বাংলাদেশের রাজনীতি দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে– এটি হতে পারে না। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সংসদ সদস্য রুপা হক। তিনি বলেছেন, একজন নেতার কন্যা, আরেকজন নেতার বেগম এবং তাদের ছেলেরা সব কিছুতে আধিপত্য দেখাবে– এ প্রবণতার পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রায় ৫৪ বছরের এ বাস্তবতা থেকে বের হয়ে আসতে একটা পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার। আইন প্রণয়ন করে নতুন কিছু করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেছেন এই ব্রিটিশ এমপি।
ঢাকা সফররত ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ইউকেবিসিসিআই) প্রতিনিধি দলের সম্মানে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন রুপা হক। বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ রাজধানীর একটি হোটেলে এ আয়োজন করে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
আলোচনায় আমীর খসরু বলেন, বিগত সরকার গত ১৫ বছরে অর্থনীতিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধ্বংস করেছে। ব্যাংক, বীমা থেকে টেলিকম– সবকিছুই তারা নিয়ন্ত্রণ করত। সাধারণ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ প্রত্যাশার সুযোগ রাখা হয়নি। অলিগার্কির (কিছু লোকের হাতে সব ক্ষমতা) অর্থনীতি কায়েম ছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর বাঁচার জন্য একে একে সব স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়।
অপপ্রচার বন্ধে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভূমিকা রাখতে রুপা হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে অপপ্রচার চলছে। বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রতিবেশী কিংবা অন্য অঞ্চলে যা-ই হোক, বাংলাদেশে হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটছে না।
আলোচনায় রুপা হক বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করার কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি-কাঠামোর আওতায় এফটিএ হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সারের মতো ব্রিটিশ ব্র্যান্ড এ দেশের তৈরি পোশাকের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। শুধু পোশাক খাতের ওপর রপ্তানি নির্ভর করলে চলবে না। নানা প্রযুক্তি, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’কে আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।
ব্রিটিশ এ এমপি আরও বলেন, মুনাফাই ব্যবসার শেষ কথা নয়। শ্রম অধিকারেও গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে বিগত সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনেক টানাপোড়েন ছিল। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বাস্তবতা বদলাতে চান।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ করা হবে জানিয়ে ইউকেবিসিসিআই সভাপতি ইকবাল আহমেদ জানান, গত ১৫ বছর তারা এ দেশে আসতে পারেননি। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে রাজনৈতিক নয়, বরং ব্যবসায়িক উন্নয়ন হাউস হিসেবে কাজ করতে হবে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপপ্রচার বন্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান, বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
samakal