ ও র‌্যাবকে ব্যবহার করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডসহ অনেক মানুষ খুন ও গুম করেছে। যার ফলশ্রুতিতে এখন দেশে-বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বিশেষ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশ, গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), বিশেষ শাখা (এসবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) দেশের নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত। ইতিমধ্যে র‌্যাবের ডিজি, আইজিপি এবং সাবেক সেনাপ্রধানকে বলপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত থাকার জন্য মার্কিন সরকার কর্তৃক  নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। বিএনপি মনে করে যে এই সমস্ত নৃশংসতার পিছনে বর্তমান ফ্যাসিবাদী শাসকই মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করছে। এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উদ্দেশ্যমূলক ভাবে উল্টো বিরোধী নেতাকর্মীদের তথ্য সংগ্রহ করে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে লিপ্ত হয়েছে। এই সমস্ত কাজ শুধু আইনি অধিকারই লঙ্ঘন করে না, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারও লঙ্ঘন করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে এ সরকার ক্ষমতায় আসতে পারবে না।